ইঙ্গমার বার্গম্যানকে বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্র দুনিয়ার শেক্সপিয়ার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনেক নির্মাতা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার কাজ থেকে। সুইডিশ এই পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক জন্মেছিলেন ১৯১৮ সালের ১৪ জুলাই। সেই হিসাবে এ বছর পূর্ণ হলো তার জন্মের ১০০ বছর।
এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে উদযাপন করা হবে ইঙ্গমার বার্গম্যানের জন্মশতবর্ষ। এর অংশ হিসেবে কান ক্ল্যাসিকসে থাকছে তার বিখ্যাত মাস্টারপিস ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ (১৯৫৭)। এতে দেখানো হয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলা!
১৯৫৭ সালে ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিস’ ছবিটিও মুক্তি পায়। তখন তার সময়গুলো কেমন ছিল? এর উত্তর মিলবে সুইডিশ নারী নির্মাতা জেন ম্যাগনাসন পরিচালিত ‘বার্গম্যান-অ্যা ইয়ার ইন অ্যা লাইফ’ প্রামাণ্যচিত্রে। এটিও থাকছে এবারের কান ক্ল্যাসিকসে। ২০১৩ সালে মার্টিন স্করসেসি, উডি অ্যালেন, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা ও ওয়েস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ট্রেসপাসিং বার্গম্যান’ প্রামাণ্যচিত্রটি পরিচালনা করেন জেন।
প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন ইঙ্গমার বার্গম্যান। তার ছবিতে বারবার এসেছে মৃত্যু ও বিশ্বাসঘাতকতা। ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার রেখে যাওয়া স্থান নিয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রশ্ন করে জার্মান নারী নির্মাতা মার্গারিট ফন ট্রটা বানিয়েছেন ‘সার্চিং ফর ইঙ্গমার বার্গম্যান’। কান ক্ল্যাসিকসে বার্গম্যানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে থাকছে এটিও। জার্মানিতে নতুন ধারার সিনেমা বিপ্লবের নেতৃস্থানীয় সদস্য ধরা হয় মার্গারিটকে। তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং বার্গম্যান।
‘২০০১: অ্যা স্পেস ওডিসি’র ৫০ বছর
আগেই জানানো হয়েছে, স্ট্যানলি কুবরিকের ‘২০০১: অ্যা স্পেস ওডিসি’ (১৯৬৮) ছবি মুক্তির ৫০ বছর উদযাপন করা হবে কান ক্ল্যাসিকসে। এটি উপস্থাপন করবেন বিখ্যাত নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। তিনি এবার মাস্টারক্লাসেও অংশ নেবেন।
বিশ্বের প্রথম নারী নির্মাতা
কান ক্ল্যাসিকসে থাকছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রথম নারী নির্মাতা ফ্রান্সের অ্যালিস গি-ব্লাশের ওপর বানানো প্রামাণ্যচিত্র। এর নাম রাখা হয়েছে ‘বি ন্যাচারাল: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব অ্যালিস গি-ব্লাশে’। এটি পরিচালনা করেছেন মার্কিন নারী নির্মাতা পামেলা বি. গ্রিন।
জেন ফন্ডার জীবন
মার্কিন অভিনেত্রী জেন ফন্ডার জীবনের ওপর সুসান লেসির প্রামাণ্যচিত্রও থাকছে কান ক্ল্যাসিকসে। ‘জেন ফন্ডা ইন ফাইভ অ্যাক্টস’ নামের এই ছবিতে থাকছে তার অভিনয় জীবন ও বিভিন্ন সম্পর্কে জড়ানোর খন্ডচিত্র।
ওরসন ওয়েলেস
আমেরিকার কিংবদন্তি নির্মাতা ওরসন ওয়েলেসের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার হবে কান ক্ল্যাসিকসে। ‘দ্য আইস অব ওরসন ওয়েলেস’ নির্মাণের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র, ড্রইং, চিত্রকর্ম ও তারুণ্যের কাজ তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও ইতিহাসবিদ মার্ক কুজিন্স। পর্দায় প্রথমবার দেখা যাবে এগুলো।
কান ক্ল্যাসিকসের অন্যান্য ছবি
মার্কিন বর্ষীয়ান নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি উপস্থাপন করবেন মেক্সিকোর এমিলিও ফার্নান্দেজের ‘এনামোরাডা’ (১৯৪৬)। কান ক্ল্যাসিকসে আরও থাকছে ফ্রান্সের অঁরি দুকোয়ার ‘বিটিং হার্ট’ (১৯৩৯), ইতালির ভিত্তোরিও ডি সিকার ‘বাইসাইকেল থিভস’ (১৯৪৮), জাপানের ইয়াসুজিরো ওজুর ‘টোকিও স্টোরি’ (১৯৫৩), আমেরিকার বিলি ওয়াইল্ডারের ‘দ্য অ্যাপার্টমেন্ট’ (১৯৬০), চেক রিপাবলিকের ইয়ান নেমেচের ‘ডায়মন্ডস অব দ্য নাইট’ (১৯৬৪), সের্গেই বন্দারচুকের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস, ফিল্ম আই, আন্দ্রেই বোলকোনস্কি’ (১৯৬৫), ফ্রান্সের জ্যাক রিবেতের ‘দ্য নান’ (১৯৬৫), লাটভিয়ার রোল্যান্ডস কালনিনসের ‘ফোর হোয়াইট শার্টস’ (১৯৬৭), আর্জেন্টিনার ফার্নান্দো সোলানাসের ‘দ্য আওয়ার অব দ্য ফারনেসেস’ (১৯৬৮), নেদারল্যান্ডসের জর্জ স্লাইজারের ‘জোয়াও অ্যান্ড দ্য নাইফ’ (১৯৭১), ফ্রান্সের মারিন কারমিৎজের ‘ব্লো ফর ব্লো’ (১৯৭২), সেনেগালের সাফি ফেই পরিচালিত “ফাড’জেল” (১৯৭৯), ফ্রান্সের পিয়ের রিজ্জির ‘ফাইভ অ্যান্ড দ্য স্কিন’ (১৯৮১), পর্তুগালের পাওলো রোচার ‘দ্য আইল্যান্ড অব লাভ’ (১৯৮২), আমেরিকার ব্রুস বেরেফোর্ডের ‘ড্রাইভিং মিস ডেইজি’ (১৯৮৯), ফ্রান্সের জ্যঁ-পল র্যাপেন্যুর ‘সিরানো দ্যু বারজেরাক’ (১৯৯০), সেনেগালের জিবরিল দিওপ মামবেতির ‘হায়েনাস’ (১৯৯২)। এবারের কান ক্ল্যাসিকসের উদ্বোধনী ছবি সেনেগালের পুলান সুমানু ভিয়েরার ‘ল্যাম্ব’ (১৯৬৩)।
সাগরপাড়ের আয়োজন
কান ক্ল্যাসিকসের আরেক আকর্ষণ সিনেমা ডি লা প্লাজ। এই আয়োজনে সাগরপাড়ে ধ্রুপদী কয়েকটি ছবি দেখানো হয়। এবার আমেরিকার র্যান্ডেল ক্লাইজারের ‘গ্রিস’ (১৯৭৮) ছবির প্রদর্শনীতে থাকবেন হলিউড তারকা জন ট্রাভোল্টা। এছাড়াও থাকছে আমেরিকার আলফ্রেড হিচককের ‘ভার্টিগো’ (১৯৫৮), ইতালির সার্জিও কোরবুচ্চির ‘স্পেশালিস্টস’ (১৯৬৯), ফ্রান্সের অ্যাগনেস ভারদার ‘ওয়ান সিংস দ্য আদার ডাজনট’ (১৯৭৭), জার্মানির পার্চি অ্যাডলনের ‘বাগদাদ ক্যাফে’ (১৯৮৭), আমেরিকার লুক বেসনের ‘দ্য বিগ ব্লু’, মিসরের ইউসুফ শাহিনের ‘ডেস্টিনি’ (১৯৯৭)।
৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হবে আগামী ৮ মে। ১২ দিনের এই মহাযজ্ঞ চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। এবার প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পেয়েছে মোট ২১টি ছবি। এগুলোর মধ্য থেকে সেরা ছবিকে স্বর্ণ পাম দেবেন বিচারকরা। তাদের সভাপতি হিসেবে থাকছেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট।