বুধবার (২৩ মে) বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানীতে বাবার কবরেই সমাহিত করা হলো অভিনেত্রী তাজিন আহমেদকে। বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজা ও দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনরা।
শেষ বিদায়ে উপস্থিত হন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, রামেন্দু মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, শহীদুজ্জামান সেলিম, শহিদুল আলম সাচ্চু, সুবর্ণা মুস্তাফা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, শাহনাজ খুশি, ফজলুর রহমান বাবু, আফরোজা বানু, ফয়সাল, আনজাম মাসুদ, ডিএ তায়েব, মাসুম রেজা, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, তানভীন সুইটি, রোজী সিদ্দিকী, নওশীন, রোকেয়া প্রাচী, বিপাশা হায়াত, তমালিকা কর্মকার, রওনক হাসান, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, চয়নিকা চৌধুরী, অনিমেষ আইচ, আশনা হাবিব ভাবনা, ইরেশ যাকের, আহসান হাবিব নাসিম, জয় শাহরিয়ার, মুকিত জাকারিয়া, লিটু আনাম, বিজরী বরকতউল্লাহ, ইন্তেখাব দিনার, ওমর আয়াজ অনি, অরণ্য আনোয়ার, এস এ হক অলিক, পিকলু চৌধুরীসহ অনেকে।
তাজিন আহমেদের শেষ বিদায়, জানাজা ও দাফনের পুরো বিষয়টি দেখভাল করে অভিনয় শিল্পী সংঘ। দাফন শেষে সংঘের পক্ষ থেকে রওনক হাসান জানান, শুক্রবার (২৫ মে) বিকাল ৪টায় সংঘের নিকেতনস্থ অফিসে তাজিন আহমেদ স্মরণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় দেশের সকল শিল্পী-কুশলী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২২ মে) তাজিন আহমেদ না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল৪৩ বছর।
জানা গেছে, এদিন বেলা সোয়া তিনটার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর বলে শুরুতেই তাকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এরপর ইসিজি রিপোর্ট ও নানা পরীক্ষা শেষে বেলা ৪টা ২০ মিনিট নাগাদ কর্তব্যরত চিকিৎসক নূর হোসেন তাজিন আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তার জানান, অভিনেত্রী তাজিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই নোয়াখালী জেলায় জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী ১৯৯১ সালে বিটিভির ‘চেতনা’ নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপনা শুরু করেন। তবে টিভি নাটকই তাকে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা এনে দেয়। তার প্রথম টিভি নাটক ‘শেষ দেখা শেষ নয়’ ১৯৯৬ সালে বিটিভিতে প্রচার হয়।
তার অভিনীত বিটিভির ‘আঁধারে ধবল দৃপ্তি’ এখনও মানুষকে স্মৃতিতাড়িত করে।
তাজিন আহমেদ ১৯৯৭ সালে ‘থিয়েটার আরামবাগ’ দিয়ে মঞ্চনাটক শুরু করেন। এরপর ‘নাট্যজন’ থিয়েটারের হয়ে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে আরণ্যক নাট্যদলের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন লম্বা সময়। এতে তিনি বলাকা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সর্বশেষ অভিনীত মঞ্চনাটক এটি।
হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘নীলচুড়ি’তে অভিনয় করেও বেশ আলোচিত হন। তার সর্বশেষ অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘বিদেশি পাড়া’। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন।
অভিনয়ের বাইরে লেখালেখির কাজেও যুক্ত ছিলেন তাজিন। লিখেছেন একাধিক নাটক। আর নিয়মিত মিডিয়ায় সময় দিতে না পারলেও উপস্থাপনায় ছিলেন বেশ দাপুটে। এনটিভিতে প্রচারিত ‘টিফিনের ফাঁকে’ অনুষ্ঠান টানা ১০ বছর উপস্থাপনা করেন তিনি। একাত্তর টিভিতেও ‘একাত্তর সকাল’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতেন তিনি। তাজিন আহমেদের জন্ম নোয়াখালীতে, আর বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর করেছেন এই অভিনেত্রী। নাট্যাঙ্গনে কাজ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।
এছাড়াও সম্প্রতি তিনি ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ছবি: মাহমুদ মানজুর