X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শ্রমিকদের প্রতি শিল্পীদের দায়বদ্ধতা কমে গেছে’

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০১ মে ২০১৮, ০৮:১৬আপডেট : ০১ মে ২০১৮, ১৫:৫৭

ফকির আলমগীর, রাজিব, বিউটি ও পুলক। ছবি- সংগৃহীত রিক্সায় উঠেছেন’; হালকা একটু গা এলিয়ে বসেছেন। কিছুক্ষণ পর হয়তো শুনতে পাবেন দরদভরা গলায় গাইছেন রিক্সাওয়ালা। কিংবা যাদের গ্রামে এক-আধটু যাতায়াতের অবসর আছে; তারাও হয়তো নৌকার মাঝির হাঁক ছাড়ানো গানে মুগ্ধ হয়েছেন।
রং মিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি, পোশাককর্মী- এমন অনেক শ্রমিকের গান শুনে মুগ্ধ হননি এমন মানুষ পাওয়াটা কঠিন হবে। দেখা যাবে, গাইছেন শ্রমিক কিংবা রেডিও ছেড়ে শুনছেন শ্রমিক। এ দেশের গানের সবচেয়ে বড় শ্রোতা এই শ্রমিক শ্রেণি।
কিন্তু গানে গানে তাদের কথা কি কখনও ভাবা হয়েছে? তাদের নিয়ে লেখা হয়েছেন কতটা? খুব একটা নয়। ভেবেছেন দু’একজন শিল্পী। তাদের নিয়ে গানও বেঁধেছেন কয়েকজন। ফকির আলমগীর, জেমস, মমতাজ- এদের নামই ঘুরে ফিরে আসবে।
তবে বাংলা ভাষায় শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন ফকির আলমগীর।
গান, ভিডিও, অ্যালবাম এমনকি বইও প্রকাশ করেছেন এই শিল্পী। প্রতিবারই নতুন নতুন গান নিয়ে হাজির হয়েছেন দেশের মজদুরের দরদি এই গায়ক। কিছুদিন আগেই তিনি প্রকাশ করেছেন মিশ্র অ্যালবাম ‘চল মজদুর’। এছাড়া হেমাঙ্গ বিশ্বাস স্মারক গ্রন্থ তৈরি করেছেন তিনি। নাম ‘সুরমা নদীর গাংচিল’।

কিন্তু এর  বাইরে অন্য শিল্পীদের নতুন গান কই?
খোঁজ নিয়ে দেখে গেছে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে শ্রমিকদের জন্য গাওয়ার চল একেবারেই নেই বললেই চলে। অনেক শিল্পীই ব্যস্ত আছেন রোমান্টিক গান ও ভিডিও নিয়ে।
কেন এই অনাগ্রহ- এমনটা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংগীতশিল্পী রাজিবের কাছে। তিনি বললেন, ‘সত্যি বলতে, এখনকার শিল্পীরা ব্যস্ত ভিডিও ও হিট নিয়ে। শ্রমিকদের নিয়ে গান করলে বা ভিডিও বানালে কি হিট হবে? বোধহয় না। এ কারণে অনেকেই আগ্রহী নন। আসলে তরুণরা যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে শ্রমিকদের প্রতি ভালোবাসা কতটুকু আছে- তার প্রশ্ন উঠতেই পারে। এখানে আরও একটি বিষয় জড়িত। নিজেদের টিকে থাকার বিষয়। জনপ্রিয় গান দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাও আছে। তাই শ্রমিক বা অন্য বিষয়ে গান তৈরির ঝুঁকি নিতে অনেকেই চান না’
রাজিব জানালেন, সিরিয়াসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তিনি গানের কাজ করছেন। এরমধ্যে শ্রমিকদের নিয়েও গান করবেন তিনি।

দেশের বাইরে অনেক শিল্পীই কনসার্ট করতে যান। প্রবাসী শ্রোতাদের মধ্যে বেশিরভাগই শ্রমিক। কিন্তু সেখানেও গাইবার মতো শ্রমিকদের নিয়ে তেমন একটা গান থাকে না। তালিকায় থাকে সাধারণত জনপ্রিয় সব রোমান্টিক গান।
প্রেমের গানের বাইরেও কাজ করা এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পী পুলক বললেন, ‘এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের গান ধরে রেখেছে শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের জন্য গান নেই। কারণ এখনকার শিল্পীর দায়বদ্ধতা নেই। তারচেয়েও বেশি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে গানের পৃষ্ঠপোষকতা করা কোম্পানিগুলো। তারা এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগই নেয় না। শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেবে তেমন মানুষও নেই। আর আমরা সবাই রোমান্টিক গানের প্রতিই ঝুঁকে আছি। সবচেয়ে দুঃখজনক গানকে এখন ‘কন্টেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দায়বদ্ধতার চেয়ে বাণিজ্যিকরণ বড় হয়ে উঠেছে। ’

শিল্পী বিউটি তুলে ধরলে আরও একটি দিক। নিজের অভিজ্ঞতা সামনে এনে তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত এমন কথার (শ্রমিক) গান হাতে পাইনি। আমি নিজে গান লিখি না; শুধু কণ্ঠ দিই। তাই অন্যের লেখা গানের ‍ওপর আমাকে নির্ভর করতে হয়। এমন গান লেখার চর্চাও বোধহয় কমে গেছে। আমার খুব ইচ্ছে, শ্রমিক ভাই-বোনদের নিয়ে গান গাওয়ার। হয়তো শিগগিরই কাজটি করব।’

এদিকে এবারও আজ মে দিবসে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। তবে দেশের আয়োজনে থাকছেন না সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। আমেরিকাতে গান নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন এই শিল্পী। বর্তমানে তিনি আছেন নিউ ইয়র্কে। নিউ ইয়র্ক ছাড়াও দেশটির বেশকিছু রাজ্যে গাইবেন ফকির আলমগীর।

/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া