X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক: কী বলছেন ভারতীয় তিন পরিচালক?

রঞ্জন বসু, দিল্লি
১৩ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৫৭আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৮, ২২:২৬

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর যে চলচ্চিত্রটি তৈরি হওয়ার কথা, সেটির জন্য যে তিনজন পরিচালকের নাম ভাবা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই কাজটি করার জন্য মুখিয়ে আছেন।

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক কেন ভারতের পরিচালকরা বানাবেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশের কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্ন উঠলেও তারা যে সেটা নিয়ে ভাবিত নন; তিন পরিচালকই বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথোপকথনে সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
ঠিক এক মাস আগে গত ১৪ জুলাই বাংলা ট্রিবিউনে এই এক্সক্লুসিভ খবরটি বেরিয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছে তিনজন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করেছে। তারা হলেন শ্যাম বেনেগাল, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও গৌতম ঘোষ।
তবে বাংলাদেশ এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। খুব সম্ভবত এ মাসের শেষ দিকে ঢাকায় দুই দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠকেই বাংলাদেশ জানিয়ে দেবে কার হাতে তারা পরিচালনার ভার দিতে চায়।
এদিকে বাংলা ট্রিবিউনে খবরটি প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে যায়। কেন এই ছবি ভারতের পরিচালকরা বানাবেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এ প্রশ্নও তোলেন। বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে বাংলাদেশের যে আবেগ জড়িত, ভারতীয়রা সেটা কীভাবে বুঝবেন বা কীভাবে তার প্রতি জাস্টিস করবেন—নির্মাতাদের অনেকেই তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন অনেকে, বাংলাদেশে কী দক্ষ পরিচালকের অভাব আছে যিনি একটা ভালো মানের বঙ্গবন্ধু বায়োপিক বানাতে পারবেন না। তবে ভারতীয় বা বাংলাদেশি যারাই নির্মাণ করুক না না কেন, ছবিটা একটা মাস্টারপিস হওয়া নিয়ে কথা—এমন মতও প্রকাশ করেন কেউ কেউ।
এই পটভূমিতেই আমরা কথা বলেছিলাম ভারতের সেই তিন পরিচালকের সঙ্গে, যাদের নাম ছবিটির সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে ভারত প্রস্তাব করেছে। বঙ্গবন্ধুর ওপর ছবি বানানোর সুযোগ পেলে সেটাকে কীভাবে দেখবেন, ছবি তৈরি শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশে যে ধরনের সমালোচনা হচ্ছে সে ব্যাপারেই বা তাদের মনোভাব কী—এসব নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন শ্যাম বেনেগাল, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও গৌতম ঘোষ।
বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক পরিচালনার সুযোগ আসতে পারে, সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

শ্যাম বেনেগাল: একটা সিনেমা বানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর মতো ফ্যাসিনেটিং সাবজেক্ট আসলে হয় না। অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব তিনি, বহু বছর ধরে আমি তার গুণমুগ্ধ। ইংরেজিতে তার আত্মজীবনী (আনফিনিশড মেমোয়ারস) আগেই পড়া ছিল, ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাবটা পেয়ে বইটা আবার নতুন করে পড়ে শেষ করলাম। আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কোনও মহান নেতাকে নিয়ে ছবি বানানোটাই আসলে খুব বিতর্কের জন্ম দেয়। কারণ, তাদের নিয়ে আমাদের সেন্সিটিভিটি খুব বেশি। তবে এক্ষেত্রে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। কারণ, গান্ধী, নেহরু, সুভাষ বোস—এই তিনজনকেই নিয়ে আমি ছবি বা তথ্যচিত্র বানিয়েছি। কিন্তু সেগুলো নিয়ে তথ্যবিকৃতির কোনও অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি। আশা করি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাতে পারলেও সেই মর্যাদাটা রাখতে পারবো।
গৌতম ঘোষ: কিছু দিন আগে দিল্লি থেকে এ ব্যাপারে একটা ফোন পেয়ে আমি প্রাথমিকভাবে সায় দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ফার্ম প্রোপোজাল এখনও কিছু আসেনি। তবে প্রজেক্টটা যে ভীষণ ইন্টারেস্টিং তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটা বিষয়, সেই পদ্মা নদীর মাঝি’র সময় থেকে আমি বাংলাদেশ নিয়ে ছবি বানাচ্ছি। একাত্তরে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, তখন আমি মাত্র একুশ কি বাইশ বছরের তরুণ, যুদ্ধের উত্তেজনায় ফুটছিলাম টগবগ করে! আজ আমি সত্যিই গর্বিত ও আনন্দিত যে সেই বঙ্গবন্ধুর ওপর ছবি বানানোর জন্যও আমার কথা অন্তত ভাবা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সম্মতি দেওয়ার আগে আমাকেও দেখতে হবে প্রস্তাবটা ঠিক কী আসে, তা নিয়ে আমাকে ভাবতেও হবে।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: আমার নাম এই বায়োপিকের সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা যাবে কিনা, সেই অনুমতি চেয়ে দিল্লি কিছুদিন আগে ফোন করেছিল। আমি সানন্দে সম্মতি দিয়েছি। কারণ, এ প্রস্তাব আমার কাছে অসম্ভব সম্মানের ও অত্যন্ত গর্বের। তবে আমার ধারণা বিষয়টা এখনও প্রাথমিক স্তরেই আছে, চূড়ান্ত কিছু হয়নি। কিন্তু কেন প্রস্তাবটা এত সম্মানের বলছি? ভাবুন তো, আমরা এমন এক জায়গায় থাকি (কলকাতা), সেখান থেকে মাত্র দু-আড়াই ঘণ্টা ড্রাইভ করলেই একটা সম্পূর্ণ নতুন দেশ শুরু হয়ে যায়, আর সে দেশটা সৃষ্টিই হয়েছিল আমাদের শৈশবে। ঘরের পাশে সেই বিদেশের জন্ম যার হাতে, তাকে নিয়ে ছবি বানানোর সুযোগ পেলে কে না নিজেকে গর্বিত ভাববে বলুন তো?

শ্যাম বেনেগাল, গৌতম ঘোষ ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কী ভারতের পরিচালকরা আদৌ সুবিচার করতে পারবেন?

শ্যাম বেনেগাল: দেখুন, এটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই ডিসাইড করতে হবে। আমি এটা কখনও বলতে পারি না যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানানোর জন্য আমিই সবচেয়ে সেরা লোক। বরং আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশেও এই কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ লোকজন আছেন, তারাও নিশ্চয় সুযোগ পেলে বঙ্গবন্ধুর ওপর এক্সেলেন্ট ফিল্ম বানিয়ে দেখিয়ে দেবেন। কিন্তু ছবিটা শেষ পর্যন্ত কাকে দেওয়া উচিত, তা অনেক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। আমাদের উপমহাদেশে এগুলো সব সময়ই খুব বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর বিষয়, আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি আবারও বলছি, এই ছবি বানানোর জন্য আমিই সেরা এটা কখনও বলবো না, কিন্তু যখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আমি বলেছি আমি রাজি। ব্যস, এই পর্যন্ত।
গৌতম ঘোষ: এই প্রশ্নটা ওঠা তো খুবই সঙ্গত। বাংলাদেশে যারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন ভারতীয় পরিচালকরা সুবিচার করতে পারবেন কিনা, তাদের উদ্বেগের সঙ্গে আমিও কিছুটা একমত। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলাদেশের একটা আলাদা আবেগ থাকবে, এটা তো খুবই স্বাভাবিক। কাজেই আমার মনে হয়, এই ছবি পরিচালনার কাজে যদি একজন বাংলাদেশি পরিচালকও থাকেন তাহলে খুব ভালো হবে। যৌথ প্রযোজনার মতো যৌথ পরিচালনাতেই এ ধরনের ছবিতে সেরাটা বেরিয়ে আসতে পারে বলে আমার ধারণা। তবে পাশাপাশি এটাও আমি মনে করিয়ে দেবো, ভারতের গান্ধীকে নিয়ে সেরা ছবিটা কিন্ত কোনও ভারতীয় বানাননি, বিদেশি রিচার্ড অ্যাটেনবরোর বানানো গান্ধীটাই তার ওপরে শ্রেষ্ঠ কাজ!
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: যারা এই ধরনের প্রশ্ন তুলছেন, তাদের আমি সোজাসুজি বলবো—এগুলো আসলে ভাগাভাগির জিনিসই নয়। রবীন্দ্রনাথকে আমরা তো কোনোদিন ভাগ করিনি। তিনি যদি শুধু ভারতেরই হন তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কীভাবে রবীন্দ্রনাথের হতে পারে? বা নজরুলকেইবা কী করে ভারতের বলি, যখন তাকে বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে আমাদের কোনও অসুবিধা হয়নি? আমি তো বলবো গান-বাজনা-শিল্পী-গুণীজন বা মহান ব্যক্তিত্বরা কখনও কোনও দেশের একার সম্পত্তি হতে পারে না। বাংলাদেশিদের বরং আনন্দিত হওয়া উচিত একজন ভারতীয় এই সিনেমাটা বানাচ্ছেন এবং ভারত সরকার এমন একটা দারুণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
অতএব রাজি তিনজনেই। বাংলাদেশে মৃদুমন্দ উদ্বেগ-আশঙ্কাকে তাদের কেউ কেউ আমলে নিচ্ছেন, কেউ আবার গায়ে মাখতেই রাজি নন। কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে, শেষ পর্যন্ত এই তিনজনের মধ্যে কার কপালে শিকে ছিঁড়ছে, কে বানাচ্ছেন বহু প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু বায়োপিক।

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য