মৃত্যুর টানা এক সপ্তাহ পর আজ, শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজে ঢাকায় পৌঁছেছে নন্দিত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের মরদেহ।
ব্যাংকক থেকে ছেড়ে আসা মরদেহ বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। খবরটি নিশ্চিত করেন বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল।
দোদুল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আব্বার মরদেহ সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে বিমানবন্দর পৌঁছেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা আদাবরের বাসায় যাবো।’
আরও জানান, আদাবরে কিছুক্ষণ রাখার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে। সেখান থেকে কাল, শনিবার সকাল ১১টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় শহীদ মিনারে।
এরপর আমজাদ হোসেনের মরদেহ এফডিসি ও চ্যানেল আই প্রাঙ্গণেও নেওয়া হবে। সেখান থেকে শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকাল নাগাদ মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে এই চলচ্চিত্রকারের জন্মস্থান জামালপুরে। সেখানেই সমাহিত হবেন আমজাদ হোসেন।
১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নির্মাতা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্রকারকে ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। এর আগে ১৮ নভেম্বর সকালে নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন আমজাদ হোসেন। পরে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৭৬ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নানা ধরনের কাজের জন্য সমাদৃত। একাধারে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে কাজ করছেন।
গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আমজাদ হোসেন ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ প্রভৃতি।
বিমানবন্দরের ছবি তুলেছেন সানজিদ খান প্রিন্স