অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমে গানের প্রকাশনা ও স্বত্ব নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর বিশেষ বৈঠকির আয়োজন করা হয় আজ (২ নভেম্বর)। ‘গান তুমি কার?’ শীর্ষক এ আয়োজনটি এটিএন নিউজ বিকাল ৪টা ২৫ মিনিট থেকে সরাসরি প্রচার করে। একই সময়ে বাংলা ট্রিবিউন ফেসবুক পেজ থেকেও এটি লাইভ করা হয়েছে।
এতে গানের মালিকানা, অধিকার ও সচেতনতা- নিয়ে কথা বলেন বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক ও গীতিকবি জুলফিকার রাসেল।
বলেন, ‘এখন ইউটিউবে গান আপলোড হচ্ছে কিন্তু গানের মালিকরা সবাই তা কি অবগত? কোম্পানির কাছে এককালীন টাকা নেওয়ার পরও কোনও কোনও শিল্পী গান আপলোড করছেন। একটি গান থেকে এক টাকা আসলেও সেটা গানের প্রতিটি মালিক (গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী) পাওয়ার কথা। না পেলেও সে বিষয়ে অবগত করা উচিত। তা হচ্ছে কই? অনেক শিল্পী অনুমতি ছাড়া গান আপলোড করছেন। এগুলো নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক।’
সব শিল্পী একে অপরের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন একটি মন্তব্য করেন সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম সোহেল। তার ভাষ্য, ‘আলোচনা হওয়া উচিত সব শিল্পীর গান নিয়েই। কিন্তু যখন একটা গান হিট হয়, তখনই কথা হয়। এটা দুঃখজনক। রেভিনিউ নিয়ে এ লড়াই আমরা নিজেদের ছোট করছি। এটা আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য। আর একটা কথা গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী সবার একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার।’
তার কথার সঙ্গে কথা মিলিয়ে ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, ‘আপনারা যদি একটি কমন প্ল্যাটফর্মে আসেন, সিদ্ধান্ত নেন, কে কীভাবে ভাগ পাবেন- তাহলে সবার লাভ। নইলে আপনারা মারামারি করবেন, অন্যরা লাভবান হবে।’
সাদাত আরও বলেন, ‘এখন বিশ্বের অবস্থা পরিবর্তন এসেছে। ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির পরিধি বেড়ে গেছে।’
তখন তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক ও ইউটিউবার হারুন উর রশীদ। তিনি বলেন, ‘যখন আমি কন্ট্রাক্ট সাইন করবো তখনকার পরিস্থিতি বুঝেই করবো। একসময় টিভি, রেডিও, ক্যাসেট, সিডি ছিল; এখন এসেছে ইউটিবউ বা অন্য মাধ্যম। ফলে পরিস্থিতি বুঝে কন্ট্রাক্ট সাইন করা উচিত। কে ইউটিবিউবে আপলোড করবে সেটারও আইন থাকবে। তা থাকা উচিত।’
এদিকে এবারের বৈঠকটির শুরু হয় ১৮ অক্টোবর বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত ‘গীতিকার-সুরকার-প্রযোজকদের উপেক্ষা করেন কণ্ঠশিল্পীরাই!’ শীর্ষক রিপোর্টটি প্রসঙ্গ ধরে। বিষয়টি উপস্থাপন করেন সঞ্চালক মুন্নী সাহা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসুবকে প্রতিক্রিয়া জানান কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। বলেন, তিনি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে সরাসারি বৈঠকি করতে আগ্রহী।
তার সে মন্তব্যকে সম্মান জানিয়েই অনুষ্ঠিত হয় এবারের বৈঠকি ‘গান তুমি কার?’
প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে আজকের অনুষ্ঠানে আসিফ তার আপত্তি সম্পর্কে বলেন, ‘যে গানগুলোর কথা বলা হয়েছে, তা আমার চ্যানেলে নাই। যাদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে তাদের মন্তব্যের ভিত্তি নাই। সবমিলিয়েই প্রতিবেদনের এ কমন্টেগুলো নেওয়া মানে আমাকে ইঙ্গিত দেওয়া। একটা কথা, বাংলাদেশে কাইনেটিক মিউজিক দেশের ইউটিউবটা দেখভাল করে। তারা তো কখনও ব্লক করেনি আমাকে। মানে আমার চ্যানেল ঠিক আছে। অবৈধ কিছু নাই। এখানে আমাকে হেয় করার জন্যই রিপোর্ট করা।’
আসিফের এমন বক্তব্যের বিপরীতে বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক ও গীতিকবি জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘গানের গীতিকার প্রথম মালিক। দ্বিতীয় মালিক সুরকার। তারপর শিল্পীসহ অন্যান্যরা। কিন্তু শিল্পীরা যখন সেই গান ইউটিউব কিংবা বিভিন্ন মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানে গানটি প্রচারের জন্য দেন তখন কি গীতিকার সুরকারের পারমিশন নেন? আমাদের এই প্রতিবেদনের মূল বিষয় ছিল এটাই। এখানে কাউকে উদ্দেশ করে কিছু বলা হয়নি।’
প্রতিবেদনটি নিয়ে নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই রিপোর্টে গান সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য থাকলেও আসিফ সাহেব কেন প্রতিবাদ জানালেন আমার জানা নেই। উনি বলেছেন, আসেন মুখোমুখো কথা বলি। আমিও তার আগ্রহে সায় দিলাম।’
ডিজিটাল মাধ্যমে গানের প্রকাশনা ও স্বত্ব নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি এটিএন নিউজে বিকাল ৪টা ২৫ মিনিট থেকে সরাসরি প্রচার হয়। একই সময়ে বাংলা ট্রিবিউন ফেসবুক পেজ থেকেও এটি লাইভ করা হয়েছে।
বৈঠকিতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার ওমর সাদাত, সংগীতশিল্পী ফোয়াদ নাসের বাবু, কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, গীতিকবি জুলফিকার রাসেল, ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক ও ইউটিউবার হারুন উর রশীদ ও সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম সোহেল। সঞ্চালনা করেন মুন্নী সাহা।
