X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা প্রসঙ্গে ন্যান্‌সি: এই হয়রানির কোনও প্রতিকার নেই?

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:১৪আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৩১

ন্যান্‌সি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন কণ্ঠশিল্পী ন্যান্‌সি ও তার ছোট ভাই শাহরিয়ার আমান সানির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সানির স্ত্রী সামিউন্নাহার শানু বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নেত্রকোনা মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নেত্রকোনা সদর থানার সাতপাই এলাকার ন্যান্‌সির নিজ বাসা থেকে সানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আজ (৮ সেপ্টেম্বর) কথা বলেছেন এই কণ্ঠশিল্পী-
বাংলা ট্রিবিউন: ৬ সেপ্টেম্বর আপনার ছোট ভাই সানির বিরুদ্ধে একটা মামলা হলো। যার আসামি হিসেবে আপনার ও আপনার স্বামীর নামও আছে। আসলে বিষয়টি কী?
ন্যান্‌সি: গত ২৭ আগস্ট মেয়েকে (শানু) ডিভোর্স দিয়েছে সানি। এরপর মেয়ে গত পরশু (৬ সেপ্টেম্বর রাত) মামলা করেছে। তার অভিযোগ তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব?
সে যদি তার (ন্যান্‌সির ভাই) স্ত্রী থাকত তাহলে মামলার বিষয়টি আলাদা হতো। এখন তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর এভাবে মামলা করল! সে যখন বিচ্ছেদপত্র হাতে পেয়েছে তখন মামলা করেছে। সে তো জানেই বাংলাদেশের মেয়েদের সুপ্রিম পাওয়ার আছে। তাহলে নির্যাতনের সময় কেন মামলা করল না?
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এখন মামলা করার কারণ কী বলে মনে করেন?
ন্যান্‌সি: সেটা আমি জানি না! তার ভাষ্যটা এমন, গত ২৬ আগস্ট তাকে (শানু) মেরে ফেলতে চেয়েছে। পরে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চেয়েছে আমার ভাই। আমাকে ও আমার স্বামীকেও তারা যুক্ত করেছে! বুদ্ধি করে এটা করেছে। কারণ, সানির কিছু হলে কারা লড়াই করবে? নিশ্চয়ই আমি। তাই আমার নামও এনেছে। আর আমার জন্য কে এগিয়ে আসবে? আমার স্বামী। মানে সানিকে পুরোপুরি ধরতে আমাকে অকেজো করতে হবে। এই ছিল তার পরিকল্পনা। এছাড়াও আমাকে যদি, মানে একজন কণ্ঠশিল্পীকে যদি জড়ানো হয়, তাহলে মামলার খবরটি দ্রুত ছড়ায়। এ কারণেও আমাকে জড়াতে হতে পারে। আর মামলা হওয়ার পর খুব দ্রুতই খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার এক ভাই ও খালা স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তারাও তাদের প্রভাব খাটাতে চেয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: মামলার এজাহারে আপনার বিরুদ্ধে নির্যাতনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ।
ন্যান্‌সি: এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট, আমি তো নেত্রকোনায় নিয়মিত থাকি না। ঢাকা ও ময়মনসিংহে থাকি। ওদের সংসারে আমি ইন্ধন দেবো কীভাবে? অথচ আমার ও জায়েদের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। আমি নাকি শিখিয়ে দিয়েছি! বলেছি, তোর বউকে বল বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে! নইলে নির্যাতন করতে। তখন সে অসহায় মানুষের মতো বলেছে, আমার বাবা তোমাকে আর কত টাকা দেবে? মামলার কাগজে তার দাবি, বিগত সময়ও নাকি সে বাবার বাড়ি থেকে অনেক টাকা-গয়না এনে সানিকে দিয়েছে!
এবার টাকা দেয়নি বলে সানি তার ওপর চড়াও হয়েছে। তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছে! তখন সে সিনেমার কায়দায় এক ফাঁকে তার ভাইদের খবর দিয়েছে। এরপর তাই ভাইয়েরা এসে তাকে উদ্ধার করেছে। অদ্ভুত সব অভিযোগ।
মামলার বিবাদী সানি ও বাদী শানু, দুজনার বিয়ের ছবি বাংলা ট্রিবিউন: এটা তো গেল বাদী পক্ষের বক্তব্য। আপনাদের বক্তব্যটা তাহলে কী?
ন্যান্‌সি: এখানে বাস্তবতাটা একটু বিবেচনায় যদি নেন, তাহলে বুঝতে পারবেন ঘটনা কী? সে বলছে পাঁচ লাখ টাকা ও সহায়সম্পত্তির জন্য তাকে নির্যাতন করা হয়। আসলে মেয়ের পরিবার কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই শক্তিশালী নয়।
তারা ছয় ভাইবোন। তাদের বাবার জমিজমা বড়জোর ৪-৫ শতাংশ আছে। বাড়ির অবস্থাও ভালো নয়। আধাপাকা ছাপরা ঘর। তাই মেয়ে যে কথা বলছে, তার বাবার কাছ থেকে টাকা ও সম্পদ বারবার নেওয়া হয়েছে, এটা বানোয়াট। তারা তো সেটা দেওয়ার মতো অবস্থাতেই নেই। ওর বাবা পেশকার বা মুহরি ধরনের পেশায় যুক্ত। আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।
বাংলা ট্রিবিউন: তাদের বিয়েটা হলো কীভাবে?
ন্যান্‌সি: তারা দুজনই নেত্রকোনা সরকারি কলেজে গণিতে অনার্সে পড়ে। সহপাঠী। সেই থেকে তাদের প্রেম। দুজনই প্রচণ্ড আবেগী। মেয়ে বারবার ছুটে আসত। তখন আমরা বলি ঠিক আছে বিয়ে দিয়ে দিই। এরপর যা হয়, প্রেমের সময় অনেক কিছুই সুন্দর লাগে। পরে এক ছাদের নিচে এলে নানা ধরনের সমস্যা হয়। এটা তাদের দাম্পত্য বিষয়। এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। দেখুন, আমরা যদি টাকা আদায় বা মেয়ের সম্পত্তির দিকে তাকাতাম, তাহলে তো তার সঙ্গে সানির বিয়েই দিতাম না। কোনও কোটিপতি বা বিত্তবান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক করতাম। তাই না?
আমাদের কিন্তু নেত্রকোনা শহরেই দেড় একর জমি আছে। এর দাম কিন্তু অনেক। আমরা ভাইবোনরা উত্তরাধিকার সূত্রে এর মালিক। সুতরাং তাদের ৪/৫ শতক জমির দিকে আমাদের তাকানোর কোনও দরকার নেই।
বাংলা ট্রিবিউন: বিচ্ছেদ তো অনেক বড় বিষয়। মূল সমস্যা কখন থেকে শুরু হয়?
ন্যান্‌সি: ৬ বছর আগে আমার মা মারা যান। নেত্রকোনায় আমাদের যে সম্পত্তি আছে তা আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার হবে। এরপর মূলত আমি সিদ্ধান্ত নিই তা থেকে আমার অংশ বিক্রি করে টাকা নেবো। কারণ, আমি তো সেখানে থাকি না। এখন মায়ের নামে যে অংশ আছে ওখানের জমিটি আমরা তিন ভাইবোন বণ্টন করি। মানে কে কোন ভাগ নেবে, সেটা করলাম। এরপর সে সানিকে চাপ দিতে থাকে তার নামে যেন জমিটা (সানির অংশ) লিখে দেয়। এরপর সানির স্ত্রী কনসিভ করল। ইনিয়ে বিনিয়ে জমিটা পাওয়ার জন্য আরও চাপ দিতে থাকে। এছাড়াও নানা ঘটনাও আছে। অভ্যন্তরীণ ঘটনাও আছে। দেখা গেল, এমনভাবে সানিকে থ্রেট দিতে লাগল যে অনাগত সন্তানও মেরে ফেলবে। তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এমন হয়েছে, এর জের ধরে তার ভাইয়েরা এসে সানিকে মেরেছে। এ ঘটনাও আছে। যখন দেখা গেল কোনোভাবেই পরিস্থিতি ঠিক করা যাচ্ছে না, তখনই তাদের ডিভোর্স হয়।
ন্যান্‌সি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউন: সানি কি তাহলে এখন পুলিশ হেফাজতে আছে?

ন্যান্‌সি: সানিকে জেল-হাজতে রাখা হয়েছে। আজ তো শনিবার কোর্ট বসে না। বিশেষ কোর্ট বসে কিনা আমি জানি না। হয়তো তাকে জেলখানায় পাঠাবে।
বাংলা ট্রিবিউন: সানি গ্রেফতারের সময় কি আপনি নেত্রকোনার বাড়িতে ছিলেন?
ন্যান্‌সি: না, আমি তখন নেত্রকোনাতেই ছিলাম না। ইনফ্যাক্ট সেদিন কেউই বাড়িতে ছিল না। আমরা জানতামই না মামলার বিষয়টি। আজ ৮ তারিখ, সানির অনার্স পরীক্ষা ছিল। সে কারণে সানি গতকাল ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আমার বাসায় আসে। এরপর নেত্রকোনায় যায়। তার দুলাভাইসহ বাড়িতে গিয়েছিল। আমার বাড়ি ও বাবার বাড়ি পাশাপাশি জায়গায়। সে আমাদের বাড়িতে পৌঁছার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ হাজির হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
হয়তো বাদীপক্ষ জানত ৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা, তাই সানি আসবেই! আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল হয়তো।
বাংলা ট্রিবিউন: এখন আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে?
ন্যান্‌সি: আইনগতভাবেই এগুতে হবে। আর এই যে আমাকে তারা হয়রানি করছে, এর কী কোনও প্রতিকার নেই? মামলায় আমি আসামি, তার মানে আমাকে কোর্টে যেতে হবে, আইনজীবীর কাছে যেতে হবে, হাজিরা দিতে হবে- নানাভাবে এখন হয়রানি হবো। এছাড়া তো আর্থিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবে আমি চাই আগে আমার ভাই মামলা থেকে বের হয়ে আসুক। ভাই-বোন, সানি ও ন্যান্‌সি

* কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী