X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘নির্মাতাকে সৎ হওয়া উচিত নিজের স্বার্থেই’

জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে
১৮ মে ২০১৮, ২৩:৪৯আপডেট : ১৯ মে ২০১৮, ১১:৩৮

বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়োজন কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’। এর নির্মাতা জসীম আহমেদ কান সৈকতে বসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বললেন।

কান উৎসবের ৭১তম আসরের লালগালিচায় জসীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউন: কান উৎসবের শর্ট ফিল্ম কর্নারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট দৈর্ঘ্যের ছবিগুলো দেখানো হয়। এর মাধ্যমে এগুলোর নির্মাতাদের সামনে খুলে যায় নতুন দুয়ার। ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে তাদের ভাবনার আদান-প্রদান হয়। এর মাধ্যমে নির্মাতারা সত্যিকার অর্থে কী অর্জন করছেন?
জসীম আহমেদ: এটা অনন্য একটি আয়োজন আমাদের মতো উঠতি নির্মাতাদের জন্য। নবীন নির্মাতাদের কর্মশালা করাতে উৎসব আয়োজকরা অনেক বড় বড় নির্মাতাদের এখানে নিয়ে আসেন। সেমিনারও হয়। ব্রেকফাস্ট মিটিংসহ প্রফেশনাল ও ফেস্টিভ্যাল প্রোগ্রামারদের সঙ্গে বিভিন্ন আয়োজন থাকে। ভাবনার আদান-প্রদান তো আছেই। এক কথায় বলা যেতে পারে, এটি একটি স্বল্প সময়ের ফিল্ম স্কুল। গত দু’বছরে এখানেই আমার সঙ্গে অনেক নামিদামি নির্মাতা ও বড় বড় আন্তর্জাতিক উৎসবের প্রোগ্রামারদের দেখা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা ও জানার সুযোগ পেয়েছি। এবারও এখানে ওয়ার্কশপ করিয়ে গেলেন অস্কার মনোনীত ছবির পরিচালক ডেনিস ভিলেন্যুভ।
বাংলা ট্রিবিউন: অনেকে ভাবে, কানের শর্ট ফিল্ম কর্নারে ছবি জমা দিলেই স্থান পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জসীম আহমেদ: এটা সঠিক নয়। একটি ভ্রান্ত ধারণাও বলা যেতে পারে। এখানে মার্শে দ্যু ফিল্মের সঙ্গে শর্ট ফিল্ম কর্নারকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। যেভাবে প্রতিযোগিতা বিভাগের সঙ্গেও কেউ কেউ গুলিয়ে ফেলেন। মার্শে দ্যু ফিল্মে কোনও বাছাই প্রক্রিয়া নেই। এখানকার ছবিগুলো কর্তৃপক্ষ বাছাই করেন। জমা পড়া ছবি আর গ্রহণ করা ছবির মধ্যে তাহলে সংখ্যার পার্থক্য কেন? শর্ট ফিল্ম কর্নারে অনেক ভালো ভালো উৎসবে পুরস্কার পাওয়া ছবি যেমন থাকছে, বিভিন্ন ফিল্ম স্কুলের সেরা সেরা ছবিও আছে। ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ তো প্রতিযোগিতা বিভাগে জমাই দেওয়া যায়নি প্রিমিয়ার পলিসির কারণে। এর আগে বিভিন্ন দেশে ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছে, পুরস্কারও পেয়েছে। প্রতিযোগিতা বিভাগে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার বাধ্যতামূলক, ছবির দৈর্ঘ্য ১৫ মিনিট সর্বোচ্চ। কিন্তু শর্ট ফিল্ম কর্নারে এই দুই জায়াগায় ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলা ট্রিবিউন: শর্ট ফিল্ম কর্নারে ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি হওয়া সত্ত্বেও অনেকে স্ক্রিনিং কিনে দেখান। যে কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া, তা কি শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়?
জসীম আহমেদ: এখানেও কিন্তু নবীন নির্মাতাকে ছাড় দিচ্ছে আয়োজকরা। মাত্র ১২০ ইউরো দিয়ে মার্কেট স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রদর্শনের উদ্দেশ্য কিন্তু ছবি বিক্রি করা। এক্ষেত্রে আগে থেকেই অনেক গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করার জায়গা আছে। ক্রেতা ও এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয় না। আর তাদের আনতে পারলে ছবি বিক্রির সম্ভাবনা থাকে, যদি কনটেন্ট তাদের টার্গেট অডিয়েন্সের সঙ্গে মানানসই হয়। আবার স্ক্রিনিং ছাড়াও ছবি বিক্রি যে হয় তার প্রমাণ তো আমার ‘দাগ’। গত বছর বিশ্বখ্যাত শর্টস টিভি ছবিটি অ্যাকুইজিশন করেছিল কানের ভিডিও লাইব্রেরিতে দেখেই।
কান উৎসবের ৭১তম আসরে জসীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউন: কান উৎসবে অফিসিয়াল সিলেকশন ছাড়া অন্য যেসব প্রদর্শনী হয়, সেগুলো নিয়ে আপনার মন্তব্য শুনি।
জসীম আহমেদ: প্রথমত আমাদেরকে মার্কেট স্ক্রিনিং আর ফেস্টিভ্যাল স্ক্রিনিংয়ের পার্থক্য বুঝতে হবে। শর্ট ফিল্ম কর্নারের ছোট ছবি আপনি ১২০ ইউরো পেমেন্ট করে প্রফেশনালদের দেখালেন, আপনি কি এটাকে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার বলবেন? না, এটা প্রিমিয়ার না। এটা প্রফেশনাল স্ক্রিনিং। কান কর্তৃপক্ষও কিন্তু বলছেন, এটা প্রিমিয়ার ভেবে ভুল করবেন না। তারপরও নির্মাতা তা বলে বেড়ালে কি মিথ্যাচার হবে না? একজন নির্মাতাকে এটুকু সৎ হওয়া উচিত তার নিজের স্বার্থেই। কারণ একদিন যদি তার ছবি কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পায়, তখন যেন তাকে বলতে না হয়, খোদার কসম বলছি এটা আসল কান! তখন তাকে এটাও বলতে হবে, আমার আগেরগুলো মার্কেট স্ক্রিনিং বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। আর সংবাদপত্র কোন শিরোনাম করবে? সংবাদমাধ্যমেরও কান শুনলে ঝাঁপিয়ে না পড়ে তাদেরও বিবেচনায় নেওয়া উচিত কানের কোন বিভাগে ছবিটি যাচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউন: মার্শে দ্যু ফিল্মের স্ক্রিনিংয়ের সারমর্ম তাহলে কী দাঁড়ালো?
জসীম আহমেদ: আমরা জানি, মার্শে দ্যু ফিল্মে কীভাবে স্ক্রিনিং করা হয়। কারা এর দর্শক। ২৫-৩০ আসনের হলে প্রযোজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ছবি দেখতে অন্য কোনও দর্শক থাকে না। তবে যারা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক ভালো করতে পারেন তাদের প্রদর্শনীতে পরিবেশক বা এজেন্টদের দেখা যায়। যা হোক, সেটাকে যখন বলা হয় কান উৎসবে ছবির স্ক্রিনিং হচ্ছে, আমার শুধু জানতে ইচ্ছে হয়; নির্মাতা, প্রযোজক কি নিজের সঙ্গে নিজে প্রতারণা করছেন না? তারা কেন উল্লেখ করেন না কান মার্কেটের কথা?
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কি তাহলে মার্কেট স্ক্রিনিংয়ের বিপক্ষে?
জসীম আহমেদ: অবশ্যই না। আমি সিনেমার সব মার্কেটে যেতে চাই। ছোট ছবির জন্য ক্লরমো ফেরা, পাম স্প্রিংস আর বড় ছবির জন্য গোয়া, কান, রটারডাম অথবা বার্লিন। ছবি বিক্রির জন্য ফেরিওয়ালার মতো সব বাজারে যেতে চাই। কিন্তু বলতে চাই না, আমার ছবি ফেস্টিভ্যালে গেছে। যেমন ধরুন, কানের শর্ট ফিল্ম কর্নারে ছিল ‘দাগ’। এটা কোনও অর্জন নয়। কিন্তু এখান থেকে ছবিটি আমেরিকা ও ইউরোপ মার্কেটের জন্য শর্টস টিভি নিয়েছে ও এটি দেখিয়েছে, সেটা অবশ্যই অর্জন। ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ জার্মানির ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডেজ উৎসবের সমাপনী ছবি বা তুরস্কের হাঁক-ইশ উৎসবে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জয়কেও আমরা অর্জন বলতে পারি। কিন্তু কানের মার্কেট স্ক্রিনিংয়ে অাসগর ফারহাদির ‘এভরিবডি নৌজ’-এর পাশাপাশি দাঁড় করানোকে ঔদ্ধত্যই মনে হয় আমার কাছে। এতে নিজেকেই ছোট করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: কান উৎসব উদ্বোধনের দিন (৮ মে) গ্রামীণফোন তাদের ফেসবুক পেজে ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’-এর পোস্টার পোস্ট করে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে...
জসীম আহমেদ: এটা আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার। যদিও মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমার এ নিয়ে কোনও যোগাযোগ হয়নি। সম্ভবত ছবিটি আমি মোবাইল ফোনে বানিয়েছি বলেই তারা নিজে থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেকে আমাকে ইনবক্স করার পর খবরটা জানতে পারি। আমার জন্য সারপ্রাইজ ছিল ব্যাপারটা। এজন্য আমি অনুপ্রাণিত।
বাংলা ট্রিবিউন: ছবিটিতে রোহিঙ্গা সংকটের কোন দিকটি তুলে ধরতে চেয়েছেন?
জসীম আহমেদ: এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ছবি। এই ইস্যুতে বিশ্বমোড়ল যারা মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে তাদেরকে তিরস্কার করা বা এক ধরনের প্রতিবাদও বলা যায়। আর শরণার্থীদের অমানবিক জীবনযাপন ও দুর্দশার প্রসঙ্গ তো আছেই। ছবির সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে: একটি রোহিঙ্গা শিশু ওপরের দিকে একজোড়া স্যান্ডেল দেখাচ্ছে তাদের, যারা সব জেনেশুনেও মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। ছবিটির পুরো অংশই কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে মোবাইল ফোনে ধারণ করা।
কান উৎসবের ৭১তম আসরে জসীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউন: ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ নিয়ে পাওয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?
জসীম আহমেদ: জার্মানির ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডেজ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মফেস্টেও নির্বাচিত হয়েছে ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’। এর আগে তুরস্কের ‘হাঁক-ইশ’ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’-এর জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার প্রাপ্তি, ইতালির নেপলস মানবাধিকার চলচ্চিত্র উৎসবে ও ঢাকা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়া, সব মিলিয়ে আমি খুশি।
বাংলা ট্রিবিউন: পরের ছবি নিয়ে কী ভাবলেন?
জসীম আহমেদ: ‘ফ্লেম’ ও ‘চকোলেট’ নামে আমার আরও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণাধীন। এর মধ্য ‘চকোলেট’ হলো আই স্ট্যান্ড ফর ওমেন মুভমেন্টের অংশ, যা শিগগিরই শেষ হচ্ছে। ‘ডেবরিস অব ডিজায়ার’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি প্রযোজনা করবো। এতে কিছু চমকও থাকতে পারে। আপাতত এটুকুই প্ল্যান।

/জেএইচ/এমএম/
সম্পর্কিত
জাপানি চিত্রকর্ম এবং আরব বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী!
কান উৎসব ২০২৪জাপানি চিত্রকর্ম এবং আরব বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী!
৭৭তম কান মাতাবে ‘ফিউরিওসা’
৭৭তম কান মাতাবে ‘ফিউরিওসা’
এবারের কান উৎসব শুরু ও শেষ হবে ওনার কথায়!
এবারের কান উৎসব শুরু ও শেষ হবে ওনার কথায়!
১৯ বছর বয়সে কানে চমকে দেওয়া সেই পরিচালক এবার গুরুদায়িত্বে
১৯ বছর বয়সে কানে চমকে দেওয়া সেই পরিচালক এবার গুরুদায়িত্বে
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং