X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনে স্মরণ

জীবনটাই তাঁকে উৎসর্গ করে রেখেছি

মাহফুজ আহমেদ, অভিনেতা-নির্মাতা
১৩ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৫৩আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪০

মাহফুজ আহমেদ-‌হ‌ুমায়ূন আহমেদ (মুঠোফোনের অপর প্রান্তে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর) আসলে উনার (হ‌ুমায়ূন আহমেদ) সম্পর্কে বলতে গেলে আমি চুপ হয়ে যাই। মানে ব্ল্যাকআউট।

আসলে কী বলবো। এত কথা। এত স্মৃতি। এত আবেগ। কোনটা থেকে শুরু করবো। আবার ভাবি, চুপ থাকাই শ্রেয়। অনেকেই তো বলে যাচ্ছে ক্রমাগত।

মনে পড়ে, এক বিকালে স্যার আমাকে বই মেলায় নিয়ে যান। অন্যমেলার স্টলে। হাতে তুলে দেন তার নতুন বই, ‘এই মেঘ রৌদ্রছায়া’। মলাট উল্টাতেই চমকে উঠি। কারণ, আমি মোটেও এর যোগ্য নই। স্যার, আসলে তার প্রিয় মানুষদের এভাবে চমকে দিতে কিংবা অপ্রস্তুত করে দিয়ে মজা পেতেন।

সেদিনের সেই উৎসর্গপত্রের প্রতিটি অক্ষর দাঁড়ি কমা আমার চোখে আজও স্পষ্ট ভাসে। তিনি সেখানে যা লিখেছেন, তার পুরোটাই বাস্তব। এবং সেটি পড়ে প্রথম আমি অনুভব করলাম- এই মানুষটার হৃদয় কত বড় আর আমাকে তিনি ঠিক কতটা ভালোবাসেন। আমার প্রতি উনার যে ভালোবাসা সেটার আসলে কোনও সীমানা নাই।

‘এই মেঘ, রৌদ্রছায়া’ উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি?

স্যারের এই শেষের লাইনটা মনে পড়লে এখনও আমার চোখ ভিজে যায়। আমি নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাই। আমার কেবল মনে হয়, স্যার বুঝি আজ দুপুরেও আমার অপেক্ষায় বসে ছিলেন। এই ভালোবাসার অপেক্ষা আমি আর কার কাছে পাবো?

আমি সেই সৌভাগ্যবান, যে কি না উঠতি বয়স থেকেই উনার ছায়া পেয়েছি। যখন ঢাকায় এসে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন থেকে এখনও স্যারের সঙ্গেই আছি। পত্রিকায় আমার চেয়ে বেশি ইন্টারভিউ কেউ আর করেনি। এই জীবনে বাবা-মায়ের পরে আমার সাংবাদিকতা, অভিনয় আর ব্যক্তিজীবনে তাঁর ভূমিকা সবচয়ে বেশি। আমার বিয়ে ওকালতিও করেছেন তিনি।

ফলে এই মানুষটাকে ছাড়া আমি আসলে কেউ না। আমার জীবনটাই তাকে উৎসর্গ করে রেখেছি।

আজ একটা কথা না বলে পারছি না। স্যারের মৃত্যুর পর আজ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে করা কোনও টিভি অনুষ্ঠানে যাইনি। কিছুই বলিনি। এখনও যাই না। কারণ, আমি জানি স্যারকে নিয়ে আমার মনের কথাগুলো বলতে পারবো না। স্যারের প্রতি অন্যদের সাজানো অনুরাগ দেখে আমি শুধু বিব্রত হই।

কারণ, স্যারের মৃত্যুর পর যারা ছল ছল চোখে টকশোতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাদের অনেককেই আমি চিনি। স্যারের জীবদ্দশায় আমি তাদের আসল চেহারা দেখেছি। উনার মৃত্যুর আগে এই মানুষগুলো যেমন ছিলেন পরে সবার ভাষা চেঞ্জ হয়ে গেছে! আমি এই মিথ্যের দলে ভিড়তে চাইনি।

আমার কাছে উনি আছেন, থাকবেন, একান্তই আমার মতো করে। আমি এখনও প্রতিটি দুপুরে উনার সঙ্গে খাবার ছলে গল্পে মশগুল হওয়ার অপেক্ষায় থাকি। তিনি যেমন থাকতেন আমার জন্য।

স্যার, শুভ জন্মদিন।

অনুলিখন: মাহমুদ মানজুর

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!