X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর মুক্তিবার্ষিকীতে মুখোমুখি দীপংকর দীপন

মাহমুদ মানজুর
০৬ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৩৯আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৮

‘ঢাকা অ্যাটাক’ শুটিংয়ের সময় ঢাকা অ্যাটাক। আজ (৬ অক্টোবর) ছবিটির মুক্তিবার্ষিকী! ২০১৭ সালের এই দিনে ১২২ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। দেশের সিনেমা হলগুলোতে টানা তিন মাস চলে রেকর্ড গড়েছে। ঢালিউডের সর্বকালের জনপ্রিয় গুটিকয় ছবির তালিকাতেও যোগ হলো ‌এর নাম। দেশ ও দেশের বাইরে চলছে এখনও। ছবিটির প্রথম মুক্তিবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে মুখ খুললেন নির্মাতা দীপংকর দীপন। দিলেন, লাভ আর লসের হিসাব। বললেন, গত এক বছরে না বলা অনেক কথা-
অর্থ সংকট
আমার শুটিং প্ল্যান ছিল ৪৭ দিনের। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু করি। আমাদের প্ল্যান ছিল জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারির মধ্যে শুটিং-সম্পাদনা-সেন্সর শেষ করে বছরের শেষ দিকে ছবিটি রিলিজ দেবো।
তিন লটে শুটিং ভাগ করি। প্রথম লট যথাসময়ে শুরু করলেও টার্গেট মতো শেষ করতে পারিনি। এরপর বান্দরবান গেলে আমাদের আর্থিক সংকট তৈরি হয়। শিল্পীদের সিডিউল ক্যানসেল করতে হয়। ২-৩ মাসের মধ্যে সংকট কাটিয়ে উঠি। কিন্তু শিল্পীদের সিডিউল মেলাতে পারছিলাম না। তার জন্য ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ওয়েট করি। স্বস্তির বিষয় ঐ বছরের ডিসেম্বরের ২ তারিখে আমরা শুটিং শেষ করতে পারি।
তারপর পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে গিয়েও পড়ি অর্থ সংকটে! সেটিও একটা সময় কাটিয়ে উঠি। এরপর সম্পাদনা শেষ করে সেন্সর পেয়ে ছবি মুক্তি দিতে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর চূড়ান্ত করি। মনে পড়ে, শেষের দিকে আমরা বেশ তাড়াহুড়ো করে কাজটি গুছিয়েছি।
প্রত্যাশার পারদ
প্রথম থেকেই  ছবিটি নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ ওপরে উঠতে থাকে। প্রথম লটের পর আমরা একটা ব্যাসিক টিজার তৈরি করি। এটা নিজেদের জন্যই করি। সেটি যখন নিজেরা দেখলাম এবং অন্যদেরও দেখালাম- বেশ উৎসাহ পাচ্ছিলাম। এর শুটিং শেষে যখন পর্যায়ক্রমে টিজার, গান, ট্রেলার প্রকাশ শুরু করি- দারুণ সাড়া পাই প্রতিটি স্তর থেকে। ফলে ছবিটি তৈরির সময় সাময়িক আর্থিক সংকট আর শিল্পীদের সিডিউল জটিলতা ছাড়া আমরা প্রতিটি মানুষ বেশ কনফিডেন্ট ছিলাম ছবিটি নিয়ে। মানে এই ছবিটি দেখবে না মানুষ- এমন কোনও দ্বিধা আমাদের মধ্যে জন্মায়নি একবারও।
নতুন ছবির লোকেশন খুঁজছেন দীপন প্রকাশের পর
একটি সিনেমা মুক্তির পর সাধারণত যা হয়- শুক্রবার একটু ভালো, শনিবার একটু খারাপ, রবিবার আরেকটু খারাপ, বাকিটা ইতিহাস! মানে মানুষ আর হলমুখো হয় না। আমাদেরে বেলায় সেটা উল্টো হলো। শুক্রবার খারাপ, শনিবার একটু ভালো, রবিবার আরেকটু ভালো। এরপর টানা তিন মাস সারা বাংলাদেশের হলে ঘুরেছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। দেশ-বিদেশে ঘুরছে এখনও।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রথম ছবিতেই ছক্কা মেরেছেন, প্রতিক্রিয়া কেমন?
দীপংকর দীপন: প্রথম কথা হচ্ছে সত্যি সত্যি একটা গুড স্টার্টিং পেয়েছি আমরা। একজন নতুন নির্মাতার জন্য এটা সৌভাগ্যের প্রতীক। কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদেরে সিনেমার অবস্থা বেশ নাজুক, অন্তত এই সময়টাতে! আমার তো এখনও মনে হয়- আরও আগে থেকে যদি সিনেমার কাজ শুরু করতাম তাহলে ভালো হতো।
বাংলা ট্রিবিউন: কত আগে! কেন এমনটা মনে হলো?
দীপংকর দীপন: দশ বছর আগে। পাঁচ বছর আগেও হতে পারতো। কারণ, আমরা এমন একটা সময়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ রিলিজ দিয়েছি যখন সারা দুনিয়াজুড়েই সিনেমার একটা ভাঙচুর চলছে। এই ভাঙচুরটাকে আমি পজেটিভ অর্থেই দেখছি। দরকার ছিল। তবে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে মনে হচ্ছে, নিজের অভিষেকটা আরও আগে অথবা আরও পরে হলেই স্ট্যাবল একটা পরিবেশ পেতাম।
বাংলা ট্রিবিউন: একটু খুলে বলুন। ভাঙচুরটা ঠিক কোন দিকটায় চলছে। কারণ, সাদা চোখে তো দেখা যাচ্ছে- প্রায় স্থবির হয়ে আছে। অথবা ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজাগুলো।
দীপংকর দীপন: একই কথা আমিও বলছি। বন্ধ হওয়ার পরেই তো আরেকটা দরজা খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এটাই ভাঙচুর। খুব কষ্ট পেলাম যখন শুনলাম রাজশাহীর সর্বশেষ হল ‘উপহার’ বন্ধ হয়ে গেল। আবার এটাও তো ঠিক- একই সময়ে বিশ্বের বহু প্রেক্ষাগৃহ আমাদের সিনেমার জন্য উন্মুক্ত হলো। এরমধ্যে সারাদুনিয়ায় শুরু হলো ওয়েব সিরিজ কালচারসহ ডিজিটাল কনটেন্টের নানা দরজা। সব মিলিয়ে এখন আমরা একটা ভাঙচুরের মধ্য দিয়েই যাচ্ছি।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু এই ভাঙচুরের মধ্য দিয়েও প্রথম সিনেমাতেই ওভার বাউন্ডারি হাঁকালেন! এটা কিন্তু সচরাচর ঘটে না। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য দরকার নেই। প্রশ্ন হলো- শুরুতেই ছক্কা হাঁকানো ঢালিউড নির্মাতারা কেন থমকে যান। মানে, মাস যায় বছর গড়ায়- তাদের নতুন সিনেমার দেখা মেলে না।
দীপংকর দীপন: ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তির পরেও আমার মাথায় এই প্রশ্নটা ঘুরতো- অন্য সফল নির্মাতারা এভাবে চুপসে যায় কেন? প্রথমেই হিট মানে, একের পর এক সিনেমা বানানোর রাস্তা পরিষ্কার হওয়া। এটাও মনে হতো- শুরুতেই সফলতা পেয়ে তারা কি চলচ্চিত্রের প্রতি অবহেলা করছেন? এটা দূর থেকে মনে হতো। এবার নিজের বেলায় এসে গত একবছরে আমি জানতে পারলাম কারণটা। দেখলাম, নিজের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটতে চলেছে!
‘ঢাকা অ্যাটাক’ শুটিংয়ের সময় বাংলা ট্রিবিউন: তাই তো! এক বছর অতিক্রম হয়ে গেল। ঘোষণা একাধিকবার এলেও মাঠে গড়ায়নি একটি চলচ্চিত্রও! আপনার কথা বলছি।
দীপংকর দীপন: সেটাই। এখন আমি ফিল করতে পারি তারা প্রত্যেকে একটি ভালো সিনেমা বানানোর পর কেন এভাবে থমকে গেলেন। আমিও থমকে আছি এক বছর ধরে। কারণটা হচ্ছে, প্রথমেই সফলতা পেলে ঐ নির্মাতার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা বড় হয়ে যায়। কলিজা বড় হয়ে যায়। বড় বড় ছবির ডিজাইন করতে ইচ্ছে করে। এবং নিশ্চিত হয়ে যায়, ডিজাইনগুলো ওয়ার্ক করবেই। মূলত এই আত্মবিশ্বাসের কারণে থমকে যেতে হয়। আমার বেলায় অন্তত তাই ঘটছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আত্মবিশ্বাস থাকা তো ভালো। সেটা থমকে যাওয়ার কারণ হবে কেন!
দীপংকর দীপন: বলছি। ব্যপারটা হচ্ছে, শতকরা ৫ ভাগ ছবি আমাদের এখানে লাভের মুখ দেখে। মানে ১০০টা ছবি মুক্তি পেলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৫টি ছবি হয়তো টাকাটা ফেরত পায় কিংবা লাভ করে। আমি একটা ছবি বানিয়ে হিট করেছি। কিন্তু প্রযোজকরা এই এক-দুটি হিট ছবি দিয়ে আস্থা পান না। ফলে প্রথম হিটের পর কনফিডেন্ট নিয়ে আমি যখন বড় বড় বাজেটের কাজ নিয়ে এগুচ্ছি- তখন সেই মাপের প্রযোজক আমি পাচ্ছি না। আবার কম বাজেটেও আগ্রহ করছি না। মাঝে সময়টা স্রোতের মতো চলে যায়। আমারও তাই গেল।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু গেল ক’বছরের নজির থেকে জানা যায়, এ দেশে এখন সুপারহিট ছবির প্রযোজকরাও চালান ফিরে পান না! শতকরা যে ৫টি ছবি হিট হয়- সেটিও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ? তাহলে এই হিটের অর্থ কী?
দীপংকর দীপন: এই তো আসল পয়েন্টে এসেছেন। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র ব্ল্যাকহোল। গত এক বছরে আমাকে অনেক বড় বড় প্রযোজক অসহায়ের মতো বলেছেন- ভাই তুমি আমাকে ভালো ছবি বানিয়ে দিবা। দর্শকও হলে গিয়ে হুমড়ি খাবে। তোমার প্রতি এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। যা বাজেট চেয়েছে- সেটিতেও আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দিন শেষে টাকাটা আমি ফেরত পাবো তো?
বাংলা ট্রিবিউন: তবে কি এটাই নির্মম সত্যি ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় দুই ছবি ‘আয়নাবাজি’ আর ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বাণিজ্যিক বিচারে ফ্লপ ছবি? দুই ছবির প্রযোজকরা অন্তত তেমন বার্তাই দিয়েছেন।
দীপংকর দীপন: আমি ‘ঢাকা অ্যাটাক’কে বাণিজ্যিক বিবেচনায় ফ্লপ বলতে রাজি নই। মাত্র আড়াই কোটি বাজেটের একটি ছবি যখন ১০ কোটি টাকা সেল হয়, সেটাকে আপনি ফ্লপ বলবেন কীভাবে?
দীপংকর দীপন শুভঙ্করের ফাঁকি
গ্রস সেল থেকে নেট সেল, নেট সেল থেকে প্রডিউসারের আয়। এই অংকটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কারণ এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে।
গ্রস সেলের ৪৫ পারসেন্ট ধরা হয় নেট সেল। যেকোনও টিকিটের গায়ে খেয়াল করে দেখবেন- মোট মূল্যের ওপরে অনেকগুলো খাদ উল্লেখ করা। সেখানে ‘প্রবেশ মূল্য’ নামের যেটা আছে সেটাই হলো নেট সেল। এই নেট সেলের ৪৫ পারসেন্ট পায় প্রডিউসার। এতে করে দেখা যায়, ১০০ টাকার টিকিট বিক্রি থেকে হল ভেদে প্রযোজক পান ১৪ থেকে ২১ টাকা মাত্র! এইটুকুও যদি প্রযোজকরা পেত, তাতেও দেশের প্রযোজকরা বাঁচতো। কিন্তু এটার মধ্যেও রয়ে গেছে অনেক অনিয়ম আর দুর্নীতি। যা, সত্যিই ভাবা যায় না।
যেমন, আজকে মফস্বলের একটি হলের একটি শোতে কত টিকিট বিক্রি হলো- সেটার হিসাব সিনেমার প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পী কেউ জানতে পারবেন না। এটা জানার কোনও উপায়ও নেই। নির্ভর করতে হয় ঐ হলের মালিক অথবা ম্যানেজারের পাঠানো রিপোর্টের ওপর। তো সেই রিপোর্ট কতটা সঠিক- প্রশ্ন থেকে যায়। বিক্রি হলো এক হাজার টাকার টিকিট, অথচ আমাকে হিসাব দিলো ১০০ টাকার, কী করবেন আপনি?
ফলে একটি সিনেমার আসল গ্রস সেল কত- সেই সত্য আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না। এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ই-টিকিটিং নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আসল চিত্র পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে এমজি (মানি গ্যারান্টি) একটা ভালো উপায়। তবে এখানে বেশিরভাগ ছবি সেল হয় শেয়ারে। যেখানে গ্রস সেলের হিসাব মূলত শুভঙ্করের ফাঁকিতে ঢেকে থাকে।
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এক বছর শেষে সুপারহিট ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বাণিজ্যিক চিত্রটা কী দাঁড়ালো?
দীপংকর দীপন: একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিই। কারণ, এক কথায় এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। কাকরাইল থেকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রযোজকরা পেয়েছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। এখন ভাবুন, একটি সিনেমার টিকিট বিক্রির পাঁচ ভাগের এক ভাগ (গড়ে ১০০ টাকায় ২০ টাকা) যদি হয় দুই কোটি টাকা- তাহলে গ্রস সেল কত হলো ছবিটার? মানে প্রায় ১০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। যদি একটি সিনেমার গ্রস সেল ১০ কোটি টাকা হয়- সেটাকে আপনি লস কোন সূত্রে বলবেন? আমি তো ১৫ কোটি টাকার সিনেমা বানাইনি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার সিনেমার বাজেট কত? দুই কোটি নিশ্চয়ই নয়!
দীপংকর দীপন: দুই কোটি তো হল থেকে পেয়েছে। এরমধ্যে আমাদের সিনেমায় অনেকগুলো স্পন্সরও ছিল। সেখান থেকে ৫০ লাখের মতো এসেছে। এরপর ইন্টারন্যাশনাল ডিসট্রিবিউশন থেকেও এসেছে। ডিজিটাল কনটেন্ট থেকেও এসেছে। সব মিলিয়ে প্রযোজকের ঘরে আড়াই থেকে পৌনে তিন কোটি টাকা আসে। ডিরেক্টর হিসেবে এখানে লস দেখি না আমি।
হিসাবে গণ্ডগোল
আমি এই ছবিতে একটা লেভেল পর্যন্ত ২ কোটি ৩০-৩৫ লাখ টাকা বাজেট করেছিলাম। কিন্তু এরসাথে কিছু বাড়তি খরচ হয়েছিল। হিসাবে গণ্ডগোল হয়ে যা হয়। যেটাকে সিনেমার মূল বাজেটের সঙ্গে যোগ করা ঠিক, আবার বেঠিকও।
যেমন, মালয়েশিয়ার শুটের বিষয়টা। প্রাথমিক পরিকল্পনায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো না আমাদের। এটা চিত্রনাট্যের বাইরের পার্ট ছিল। সেখানে শুট করেছিলাম এই ভরসায়- সেখানকার সব খরচ বহন করবে একটি প্রতিষ্ঠান। পরে সেই পুরো খরচটা আমাদেরকেই দিতে হয়েছিল। এরপর এই ছবির প্রমোশনের জন্য নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে ইউরোপ ট্যুর করা হলো। সেখানেও ভালো পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছিল। ওটাও ছিল মূল বাজেটের বাইরে।
কিন্তু সিনেমার অন্যতম প্রযোজক স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া বলছে ছবিটি লস! এর কারণ এই ছবিটা মূলত ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকজন মানুষ বেশ কয়েকভাবে টাকা খরচ করেছে। যেমন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থ্রি হুইলারস দুই বছর ধরে এই ছবির জন্য কাজ করেছে। এটা বিনিয়োগ। কিন্তু এসব তো ধরা হয়নি।
এটা আসলে আমাদের সবার প্রথম ছবি। এরজন্য আমাদের অনেক ত্যাগ আছে। এই ত্যাগ যেমন পুলিশ অফিসার সানী সানোয়ারের, এই ত্যাগ স্প্ল্যাশের আছে, এই ত্যাগ থ্রি হুইলারের আছে। ফলে মূল বাজেটের সঙ্গে অন্যসব যোগ করে এই ছবির লাভ-লস খোঁজা ঠিক হবে না।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু ১০ কোটি সেল করে আড়াই কোটি যদি প্রযোজক পায়- সেটা কেমন বিচার?
দীপংকর দীপন: প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে এটা আমাদের প্রথম ছবি। যার কারণে এই ফাঁকি বের করে আনতে পারিনি। তবে কাকরাইলের বিপণন সিস্টেমটাকে আমাদের কাছে অনেক জটিল বলে মনে হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের পরিবেশক অভি কথাচিত্রের কোনও দায় আছে কি?
দীপংকর দীপন: না। আমরা আসলে পরিবেশককে সরাসরি এর দায় দিতে চাই না। কারণ, তারা পুরো হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছে। বাট পুরো কাকরাইলের বিপণন সিস্টেম এত বেশি জটিল আর অন্ধকার- সেখান থেকে প্রকৃত চেহারা বের করা মুশকিল। যতদিন এই প্রক্রিয়া সহজ, স্বচ্ছ না হবে, প্রযুক্তিনির্ভর না হবে- ততদিন পর্যন্ত সত্যিকারের প্রডিউসাররা এখানে আসবেন না। নির্মাতা হিসেবে একটা ছবি হিট দিয়ে পরের ছবির জন্য বছরের পর বছর বসে থাকতে হবে আমাদের।
বাংলা ট্রিবিউন: এ জন্যই কি গেল এক বছর এগুতে পারছেন না?
দীপংকর দীপন: এটাই যে একমাত্র কারণ তা না। আমি বসে আছি আরও কিছু কারণে। এটা নির্বাচনের বছর। যেহেতু অনেক বড় বড় প্রজেক্টের ডিজাইন করেছি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা দরকার। সে জন্য নির্বাচনের পরের সময়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। তবে এটাও ঠিক বাস্তবতার খাতিরে এখন আমি অনেক লো বাজেটের ছবির পরিকল্পনাও করছি।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ শুটিংয়ের সময় মুক্তিবার্ষিকীতে ম্যাসেজ
আমার প্রথম ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ছবিটির কারণেই এখন আমি আরও বড় বড় কাজ করার স্বপ্ন দেখছি। সাহস পেয়েছি। তবে একটা বিষয় দর্শকদের বলতে চাই, একটা উদাহরণের মাধ্যমে। ‘ঢাকা অ্যাটাকে’র একটা এন্ড সং প্ল্যান করেছিলাম। টাকা দিয়েছি কলকাতার মিউজিক ডিরক্টের অরিন্দমকে। সে গানটি শেষ পর্যন্ত আনিনি। কারণ ওর লিরিক পছন্দ হয়নি। কিন্তু আপস করিনি। টাকাও ফেরত চাইনি। পরে আরেকজনকে দিয়ে আরেকটা গান বানিয়েছি। এই যে আপস না করার বিষয়টা- এখনও চলছে।
আমি এরমধ্যে দুটো কনফার্ম হওয়া ছবি ছেড়েছি। কনটেন্টের সঙ্গে আপস করবো না বলে। আর যাই করি- আপস করবো না। ছোট হোক, বড় হোক- সিনেমা করবো। তবে আপস নয়। কারণ আমি এরমধ্যে নিজেকে চিনেছি এবং দর্শকদেরও চিনেছি। আমার আর দ্বিধা নেই।
বাংলা ট্রিবিউন: টিম ‘ঢাকা অ্যাটাক’কে মুক্তিবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। পুরো জার্নিতে নির্মাতা হিসেবে কোনও অভাব বোধ তৈরি হয়েছে?
দীপংকর দীপন: সিনেমা তৈরির জন্য পূর্ণাঙ্গ একটা কাঠামো দরকার। প্রডাকশন বয় থেকে ডিসট্রিবিউশন পর্যন্ত। বড় ক্যানভাস এটা। একজন ডিরেক্টর একা ফাইট দিলে হবে না। একটা কমপ্লিট টিম ছাড়া কখনও ভালো সিনেমা সম্ভব না। আমার দেশে যেটার বড় অভাব।
বাংলা ট্রিবিউন: সেই অভাব দূর করার কোনও উদ্যোগ নেবেন নিশ্চয়ই। তবে শেষ জানতে চাওয়া, প্রযোজক-পরিচালক-চিত্রনাট্যকার মিলিয়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ কিন্তু দারুণ, তরুণ ও সফল একটা টিমের বার্তা দিয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রকে। কিন্তু সেটির প্রতিধ্বনি আর মিলছে না। কেন!
দীপংকর দীপন: দেখুন, আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের জায়গাটা কিন্তু শেষ হয়নি। হয়তো ‘ঢাকা অ্যাটাকে’র পর দ্রুত নতুন কিছু করতে পারিনি আমরা। তবে মাঠে যদি আমরা যে যার কাজ নিয়ে থাকি- টিমওয়ার্ক আবারও হবে। দল হিসেবে আমরা অসাধারণ ছিলাম, সেটা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’