X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ

মুম্বাই থেকে পাওয়া সিনেমা দর্শন

দীপঙ্কর দীপন, নির্মাতা
১৩ মে ২০১৮, ১০:১২আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ১৪:০৫

দীপঙ্কর দীপন ও অনুরাগ কাশ্যপ বার্লিন ট্যালেন্ট প্রজেক্ট মার্কেটে আমার একটি সিনেমা প্রজেক্ট নির্বাচিত হয়েছিল ২০০৬ সালে। ওই বিখ্যাত প্লাটফর্মে বোধহয় এখন অবধি এটিই একমাত্র বাংলাদেশি প্রজেক্ট। এর কারণেই ২০১২ সালে মুম্বাইতে গিয়ে কাজ শুরু করি ভারতের বিখ্যাত পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে। পরে সম্পর্কটা শুধু কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অনেক বিষয়ে যুক্ত হয়েছিলাম আমরা। কারণ, অনুরাগ কাশ্যপ আমার সারা বিশ্বের প্রিয় পাঁচ নির্মাতার একজন। তিন মাসের জন্য গিয়ে আড়াই বছর থেকেছিলাম, মা’র শরীর বেশি খারাপ না করলে মুম্বাইতে পাকাপাকি থাকার একটা জোর সম্ভাবনাও গড়ে উঠেছিল। আমার চলচ্চিত্রের স্কুল, আমার চলচ্চিত্র দর্শনটা গড়ে উঠেছে সেখান থেকেই। কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি আমি পেয়েছি এমন কয়েকটি সিনেমা সম্পর্কিত বোধ, যা অনুরাগ কাশ্যপ বা একেএফপিএল বা ফ্যান্টমের বাইরে কোথাও সম্ভব হতো না। তাই এগুলো আমার জন্য বিশেষ। তেমন পাঁচটি বিষয় আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি বাংলা ট্রিবিউনের চার বছর পেরিয়ে ‘উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ’ আয়োজনে-
নো স্পুন ফিডিং
দর্শককে চামচে করে তুলো খাওয়ানোটা বন্ধ করতে হবে। দর্শককে নিজের থেকে কম বুদ্ধিমত্তার কম ধরে নিয়ে অনেক নির্মাতা সিনেমার নানা বিষয় দর্শকদের চামচে করে খাইয়ে দেওয়ার মতো সহজ করে বুঝিয়ে দেয়। এখান থেকেই সিনেমাগুলো বোকা বা আনস্মার্ট হতে শুরু করে। অথচ এর কোনও দরকার নেই। দর্শকরা বরাবরই অনেক বুদ্ধিমান। দর্শক নির্মাতার চেয়ে বুদ্ধিমানÑ এটা ধরে নিয়েই সিনেমা বানাতে হবে। দর্শককে যারা বোকা ভেবে সিনেমা বানিয়েছেন, তারা নিজেরাই বোকা বনে গেছেন ‘সিনেমা’ শেষে।  
আবেগপূর্ণ হওয়া যাবে না
সিনেমা করতে আবেগ লাগে; সেটা যেমন ঠিক, তেমনি সিনেমার কোন কোন ধাপে আবেগকে ঝেড়ে ফেলতে হয়, সেটা আরও সঠিক। আবেগ মাঝে মাঝে আপনার বুদ্ধিমত্তার চোখে ঠুলি পরিয়ে আপনাকে ইমোশনাল ‘ফুল’ বানিয়ে দেয়। তাই চিত্রনাট্যের পরে ইমোশনের চেয়ে ইনটিলেজেন্স যেন আপনাকে বেশি প্রভাবিত করতে পারে সেটা খুব জরুরি। সিনেমা একটি কারিগরি বিষয়, যেখানে প্রযুক্তি দিয়ে আবেগকে উপস্থাপন করতে হয়, পথটা বুদ্ধিমত্তার, তাই যতটুকু আবেগ আপনাকে বোকা বানিয়ে দেয়, সেটাকে ঝেড়ে ফেলুন।
ফিল্ম স্কুল অনুসরণ করো না, নিজের পথ নিজে তৈরি করো
ফিল্ম স্কুল আপনাকে অনেক ধরনের সিনেমা বানানো তরিকা শেখায়। কিন্তু আপনি ক্লাস শেষে ঠিক যে ছবিটা বানাতে চাইছেন সেটা কিন্তু বানানো শেখায় না। তাই ফিল্ম করতে হলে প্রথমে ফিল্ম স্কুল ভুলতে হয়। তারপর নিজের ছবিটার জন্য নিজের মেথডটা নিজেকেই তৈরি করতে হয়। নতুন ধরনের চলচ্চিত্র করা অনেকটা দুর্গম। অসম্ভব স্থানে রেললাইন বা রাস্তা নির্মাণের মতো। ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান তো টিমের আছে, পরিকল্পকের নিজের মতো সমস্যা সমাধানের পথগুলো খুব জরুরি পড়ে সেক্ষেত্রে। এটা চলচ্চিত্র দর্শনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কাউকে অনুসরণ করে কেউ বড় হতে পারে না। নিজে চলচ্চিত্র দর্শনটা নিজেকেই তৈরি করতে হবে। সেটা অনেকের দ্বারা আপনি প্রভাবিত হয়ে নিজের ভাবনাটা মিলিয়ে হতে পারে, কিন্তু কারো মতো নয়। নয়তো নির্মাতা হিসাবে স্বকীয় পরিচয়ে দাঁড়াতে পারবেন না। চলচ্চিত্র শিল্পে কিছু যোগ করতে পারবেন না। চলচ্চিত্র বানানোর মেশিন হয়েই থাকবেন সারা জীবন!
বিশ্বাস করেন না এমন কিছু করবেন না
নির্মাতাদের সেই সিনেমাটাই বানানো উচিত যেটা সে বিশ্বাস করে। সেটা নাচ-গানপূর্ণ সিনেমা হোক বা বাস্তবতা বর্জিত সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি কিংবা শিল্পমানপ্রধান সিনেমা হোক অথবা বাচ্চাদের অ্যানিমেশন মুভি হোক। কাজ পেয়েছেন বা ফরমায়েশ বলে সেই সিনেমাটা কখনও বানাবেন না যেটাতে আপনি বিশ্বাস করেন না। আপনার বিভিন্ন ধরনের সিনেমা ভালো লাগতেই পারে কিন্তু সেই সিনেমাটা বানাবেন যেটা আপনি বানাতে চান। কারণ, পরিচালক সিনেমাটিকে বিশ্বাস করছে কি করছে না সেটি সিনেমা রিলিজের পর খুব ভালো বোঝা যায়। সিনেমার ইমপ্যাক্টের সূত্রটা নিহিত থাকে এখানেই।  
নির্মাতাদের সিকিউরড মানুষ হতে হবে
অনুরাগ প্রায় বলেন, পৃথিবীতে দুই রকমের মানুষ। একদল সিকিউরড মানুষ, আরেকদল ইনসিকিউরড। সিকিউরড মানুষরা সফলতার জন্য নিজের মইটা নিজেই  তৈরি করে। নিজের যা অর্জন তা অনেক পরিশ্রম করে দিনে দিনে অর্জন করে। অন্যের ক্রেডিট মেরে বা অন্যের ওপর ভর করে নিজে বড় হয় না। তাই তারা আত্মবিশ্বাসী হয়। তারা বিশ্বাস করে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে তা কমে না, বরং অন্যের কাজে লাগে। এক্ষেত্রে তারা এই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না যে তার জায়গা কেউ নিয়ে নিলো কিনা! তাই তারা নিজের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চায়। আর আরেক দল সেই জ্ঞান আঁকড়ে ধরে। তারা ভয়ে থাকে তাদের জায়গা বুঝি কেউ নিয়ে নিলো! তাই সবসময় তারা শঙ্কায় থাকে। আর শঙ্কা থেকেই তারা অদ্ভুত অদ্ভুত হীন সব কাজ করে। আর নির্মাতাদের এই ইনসিকিউরিটি তাকে বড়, মহৎ কোনও কাজ করতে বাধা দেয়। নির্মাতাদের সিকিউরড মানুষ হওয়া বা হওয়ার পথটা পাড়ি দেওয়া খুব জরুরি।
জানি না এই পাঁচটি বোধ আপনার কাজে লাগবে কিনা। তবে এই বোধগুলো আমার সিনেমা দর্শনের মূল ভিত্তি।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…