X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চৌরাসিয়ার বাঁশির টানে নামলো উৎসবের পর্দা

বিনোদন রিপোর্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:১০আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:১২

হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার পরিবেশনা টানা পাঁচ রাত সুরের ইন্দ্রজালে আটকে ছিল রাজধানীবাসী। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠ হয়ে উঠেছিল পরম কাঙ্ক্ষিত স্থান। এখানে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৭ শুরু হয়ে এর সমাপ্তি ঘটল ৩১ ডিসেম্বর ভোরে।
শেষ পরিবেশনটা করলেন উপমহাদেশ খ্যাত শিল্পী  পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। রাগ ললিত আর লোকসুরে বাঁশি তুলে এনে এর সমাপনী সুর বাজালেন তিনি। পাশাপাশি জানালেন, আগামী বছর আবারও বসবে এমন আসর। শেষ এ পরিবেশনায় শিল্পীকে বাঁশিতে সঙ্গত করেন বিবেক সোনার ও ইউকা নাগাই, তবলাতে পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, পাখোয়াজে পণ্ডিত ভবানী শংকর ও তানপুরাতে মুশফিকুর ইসলাম।

পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ৫ম দিনের আয়োজন শুরু হয় শনিবার সন্ধ্যা ৭টায়। শুরুটা হয় নৃত্য দিয়ে। বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র মঞ্চ আলোকিত করেন ওড়িশি নৃত্য দিয়ে। পরিবেশনাটি ছিল অর্ধনারীশ্বর ও রামায়ণ-লঙ- এ দুই পর্বে বিভক্ত। রাগ মল্লিকা ও তাল মল্লিকা ভিত্তিক প্রথম পর্ব অর্ধনারীশ্বরের কোরিওগ্রাফি ও নৃত্য রচনা করেছিলেন প্রয়াত পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র; সংগীত পদ্মশ্রী রঘুনাথ পানিগ্রাহী ও পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্রের। সুজাতা মহাপাত্র ও সৌম্য বোস

ওড়িশি রামায়ণ থেকে নেওয়া দ্বিতীয় পর্ব রামায়ণ-লঙ-এর কোরিওগ্রাফিও প্রয়াত পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের করা; সংগীত পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্রর। নৃত্যনাট্যটিতে সুজাতা মহাপাত্রের সহশিল্পী ছিলেন সৌম্য বোস, বাঁশিতে ছিলেন সৌম্য রঞ্জন যোশি, রূপক কে পারিদা, বেহালায় রমেশ চন্দ্র দাস, পাখোয়াজে একলব্য মুদিলি এবং আলোক সঞ্চালনায় জয়দেব দাস।

নৃত্য শেষে শুরু হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের সমাপনী অধিবেশন। এ অংশে এমিরেটস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্যার ফজলে হাসান আবেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ছায়ানটের সভাপতি ড. সনজীদা খাতুন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও আবাহনী লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষে তার মা জেমকন গ্রুপের পরিচালক আমিনা আহমেদ।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেষ্টায় প্রতি বছর এই উৎসব নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এটাও গর্বের ব্যাপার। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারলে আরও ভালো লাগবে।’

প্রধান অতিথি স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘শিল্প-সাহিত্যে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। তাই অনেক আশংকা কাটিয়ে এই উৎসব আয়োজন করতে পারা অনেক ইতিবাচক ব্যাপার।’

ছায়ানট বিদ্যায়তনের সভাপতি ড. সনজীদা খাতুন বলেন, ‘উৎসব আমাদের জন্য খুব জরুরি। কিন্তু শুধু ঢাকায় উৎসব আয়োজন করলে হবে না। সংগীত ও সংস্কৃতির এধরনের উৎসব সারা দেশে নিয়ে যেতে হবে। এধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের পল্লী গানের সুর তুলে ধরতে হবে এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই আমাদের মধ্যে মমত্ববোধ জেগে উঠবে। কারণ, মানুষকে ভালবাসতে পারাই মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ।’

আবাহনী ক্লাবের পক্ষ থেকে কথা বলেন জেমকন গ্রুপের পরিচালক আমিনা আহমেদ। তিনি সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই উৎসবে সহযোগী হতে পেরে আবাহনী ক্লাবও গর্বিত। এই উৎসবের জন্য আবাহনী মাঠের দরজা পুনরায় খুলে দিতে আবাহনী ক্লাব প্রস্তুত। আমরা আশা করবো, সামনে বছর উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব এখানেই আয়োজিত হবে।’ অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঞ্চে আবুল খায়ের, ড. সনজীদা খাতুন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও আমিনা আহমেদ

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর আয়োজকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যে দেশের প্রধানমন্ত্রী এত বড় একজন সংগীত অনুরাগী, সেদেশের সংগীত উৎসব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উৎসব না হয়ে পারে না। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব এখন বিশ্বের বৃহত্তম সংগীতের আসর।’

সমাপনী অধিবেশনের স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের। তিনি অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আয়োজনের সহযোগী সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আনুষ্ঠানিক সমাপনী অধিবেশনের পর আবার শুরু হয় বাদন পরিবেশনা। এবার মোহন বীণা পরিবেশন করেন পণ্ডিত বিশ্ব মোহন ভট্ট। তিনি রাগ মরু বেহাগ ও ধুন পরিবেশন করেন। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন সুভেন চ্যাটার্জি।
মোহন বীণার পর খেয়াল পরিবেশন করেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি। তিনি রাগ যোগ পরিবেশন করেন। এরপর তিনি একটি ঠুমরী পরিবেশন করেন। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন শুভঙ্কর ব্যানার্জি, এবং হারমোনিয়ামে গৌরব চ্যাটার্জি এবং তারপুরায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী এসএম আশিক আলভি ও অপূর্ব কর্মকার। বিশ্ব মোহন ভট্ট (ডানে)
এরপর সেতারের যুগলবন্দি পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন পিতা-পুত্র পণ্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস। তারা সেতারে যোগ কোষ পরিবেশন করেন। তাদেরকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জি।

ছবি- বেঙ্গল ফাউন্ডেশন  

/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
মা হারালেন বেবী নাজনীন
মা হারালেন বেবী নাজনীন
ওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
সিনেমা সমালোচনাওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার