X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ

কিংবদন্তির কাছে যাওয়া...

আঁখি আলমগীর, কণ্ঠশিল্পী
১৩ মে ২০১৮, ১০:১৪আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ১৪:১৮

আঁখি আলমগীর শুভেচ্ছা বাংলা ট্রিবিউন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে। চার বছর পেরিয়ে পাঁচ বছরে পা রাখলো প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি। এই আনন্দ আমাদের সবার। এমন আনন্দ সময়ে আমার জীবনের পাঁচটি স্মরণীয় ঘটনা শেয়ার করতে চাই পাঠকদের সঙ্গে। যে ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে উপমহাদেশের নন্দিত পাঁচ তারকার নাম! ‘উঠেছে পঞ্চমীর চাঁদ’ নামের এই বিশেষ আয়োজনে এমন স্মৃতি শেয়ার করতে পারাটাও বেশ আনন্দের। কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... ২৭ মার্চ ২০১৭, আমার জীবনের এক শ্রেষ্ঠতম দিন। যেকোনও শিল্পীর জন্যই হওয়ার কথা। রুনা আন্টি (কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা) আমাকে নিয়ে হাজির হলেন মুম্বাই, এক জীবন্ত কিংবদন্তির বাসায়। দেখা পেলাম তাঁর। প্রথমে বিশ্বাস হলো না, আমি সেখানে আছি। আমি সামনেই, একটু পরেই কাছে ডেকে পাশে বসালেন তিনি। অনেক উপহার দিলেন আমাকে। হায়- আমি যে কিছুই নিয়ে যাইনি তার জন্য। ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা! কিছু একটা তো নেওয়া উচিত ছিল। অথচ রুনা আন্টি ঠিকই তাঁর জন্য নিয়ে গেছেন অনেক উপহার। আর আমি, একটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম দুই কিংবদন্তির সামনে। কি বলবো, কি করবো, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সবই যে ভুলে গেলাম তখন। শুধু বসে রইলাম, তাঁর পায়ের কাছে। হাত দুটো ধরলাম। সবাই কথা বলছে, কত মজা করছে, হাসি, ঠাট্টা- অথচ আমি খুব বেশি শুনতে পেলাম না এসবের কিছু। তাকিয়ে রইলাম শুধু তাঁর দিকে। উনি অবাক হয়ে শুনলেন আমি বিদেশ ট্যুর ক্যান্সেল করে এসেছি শুধু একবার তাঁর দেখা পাবো বলে। উনি আমার মাথায় হাত রেখে কতক্ষণ যে আশীর্বাদ করলেন জানি না। আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। কিন্তু মুখে হাসি। আমি শুধু তাঁকে ইংরেজিতে এটুকু বলেছি- আমি দুঃখিত, আমার কান্না আটকাতে পারছি না। এটা শুনে পরম মমতায় আমাকে তাঁর বুকে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে কত আদর করলেন। উনার বোনের মেয়ে বললেন- কাঁদো, লজ্জা পেয়ো না, তোমার ভালোবাসায় সারা ঘর ভরে গেছে। আরও কত কি হলো- সব লিখে শেষ হবে না। তাঁকে দেখেছি, ছুঁয়েছি, দোয়া নিয়েছি, বুঝাতে পেরেছি আমার ভালোবাসা, এটাই যথেষ্ট। একজন পূজারীর আর কিছুই চাওয়ার থাকে না- সে যখন দেখা পায় তার দেবীর, সে যখন দেখা পায় একজন লতা মুঙ্গেশকরের...।
কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... ছোটবেলা থেকে আমি মিঠুন চক্রবর্তীর ফ্যান। আর আমার বোন অমিতাভের। এই নিয়ে বিরাট ঝগড়া হতো। কিন্তু দুজনে এক জায়গায় এসে শান্ত হতাম, তা হলো দিলীপ কুমার। তার অভিনীত কোনও ছবি আমি বাদ রাখিনি। একাধিকবার দেখেছি। দিলীপ কুমার-মধুবালা জুটি আমার খুব প্রিয়। শুনেছি তাঁদের নাকি প্রেমও ছিল। ভাবতাম- তাই যেন সত্যি হয়। যাক, এই কিংবদন্তি যখন ঢাকায় এলেন- তখন আব্বু (নায়ক-নির্মাতা-প্রযোজক আলমগীর) আমাদের নিয়ে গেলেন উনার সাথে দেখা করতে। হোটেল সোনারগাঁওয়ে উঠেছিলেন। দেখে বড়সড় ধাক্কা খেলাম, হৃদয়ে। মনে হলো- এতো সুন্দর চোখ হয় কোনও মানুষের? মাথাভরা ঘন চুল। দুধে আলতা গায়ের রং! ধীরস্বরে কথা বলেন। অটোগ্রাফ দিলেন, ছবি তুললেন, আমাদের নতুন করে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিলেন প্রিয় ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার।
কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমার ডুয়েট অ্যালবাম মাত্র দুইটা। প্রথমটা এস ডি রুবেলের সঙ্গে ২০০০ সালের সুপারহিট ‘মনে রেখ ভালবেসেছিলাম’। এরপর আর করা হয়নি। হঠাৎ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে প্রস্তাব এলো আবার ডুয়েট অ্যালবাম করার, তবে বিদেশি শিল্পীর সঙ্গে। একটু যোগাযোগ করেই পেয়ে গেলাম বলিউডে তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা উদিত নারায়ণকে। শুনলাম ঢাকায় আসবেন একটি প্রোগ্রামে- সেই ফাঁকে পাঁচটা ডুয়েট গানে ভয়েসও দিয়ে যাবেন। উনি ঢাকায় আসলেন, আমি উনাদের (স্ত্রী দিপা নারায়ণ) রেডিসন থেকে তুলে নিয়ে গেলাম প্রমিক্স স্টুডিওতে (বেইলি রোড)। সুরকার ছিলেন রাজেশ। দুদিনে পাঁচটি গান গাইলেন। সেই দুদিন এই দম্পতির অনেক স্নেহসহ আরও একটা জিনিস শিখেছিলাম, তা হলো বিনয়। বিনয় মানুষকে অন্য এক সম্মানের আসনে নিয়ে যায়। উনি শেষের দিন তাড়াহুড়ো থাকায় দুপুরের খাবার না খেয়ে কাজটা শেষ করেছিলেন। পরে আমার গাড়িতে বসে খাবার খেয়েছিলেন। আমার ড্রাইভারের সাথে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছিলেন। প্রতিটি লাইন গাইবার সময় আমাকে আর রাজেশ ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন ‘ঠিক হ্যায়? অর একবার গাও?’ তখন অবাক বিস্ময়ে উনার চমৎকার গায়কী শুনেছিলাম। একটা গান ১০০ রকম করে গাইতে পারেন তিনি। আমাদের সেই ডুয়েট অ্যালবাম ‘তুমি আর আমি’ সবার নজর কেড়েছিলো। সেই গানগুলো এখন দর্শক অনুরোধে গাইতে হয়, বিশেষ করে- ‘এই গান এতো ভালো লাগেনি আগে’ আর ‘তুমি যদি বল’। দীপা দি এখনও যোগাযোগ করেন, উইশ করেন বিশেষ দিনে। আমিও করি। যদিও আমার যোগাযোগ স্কিল খুবই খারাপ। অলস তো একটু! এরপরেও আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান অনেক অনেক বেশি।
কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... সঙ্গীতের এক অলৌকিক গুণের অধিকারী দেবীর ছোট বোন আশা ভোঁসলে। দেখা হলো বাবার (নায়ক আলমগীর) বাসাতেই, ঢাকায়। রুনা আন্টির (রুনা লায়লা) খুব কাছের মানুষ তিনি। কনসার্ট করতে ঢাকায় এলেন। কি দারুণ সাজ, পরিপাটি, গা-ভরা হীরার গহনা- চকচক করছিলেন, নিজেই তো এক অমূল্য হীরা। তো সেদিন বাসায় উপস্থিত থাকা কেউ ছবি তোলার কথা বলার মতো সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু আমি? উফ!! আমি তার পাগল ভক্ত। তাই বলেই ফেললাম- ছবি তুলতে চাই। শুনে আমাকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। নিজ হাতে আমার মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এত সুন্দর মুখ চুল দিয়ে ঢেকে রাখতে নেই’। হায়- আমি তো আবেগে আনন্দে নেচে উঠি। আমার গানের সিডি উপহার করলাম। দুই মেয়েসহ খুব ছবি তুললাম। আহা- কি সৌভাগ্যবান আমি।
কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... বেশ আগের কথা। বাবার (নায়ক আলমগীর) ‘মায়ের দোয়া’ সুপার হিট হলো। কলকাতায় শুরু হলো, ‘মায়ের আশীর্বাদ’। নায়ক আব্বু, নায়িকা দেবশ্রী। পুরো পরিবারসহ চলে গেলাম কলকাতায়। বিরাট গেস্ট হাউস তখন আলমগীর পরিবারের আন্ডা-বাচ্চাদের দখলে। প্রায় রাতেই সেখানে আসতেন দেবশ্রী, প্রসেনজিৎসহ অনেক তারকা। কলকাতা ভরে আছে আমাদের বন্ধু দিয়ে। ওরাও সব আসতো। আর সাথে আসতো দেবশ্রীর বড় বোন, তার দুই ছেলে মেয়েসহ, ছেলে রাজা, মেয়ে রানী। ইয়েস, রানী মুখার্জি। আমরা দুজনেই তখন টিন এজার। আমাদের সেকি আড্ডা, মজা। শুনতাম ওর স্বপ্নের কথা, নায়িকা হতে চায় রানী আর আমি হতে চাই গায়িকা। বন্ধুত্ব গাঢ় হলো আমাদের। দেশে ফিরেও যোগাযোগ, ফোনে কথা, চিঠির আদান প্রদান। সেই রানী আজকের রানী। কয়েক বছর আগে আমেরিকার ঢালিউড অ্যাওয়ার্ডে দেখা হলো আমাদের। ভেবেছি চিনবে না আমায়। কিন্তু না, দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলেছে, আঁখি- তুই কেমন আছিস রে? তোদের খুব মিস করি।
কিংবদন্তির কাছে যাওয়া... তিনি একজনই ‘গুলজার সাহেব’। রুনা আন্টির (রুনা লায়লা) বাসায় দেখা। এই গুণী লেখকের আমি অন্ধ ভক্ত। দিনের পর দিন উনার কবিতা, গান, উনার বানানো সিনেমা আমি দেখতে পারবো। এখনো উনার প্রতিটি লেখনী আমাকে ভাবায়, কাঁদায়। উনার কথা শুনেছি মুগ্ধ হয়ে। আর তিনি প্রশংসা করেছেন আমার চোখের। আমাকে নিয়ে লিখেছেন দুই লাইন, যা আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না। খুব অল্প সময়ই পার করেছি প্রিয় এই লেখকের সঙ্গে। এই একটি মানুষের সাথে আবারও দেখা করতে ইচ্ছা হয় আমার। উনি পড়বেন, আমি শুনবো- ভাবলেই ঘোর লেগে যায় আমার। কলমেই শক্তি, কলমেই প্রেম, কলমেই কষ্ট- তা উনি বারবার প্রমাণ করেছেন। আর আমার জন্য লিখেছেন- ‘আঁখি,  পৃথিবীটা তোমার ওই সুন্দর চোখ দিয়ে দেখো আর তোমার মতোই সুন্দর করো পৃথিবীটা’। আহ্, আর কি চাই!

অক্ষর বিন্যাস: হাসনাত নাঈম

/এমএম/
সম্পর্কিত
ট্রেলারে ‘কাজলরেখা’: সংস্কৃতি ও রহস্যের মেলবন্ধন
ট্রেলারে ‘কাজলরেখা’: সংস্কৃতি ও রহস্যের মেলবন্ধন
কপি’যুদ্ধ সেরে বুবলীর রাজ’কীয় চমক!
কপি’যুদ্ধ সেরে বুবলীর রাজ’কীয় চমক!
পাভেলের লিভিং রুম সেশানে জাহিদের কণ্ঠে ‘হে নামাজি’
পাভেলের লিভিং রুম সেশানে জাহিদের কণ্ঠে ‘হে নামাজি’
নোরা এবার র‌্যাপার! (ভিডিও)
নোরা এবার র‌্যাপার! (ভিডিও)
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!