X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাইলে বিজ্ঞাপন ছাড়াই চ্যানেল চালানো সম্ভব: শামীম শাহেদ

সাইফুর রহমান
২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০০:০২আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৪৪

বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান শামীম শাহেদ। টিভি মিডিয়ায় যাকে বিবেচনা করা হয়- অল্প সময়ে, অল্প বয়সে সবচেয়ে সফল অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে। স্বাভাবিক, তার হাত ধরে এই টিভি চ্যানেলে জন্ম হয়েছে অনেক জনপ্রিয় এবং বৈচিত্রপূর্ণ অনুষ্ঠান। তারই একটি ‘মনের কথা’। সাত বছর আগে (২০১০) এই অক্টোবরেই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেন তিনি। তারই প্রযোজনায় আফসানা মিমির উপস্থাপনায় শুরু হয় শুটিং। একজন পেশাদার জল্লাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তৈরি অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব প্রচার হয় ঐ বছরের ২৭ ডিসেম্বর। প্রথম পর্ব দেখেই দর্শক-সমালোচকদের চোখ কপালে! এরপর প্রায় প্রতিটি পর্বেই ছিল এমন ভিন্ন ভিন্ন চমক। প্রথম অংশের সামান্য বিরতির পর দ্বিতীয় দফায় নতুনভাবে এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা শুরু করেন শামীম শাহেদ নিজেই। সাজ্জাদ হুসাইনের প্রযোজনায় এবারের পর্বগুলোতে উঠে আসে আরও নতুন কিছু বিষয়। অনুষ্ঠানটির সাত বছর ও শামীম শাহেদের সাম্প্রতিক ভাবনা উঠে এসেছে বাংলা ট্রিবিউন ‘মুখোমুখি’ বিভাগে-

শামীম শাহেদ বাংলা ট্রিবিউন: সাত বছরে ‘মনের কথা’। খুব কম সময় নয়।

শামীম শাহেদ: একটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য সাত বছর খুব বেশি সময়ও নয়। আবার খুব কম সময়ও নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: বিষয়-বৈচিত্রে অসাধারণ পরিকল্পনা। তবে সেটির বাস্তবায়নও কি বেশ কঠিন ছিলো না?

শামীম শাহেদ: অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করার কারণ, আমরা চেয়েছি বাংলাভিশন মানুষের প্রয়োজনের চ্যানেল হয়ে উঠুক। সেই লক্ষ্যেই ‘মনের কথা’ অনুষ্ঠানটির সৃষ্টি। সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে হলে তো একটু কাঠখড় পোড়াতেই হয়। সাত বছর পেরিয়ে যখন দেখি মানুষ এখনও অপেক্ষায় থাকেন অনুষ্ঠানটির নতুন পর্বের জন্য, তখন সেই উষ্ণতা আমাদের প্রীত করে। আশা করি, অনুষ্ঠানটির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: মনের কথা অনুষ্ঠানের ধারণা বেশ চমৎকার। পর্দার আড়ালে বসে থেকে অপরাধী তার মনের কথা বলেন। এতে দর্শক সচেতন হন। অনেক অপরাধীও নিজেকে শোধরানোর সুযোগ পান অনুষ্ঠানটি দেখে। এই ধরনের আইডিয়া আশেপাশের দেশের চ্যানেলে খুব একটা দেখা যায় না। কেমন করে পেলেন?

শামীম শাহেদ: দেখুন, এখন থেকে ১৩ বছর আগে আমি যখন অপি করিমকে নিয়ে ‘আমার আমি’ করি তখন আমার মনে একটাই ভাবনা ছিল সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি আসলে তারকাদের কাছে কী জানতে চাই- সেটাই আমি দর্শকের সামনে তুলে ধরব। সেই ভাবনা থেকে ‘আমার আমি’। ‘মনের কথা’ করার সময়ও আমি ভেবেছি, আশেপাশে এতো যে অপরাধ হচ্ছে, তা থেকে কীভাবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচানো যায়। তখন ভাবলাম একটা পর্দার আড়ালে বসে অপরাধীরা যদি তাদের মনের কথাগুলো বলে তাহলেই আমাদের দেশের মানুষকে সতর্ক করা সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: যদি ভুল না করি ‘আর্টিক্যাল থার্টিনাইন’ নামের আরও একটি অনুষ্ঠান করেছেন আপনি। সেটিও বিষয়-বৈচিত্রে আমজনতার কথায় বলেছে।

শামীম শাহেদ: ঠিক ধরেছেন। ‘আর্টিক্যাল থার্টিনাইন’ করার সময়ও আমি ভেবেছি আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা সম্ভব। ‘আপনার আগামী’ নামের আরেকটি অনুষ্ঠান করার সময়ও ভেবেছি চাকরির খবরগুলো সবার সামনে তুলে ধরে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। এভাবেই দেখলাম বাংলাভিশন একসময় এক নম্বর হয়ে উঠল।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে বাংলাভিশনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন দেশীয় টিভি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সফল অনুষ্ঠান প্রধান আপনি। আপনার দৃষ্টিতে দেশের বর্তমান টেলিভিশন মিডিয়া এখন কোন পর্যায়ে আছে?

শামীম শাহেদ: দেশের টেলিভিশন মিডিয়া যে খুব একটা এগিয়েছে, এটা বলা মুশকিল। এখানে পেশাদারিত্বের অনেক অভাব আছে। প্রফেশনালি যোগ্য মানুষরা যখন আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার ডিসিশন মেকিংয়ের জায়গায় বসবেন তখন আমরা মূল গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারব।

বাংলা ট্রিবিউন: তার অর্থ কী এই দাঁড়ায়, আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাষ্ট্রির সামনের সময়টা খুব একটা সুখকর হবে না।

শামীম শাহেদ: ঠিক তাই। আগামী চার-পাঁচ বছর আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার জন্য খুব কঠিন সময় কাটবে। কারণ এই সময়টাতে সম্প্রচার ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। টেলিভিশন এই সময়ের মধ্যে অ্যানালগ থেকে আইপি পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হবে। ফ্রি টু এয়ার থেকে পে-চ্যানেলে রূপান্তরিত হবে। এটা যত দেরিতে হবে তত আমাদের কষ্ট বাড়বে। পৃথিবীব্যাপী এনালগ সিস্টেম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের এখানে এখনও অ্যানালগ সিস্টেম প্রচলিত। এর পরের যে সম্প্রচার ব্যবস্থা ডিটিএইচ- এই সিস্টেমও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উঠে যাচ্ছে। এর পরের ব্যবস্থা হচ্ছে আইপি। অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রোটোকল সিস্টেম। আমাদের দেশে এখনও ডিটিএইচ-ই শুরু হয়নি। ফলে আমাদের সামনের সময়টা অনেক কঠিন।

শামীম শাহেদ বাংলা ট্রিবিউন: এই কঠিন সময় উতরানোর পথ কী?
শামীম শাহেদ: একটাই পথ- আমাদেরকে সরাসরি আইপি সিস্টেমে চলে যাওয়া জরুরি।
বাংলা ট্রিবিউন: আইপিতে রূপান্তরিত হলে আমাদের লাভ-ক্ষতি কী?
শামীম শাহেদ: ক্ষতি নেই, কথাটি লাভের জন্যই বলছি। দেখুন এখন আমাদের দেশে প্রায় দেড় কোটির বেশি বাসাতে ক্যাবলের কানেকশন আছে। একটা বাসা থেকে যদি চার শ টাকা করেও সম্প্রচার ফি নেওয়া হয় তাহলে প্রতি মাসে এখানে ছয় শ কোটি টাকার লেনদেন হয়। যার একটা পয়সাও চ্যানেল মালিকরা পায় না। আইপি করে যদি চ্যানেলগুলোকে এনক্রিপটেড করে দেওয়া হয় তাহলে এই টাকাটা চ্যানেল মালিকরা পাবে।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু ক্যাবল অপারেটরদের তখন কী হবে! আপনি নিজেই জানেন, তারা বেশ ক্ষমতাধর ও সংঘবদ্ধ।
শামীম শাহেদ: তা তো বটেই। কাজটা করতে হবে ক্যাবল অপারেটারদেরকে সঙ্গে নিয়েই। তাদের বাদ রাখতে তো বলছি না। এখান থেকে যদি চার শ বা পাঁচ শ কোটি টাকাও বিদেশি চ্যানেল ক্রয় করা কিংবা ক্যাবল অপারেটরদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে দেওয়া হয় তার পরও থেকে যায় একশ কোটি টাকা। এই টাকাটা চ্যানেল মালিকরা পেলে এক সেকেন্ডও বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে না। তখন আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এবং এটা সম্ভব হবে যদি অনুষ্ঠানের মান ঠিক রাখা যায়। কাজটা খুব জরুরি। যত দ্রুত করা হবে ততই মঙ্গল।
বাংলা ট্রিবিউন: সাম্প্রতিক আপনি দেশের বাইরেই বেশি থাকেন। সেই সুবাদে একটা ফিসফাসফিস রয়েছে মিডিয়ায়, আপনি টেলিভিশন মিডিয়া ছেড়ে দিচ্ছেন। তথ্যটা কি ঠিক?
শামীম শাহেদ: সত্য মিথ্যা জানি না। তবে আমার একটা সমস্যা আছে। পাঁচ-সাত বছর কাজ করার পরই আমার মনে হতে থাকে এটা আমি কী করছি! আমি আমার মূল্যবান সময়টা কেন নষ্ট করছি। তখন আমাকে একটা নতুন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। আগের কাজটা আর ভালো লাগে না।
বাংলা ট্রিবিউন: সেই, মাঝে আপনি এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের একটা প্রকল্পেও কাজ করেছেন।
শামীম শাহেদ: সেটা তো সেদিনের কথা। তারও আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চার-পাঁচ বছর কাজ করার পর আমি পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করলাম। ১২-১৩ বছর সংবাদপত্রে কাজ করার পর আমি টেলিভিশন মিডিয়ায় যুক্ত হলাম। এরপর হঠাৎ আমি এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের প্রজেক্টে কাজ করলাম। তারপর আবার টেলিভিশনে যুক্ত হয়েছি সেটাও সাত বছরের বেশি সময় হয়ে গেল।
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কি সত্যি সত্যি আবারও ছাড়ছেন টিভি, যাচ্ছেন নতুন কোনও ঠিকানায়?
শামীম শাহেদ: সেটা ঠিক বলতে পারবো না। তবে এটা ঠিক এখন টেলিভিশনের কাজের প্রতিও আমার একটা বিরক্তি এসে গেছে। সামনের চার-পাঁচ বছর অন্য কোনও কাজ করতে পারলে আরাম লাগতো।
বাংলা ট্রিবিউন: মাঝে আপনি শান্ত-মরিয়ম ও ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। আপনার লেখা বইও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটা। সেদিকে ফিরবেন আবার?
শামীম শাহেদ: শিক্ষকতা অনেক দিন থেকে বন্ধ আছে। বেশ কয়েক বছর বিরতির পর এই বছর আমার একটা বই প্রকাশিত হবে। নাম ‘উড়োজাহাজের উড়োচিঠি’। আগামী একুশে বইমেলা উপলক্ষে পার্ল পাবলিকেশন্স এটা বের করবে। তবে শিক্ষকতা করতে আমার বেশ ভালো লাগে। জানি না, এবার ঠিক কোন দিকে যাই। যদি যাই, তবেই!
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার ‘জল-বালিকা’র কী খবর?
শামীম শাহেদ: ‘জল-বালিকা’ আমার স্বপ্নের চলচ্চিত্র। যত দিন যাচ্ছে ততই আমার ভেতরে শুট করার আগ্রহ বাড়ছে। এর গল্পেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। দেখা যাক, সময় সব বলে দেবে।
বাংলা ট্রিবিউন: আলাপ প্রসঙ্গে এটুকু স্পষ্ট নতুন কিছু খুঁজছেন আপনি। হয়তো সত্যি সত্যি টেলিভিশন থেকে ফের ছুটিতে যাবেন। তবুও জিজ্ঞাসা- নতুন কোনও অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা মাথায় আছে এখন?

শামীম শাহেদ: ‘রাজ-দরবার’ নামে একটা চমৎকার অনুষ্ঠানের আইডিয়া অনেক দিন থেকে মাথায় ঘুরছে। উপস্থাপক পাচ্ছি না। পেলে সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলব।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের প্রত্যাশা শিগগিরই আপনি একজন মনসই উপস্থাপক পেয়ে যাবেন এবং অস্থিরতা কাটিয়ে টেলিভিশন মিডিয়ায় থিতু হবেন।

শামীম শাহেদ: সেই প্রত্যাশা আমিও আমার কাছে করছি। ধন্যবাদ।

/এস/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!