X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ

বাঁকবদলের গল্পে ফেরা…

সোহানা সাবা, অভিনেত্রী
১৩ মে ২০১৮, ১০:০৩আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ১৪:২০

সোহানা সাবা/ ছবি: মঞ্জুরুল আলম চার পেরিয়ে প্রিয় বাংলা ট্রিবিউন-এর আকাশে উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ! এ নিয়ে আমারও আনন্দ কম নয়। কারণ, শুরু থেকে এই পরিবারটির সঙ্গে আমি আছি, সুখে-দুঃখে পেয়েছি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন। তাই বাংলা ট্রিবিউনের এই আনন্দদিনে পাঠকদের শোনাতে চাই আমার জীবনের পাঁচটি বাঁকবদলের গল্প। যে গল্পগুলো বলা হয়নি আজও...

এক.
খুব ছোটবেলা থেকে ক্লাসিক্যাল নাচের তালিম নিয়ে আসছি। আমি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়তাম। আমার ভাই উদয়ন স্কুলে। আমাদের স্কুলের অ্যানুয়াল প্রোগ্রামগুলো টিএসসির অডিটোরিয়ামে হতো। আমি দর্শক সারিতে বসে অন্যদের স্টেজে নাচ করতে দেখে স্বপ্ন দেখতাম, আমিও একদিন এভাবে স্টেজে নাচবো। যখন আমি ক্লাস টুতে পড়ি তখন একটা নাচের সুযোগ পেলাম। অনেক দিন ধরেই রিহার্সেল করছিলাম। ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ’ নামের একটি গানের সঙ্গে নাচবো। কিন্তু শো’র আগের দিন আমার ১০২ ডিগ্রি জ্বর চলে এলো! কিন্তু হাল ছাড়িনি। পরদিন ওই জ্বর নিয়েই স্টেজে প্রথম পারফর্ম করি! সেই শুরু। এরপর প্রায় এক হাজারের বেশি মঞ্চে আমি নেচেছি। কিন্তু সেই দিনের এক্সাইটমেন্ট এখনও আমার ভেতরে বসে আছে। এখনও আমি কোনও স্টেজে উঠলে অথবা নাচের অনুষ্ঠান দেখলে কিংবা নাচতে গেলে সেদিনের কথা খুব মনে পড়ে।
সোহানা সাবা/ ছবি: মঞ্জুরুল আলম দুই.
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন থেকেই মডেলিংসহ মিডিয়ার নানা কাজ শুরু করে দেই। এর মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারের একটা টার্নিং পয়েন্টের জন্য ওয়েট করছিলাম। এমন কোনও কাজ করতে চাইছিলাম, যা আমাকে পরিচিত করে দিবে সবার কাছে। তো তেমন একটা কাজ আমার হাতে এসে গেল হঠাৎ। সেটি হলো ‘আয়না’ সিনেমা। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম মাইলফলক এটি। মনে পড়ে আমি যখন কবরী আপুর বাড়িতে যাই তখন প্রায় অনেক মেয়ের সঙ্গে ঢুকি। আমার সঙ্গে মা ছিলেন। আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম কবরী আপু যদি আমাকে পছন্দ না করেন! কারণ, সিনেমায় কাজ করার বিষয়ে বাসা থেকে পারমিশন দিচ্ছিলো না। তবুও ভাবলাম, উনার (কবরী আপু) সঙ্গে দেখা করতে ক্ষতি কি! দেখা করলাম। প্রায় ২০০ জন মেয়ের মধ্য থেকে তিনি আমাকেই বেছে নেন। তো আমাকে সাইনিং করানোর পরে শুটিংয়ে যাওয়ার মধ্যে প্রায় দুই মাস সময় চলে যায়। এরমধ্যে একদিন কবরী আপু বললেন, ‘তোমার বাবাকে দেখতে চাই।’ আমি খুশি হয়ে পাপাকে নিয়ে যাই আপুর বাসায়। খেয়াল করলাম কবরী আপুর বাসায় যাওয়ার সময় পাপা বেশ ফিটফাট হয়ে গেলেন! পাপা কিন্তু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারা মানুষ। মনে পড়ে, সেদিন সে কবরী আপুর সামনে বসে রীতিমতো তোতলামো করছিলো! পরে অবশ্য পাপা আমাকে বলেন, তার স্কুল লাইফের ক্রাশ ছিলেন কবরী আপু। যাহোক, পাপার সামনেই সেদিন আমি কবরী আপুকে জিজ্ঞেস করি উনি আমাকে কেন পছন্দ করেছিলেন? তো উনি আমাকে বললেন, ‘প্রথম দেখাতেই তোমার জন্য আমার এমন মহব্বত তৈরি হয়েছে, আমি আসলে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কাস্টিং করার কথা ভাবিনি।’ পরে জেনেছি, আমার চোখ আর হাসি উনার খুব পছন্দ হয়েছে। সে কারণেই আমার জীবনে ‘আয়না’ নামের ছবিটা এলো। সে যাই হোক, ‘আয়না’ আমার জীবন সত্যি বদলে দিয়েছে। এ কারণে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো কবরী আপুর কাছে।
তিন.
২০১৩ সালে রোজার ঈদের (সম্ভবত সেপ্টেম্বর) এক মাস পর আমাদের সিনেমা ‘বৃহন্নলা’র শুটিং হবে। তো ঈদের পরদিন আমার বাবা-মা সিনেমার ডিরেক্টরসহ আরও দুজন আমার দাদুবাড়ি রাজবাড়ীতে যাবো সিনেমার লোকেশন দেখতে। কারণ, পুরো ছবির শুটিং আমার দাদাবাড়িতেই হয়েছে। তো রাজবাড়ীতে রওনা দেওয়ার আগে যথারীতি রেগুলার নিয়মের মতো আমার এক্স হাজবেন্ড ছবিটির নির্মাতা আমার গায়ে হাত তুললেন! তাই নয়, তিনি আমার মুখের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে গলার ভেতরের কিছুটা মাংস তুলে আনলেন নখ দিয়ে। আমিও যথারীতি বিষয়টিকে সবার কাছ থেকে লুকালাম। প্রচণ্ড ব্যথা ও জ্বর কমাতে দুদিন পেইনকিলার খেলাম। আমি জানতাম না তখন আমি এক মাসের প্রেগনেন্ট। এক সপ্তাহ পরে জানলাম সেটা। কিন্তু আমার সেই সন্তানের হার্টবিট আসেনি সময় মতো। বৃহন্নলা’র শুটিংয়ের সময় কেউ জানতো না আমি প্রেগনেন্ট ছিলাম। শুটিংয়ের শেষে আমার সেই সন্তানকে রাখতে পারিনি। কারণ, আমি না জেনে প্রেগনেন্সির পঞ্চম সপ্তাহে দুদিনে পেইনকিলার খেয়েছিলাম ১২টা!
চার.
এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে স্বরবর্ণকে যখন কনসিভ করলাম তখন আমি আসলে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। বাসায় আমার কোনও হেল্পিং হ্যান্ড ছিল না। পুরো সময়টা আমার বাসার কাজ আর শুটিং চালিয়ে যেতে হয়েছে। ‘বৃহন্নলা’য় অভিনয়ের পাশাপাশি এর এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার ছিলাম আমি। তাই সিনেমার তদারকি করা, স্পন্সর খোঁজা, অডিও রিলিজ, সিনেমা রিলিজ নিয়ে প্রচুর দৌড়াতে হয়েছে আমাকে। অবশেষে ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রিলিজ হয় ছবিটি। আর ১৮ অক্টোবর ভোর ৭টায় পৃথিবীতে এলো স্বরবর্ণ।
আমি প্রথম থেকেই জানতাম মুরাদ (আমার প্রাক্তন হাজবেন্ড ও পরিচালক) অন্য মেয়েদের বিষয়ে আগ্রহী। অনেকবার অনেকভাবে প্রমাণ পেয়েও এগুলো নিয়ে কখনও মাথা ঘামাইনি। উল্টা আমার প্রতি তার সন্দেহ প্রবণতায় আমি আর আমার পরিবার অতিষ্ঠ ছিলাম। সে যাই হোক, আমি শুধু তাকে বলেছি প্রেগনেন্ট অবস্থায় এমন কিছু করো না, যেটাতে আমি আঘাত পাই। সে কথা রাখেনি। ১৫ অক্টোবর অনেক চ্যাটিংসহ আবার ধরা পড়লো আমার হাতে। কে কখন তার অফিসে এসেছে আর চ্যাটিংয়ে কী কী আলাপ করেছে, সব দেখতে পেলাম। মুরাদকে বললাম, ‘বাসা থেকে বেরিয়ে যাও।’ মুরাদ যে বের হলো, ফোন বন্ধ, ওকে আর পাই না খুঁজে। বাসা থেকে ওর অফিসের পথ ৫ মিনিটের। সেই পথ আমি প্রায় এক ঘণ্টায় হেঁটে গেলাম। পাইনি। রাতে মামনি-পাপা এলো আমার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু আমি তাদের পাঠিয়ে দিই। এটা অভিমান করেই। ১৭ অক্টোবর সারা দিন একা বাসায় প্রসব বেদনা নিয়ে পড়ে ছিলাম। রাতে মামনি এসে আমাকে হসপিটালে এডমিট করলো। মুরাদকে তখনও কেউ পাচ্ছে না। ১৮ অক্টোবর ওর এক ছোট ভাই তার সিক্রেট একটা নাম্বারে ফোন করে মুরাদকে ডেকে আনলো। পরদিন ভোরে কাটাকুটির মধ্য দিয়ে স্বরবর্ণ হলো। আর মনে হলো, যদি আগের দিনও মুরাদ আমার পাশে থাকতো, ঠিক সময়ে হসপিটাল নেওয়া হতো, তবে ছেলেটা আমার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই হতো।
সোহানা সাবা ও ছেলে শুদ্ধ স্বরবর্ণ/ ছবি: মঞ্জুরুল আলম পাঁচ.
তিনি ১০০% দুষ্টু। তার নাম শুদ্ধ স্বরবর্ণ। তিনি আমার জীবনে আসার পর থেকে মা তার নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও সঠিক সব রকমের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন নির্দ্বিধায়। তাই মায়ের লাকিচার্ম শুদ্ধ স্বরবর্ণ। তিনি এত দুষ্টু যে মা উপুড়-ঝুপুড় করে চুল কেটে না দিলে অন্য কেউ কাটতেই পারেন না। মা যতই স্বরবর্ণকে শাসন করার ভান করুক না কেন, মা কিন্তু চায় স্বরবর্ণ দুষ্টুমনিই থাকুক, এখন যেমন। পৃথিবী জয় করুক কিন্তু সৎ উপায়ে। মায়ের আর কিচ্ছু চাই না এ জীবনে। আমি তো মনে করি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রশান্তি আর স্বস্তির জায়গা তৈরি করে দিয়েছে আমার সন্তান শুদ্ধ।
অনুলিখন: মাহমুদ মানজুর

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…