X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
জন্মদিনে স্মরণ

প্রিয় লেখক, আমি কেবল আপনার মমতা আর ভালোবাসাই চেয়েছিলাম

মেহের আফরোজ শাওন, অভিনেত্রী-নির্মাতা
১৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৫আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১১:০৮

  হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন। ছবি মাসুদ আখন্দ jpg কতজনকে বই উৎসর্গ করেছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। আমাকেও কি কখনও উৎসর্গ করবেন- এই রকম ভাবনাই হয়তো আসার কথা ছিল আমার মাথায়। কিন্তু কেন জানি না, বই উৎসর্গ নিয়ে আমার কোনও আশা বা উচ্ছ্বাস কাজ করেনি কখনও। আমি ব্যস্ত ছিলাম অভিনয়ে।

আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের প্রদর্শনীতে মেহের আফরোজ শাওন ও নিষাদ
নতুন কুঁড়ি ১৯৯৯-এ গোল্ডকাপ বিজয়ের পর ধারাবাহিক নাটক ‘নক্ষত্রের রাত’-এ যখন যুক্ত হই, তখন শুধু ভাল অভিনয় আর সামনে চলে আসা এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাটাই ছিল আমার লক্ষ্য। কিন্তু কীভাবে জানি ‘নক্ষত্রের রাতে’র সেটে গানের আড্ডায় গা ভাসিয়ে দিলাম।
হ‌ুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত শিল্পী সেলিম চৌধুরীর গান শুনে গেয়ে উঠলাম- ‘আইজ পাশা খেলব রে শাম...’। মাত্র একবার শুনেই এই গানটি গাইতে পারার জন্য হ‌ুমায়ূন আহমেদের কাছে ‘টেপ রেকর্ডার’ উপাধি পেলাম!
আহা প্রশংসার কী প্রশান্তি...! নিত্যনতুন গান শুনিয়ে মুগ্ধ এক শ্রোতার ভূমিকায় দেখলাম হুমায়ূনকে। একদিন হঠাৎ করুণ রাগের একটি গান শুনতে চাইলেন তিনি। গিয়াসউদ্দিন সাহেবের ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ গানটি শুনে মনে হলো, “এ গান তো কখনও শুনিনি আমি...! এ গান গাওয়া আমার সাধ্যে নেই।”
এই প্রথম কোনও গান একবার শুনেই গাইতে পারলাম না আমি। একদিন সময় চেয়ে নিলাম। পরদিন সন্ধ্যায় গানটি শোনালাম প্রিয় লেখককে। তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে গেলাম একটি অপ্রিয় পুরস্কার। প্রিয় লেখকের মরদেহের পাশে বসে নাকি শোনাতে হবে এই গান। এ বিষয়ে হ‌ুমায়ূন আহমেদ যে সিরিয়াস ছিলেন তার প্রমাণ দিলেন ‘চলে যায় বসন্তের দিন’ বইয়ের উৎসর্গপত্রে। তিনি সেখানে লিখলেন-
“আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের লেখা ‘মরণ সংগীত’- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’। প্রায় ভাবি, আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়ে আছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- মরিলে কান্দিস না আমার দায়।
‘নক্ষত্রের রাত’ নামের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং ফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং একজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি বিশেষ সময়ে গাইতে। সে রাজি হলো। উৎসর্গপত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।
মেহের আফরোজ শাওন।” হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন
জীবদ্দশায় কতবার যে শুনিয়েছি এই গান তাঁকে! যে কোনও আসরে সব গান শেষে নিয়ম করে গাইতে হতো এই মৃত্যু সংগীত।
সূরা ইয়াসিন পাঠ করিও বসিয়া কাছায়/ যাইবার কালে বাঁচি যেন শয়তানের ধোঁকায়- গানের এই অংশে প্রতিবার তাঁর চোখে পানি এসে যেত। কর্কট রোগ ধরা পড়বার পর এই গানটি থেকে আমার মন উঠে গেল। তিনি গান শুনতে চাইলে সন্তর্পণে এই গানটি এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু একদিন তিনি শক্ত করে ধরলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে এক বাড়িতে বসে পড়লেন গানের আড্ডায়। সামনে প্রস্তুত ক্যামেরা। এই গান সেই গানের পর অনুরোধ করলেন মরণসংগীত শোনানোর। তাঁর কথার কাছে আমার মৃদু আপত্তি টিকল না। গাইতেই হলো তাঁর প্রিয় গান। সেই গানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল তাঁর আবেগ।
ইউটিউবের কল্যাণে গানটি চলে গেল সবার কাছে!
আচ্ছা... হ‌ুমায়ূন কি তখন কিছু বুঝে গিয়েছিলেন! মেনে নিয়েছিলেন নিয়তির কাছে তাঁর পরাজয়!
শেষের দিকে প্রকাশিত ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ বইটির উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন—
“কেমোথেরাপি হলো একটি দীর্ঘ বেদনাদায়ক নিঃসঙ্গ ভ্রমণ। যে তরুণী আমার এই ভ্রমণ সহনীয় করার জন্য শক্ত হাতে আমার হাত ধরেছে তার নাম শাওন। আমার দুই পুত্র নিনিত আর নিষাদের মমতাময়ী মা। ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ বইটি এই তরুণীর জন্য। যে করুণা, মমতা ও ভালোবাসা সে আমাকে দেখিয়েছে পরম করুণাময় যেন তার বহুগুণ তাঁকে ফেরত দেন। এই শুভকামনা।”
হে প্রিয় লেখক... পরম করুণাময়ের কাছে আমি কেবল আপনার মমতা আর ভালোবাসাই চেয়েছিলাম। এর বেশি কিছু নয়।

বিশেষ ভিডিওটি: 

/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)