X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই মেকআপম্যানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হচ্ছে

ওয়ালিউল বিশ্বাস
১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৪৩আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:২৩

ভিক্ষাবৃত্তি করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপম্যান কাজী হারুন। ছবি- সংগৃহীত

হাত পেতে ভিক্ষা নেওয়া এক বৃদ্ধের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার পরিচয় রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো।
ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র মেকআপম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবিতে কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নাম কাজী হারুন।

স্ট্রোক করার পর এক পা অসাড় হয়ে যায় ও বাকশক্তি হারান। এরপর একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন তিনি।

জানা যায়, কাজী হারুনের বিষয়টি নিয়ে বেশ আগে থেকেই অবগত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র মেকআপম্যান সমিতি। বেশ কয়েকবার তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলামের।

এমনকি সমিতির পক্ষ থেকে কাজী হারুনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

বিষয়টি নিয়ে সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাজী হারুন ও আবদুর রহমান নামের আমাদের সিনিয়র শিল্পী গুরুতর অসুস্থ। তাদের দুজনের স্ট্রোক হয়েছিল। ফলে দুজনই প্রায় পঙ্গু। এরমধ্যে কাজী হারুন সাহেব ভিক্ষা করছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দুঃখের। গত সপ্তাহে এ দুজনের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনের কাজ শুরু করি। এটা আসলে ভুক্তভোগীদের তরফ থেকে করলে অনেক কাগজ ও সুপারিশ লাগে। গতকাল (১৩ অক্টোবর) চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতি থেকে তাদের জন্য সুপারিশ সংগ্রহ করেছি। চলতি সপ্তাহের মধ্যে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করব।’

জানা যায়, মূলত একজন প্রযোজকের পরামর্শে এ উদ্যোগটি নেয় ক্যামেরাম্যান সমিতি। ‘আমরা এর আগে বেশ কয়েকবার কাজী হারুন সাহেবকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এগুলো তো যথেষ্ট নয়। এছাড়াও অন্য সমস্যা আছে। কিছুদিন আগে এক প্রযোজক আমাকে বলেন, কত মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন, তাহলে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই দুজন কেন পাবেন না? তিনি আমাকে আরও বলেন, আপনি উদ্যোগ নেন, আমরা সব সমিতি তার জন্য সুপারিশ করব। কাজী হারুনের মতো আবদুর রহমানও (মনের মানুষ ও নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ) জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন’- বললেন শামসুল ইসলাম।

গত রোজার ঈদে কাজী হারুনকে বেশ কিছু সহায়তা করেছিল মেকআপম্যান সমিতি। সে সময় থেকে প্রতিমাসে ৩ হাজার করে টাকা ওষুধ কেনার জন্য দেয় সমিতি।
তবে অভিযোগ আছে, হারুনের পরিবারের সদস্যরা তার ঠিকমতো চিকিৎসা না করে ওষুধের টাকা সরিয়ে ফেলার।

এদিকে কাজী হারুনের অসুস্থতা সম্পর্কে তার স্ত্রী মহুয়া আকতার বলেন, ‘২০০৯ সালে গাজীপুরের হোতাপাড়া থেকে একটি সিনেমার শুটিং শেষ করে বাড়ি ফেরেন। তারপর বাথরুমে যাওয়ার পর আমরা দেখি তিনি আর বের হচ্ছেন না। উঁকি দিয়ে দেখি তিনি নিচে পড়ে আছেন। তাড়াতাড়ি আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। প্রায় তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। বাড়িতে যে জমানো টাকা ছিল, সব খরচ হয় হাসপাতালে। এখনো তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। শরীরের ডান পাশটা প্রায় কাজ করে না বললেই চলে। এছাড়া মেয়ের বিয়ের সময় জাতীয় পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্ত সোনার মেডেল বিক্রি করে দিতে হয়।’

তিনি আরও জানান, তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ঘরে আর কোনও টাকা অবশিষ্ট ছিল না। বাড়ি ভাড়া দিতে পারছিলে না, ঘরে খাবার নাই। এরই মধ্যে পাশের এক বাড়িতে কাজ করে কিছু খাবার সংগ্রহ করেন মহুয়া। একদিন তিনি অসুস্থ হলে খুব খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। তখন হারুনকে ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুই যখন করতে পারেন না, যান ভিক্ষা করেন।’
এর এক মাস পর ভিক্ষা করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে হারুন ফিরে আসেন। এরপর থেকে নিয়মিত ভিক্ষা করছেন তিনি।

তবে অন্য কয়েকজন মেকআপম্যানের কাছে জানা যায়, কাজী হারুনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা মাদকাসক্ত।
এমনকি জোর করে হারুনকে দিয়ে ভিক্ষা করানোরও অভিযোগ আছে।
তথ্যটি দেন মানিক নামের এক মেকআপম্যান। বিষয়টির সঙ্গে বেশ কয়েকজন মেকআপম্যান একমত পোষণ করেন। মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেখুন, তার দুই ছেলে। দুইজন মানুষ শ্রমিকের কাজ করলেও তো বৃদ্ধ বাবার ভাতের অভাব হয় না। আর সমিতি থেকে তো আমরা ওষুধের টাকা দিতামই। আসলে হারুন সাহেব কথা বলতে পারেন না। তাকে একপ্রকার জোর করে ভিক্ষা করানো হয়।’

মেকআপম্যান সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘গত রোজার ঈদে আমি হারুন সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম। হাতে টাকা দিলে এটা অন্যভাবে খরচ করা হয় দেখে একটা ফার্মেসিতে চুক্তি করি। তারা নিয়মিত ৩ হাজার টাকার ওষুধ দিতো। কিন্তু পরে দেখি সেই ওষুধ নিয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করা হয়। কারণ, তাদের পুরো পরিবারই মাদকে আসক্ত। এরপর সে টাকাটা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি। এমনকি প্রতিদিন হারুন সাহেব মিনিমাম ৩শ টাকা না আনলে তাকে হেনস্থা করাও হয়। তবে আমরা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতাম। হারুন সাহেবের এক চাচাতো ভাই মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। তিনি আমাদের পরবর্তী সময়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাজী হারুনের আর্থিক সহায়তা করার আবেদনের সব কাগজ তিনিই তৈরি করে দিয়েছেন।’
তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘আমরা চাই একজন শিল্পীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন। তাই কাজী হারুন ও আবদুর রহমানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে। তবে তাদের টাকাটাও যেন সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগে সেদিকটাও তিনি যেন দেখেন।’

/এম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা