X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ প্রযোজনার পক্ষে ফিরলেন নায়ক বাপ্পি, চাইলেন ক্ষমাও!

সুধাময় সরকার
১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৩আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৪

বাপ্পি চৌধুরী/ ছবি:মাকসুদুর রহমান অন্য অনেকের মতো বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন নায়ক বাপ্পি চৌধুরীও। প্রকাশ্য দিবালোকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন দেশীয় প্রযোজক আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে। কারণ, এ পর্যন্ত বেশিরভাগ যৌথ প্রযোজনার ছবি হয়েছে তারই প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে।
চলচ্চিত্রের সিংহভাগ শিল্পী কলাকুশলীর অবস্থানও ছিল বাপ্পির মতোই। ফলে মাঝে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর যৌথ প্রযোজনার পুরনো আইন ভেঙে তৈরি হলো নতুন আইন। যে আইনের ফলে যৌথ প্রযোজনায় নেমে এসেছে ভাটা। অন্যদিকে দেশীয় ছবি নির্মাণ ও সফলতার বিচারেও আসছে না তেমন কোনও ফল। সাফটা চুক্তির আওতায় দেশে নিয়মিতই ঢুকছে কলকাতার নতুন নতুন ছবি। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে, নায়ক বাপ্পি চৌধুরী বদলালেন নিজের পুরনো সিদ্ধান্ত। বিরোধী শিবির থেকে দাঁড়ালেন যৌথ প্রযোজনার পক্ষে! গতকাল মধ্যরাতে (১৯ জানুয়ারি) ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চাইলেন প্রযোজক আবদুল আজিজের কাছে প্রকাশ্য ক্ষমা।  
আবদুল আজিজ/ ছবি: সাজ্জাদ হোসেন যৌথ প্রযোজনার পক্ষে বাপ্পির এই হঠাৎ ফেরা প্রসঙ্গে তার যুক্তিটা এমন, ‘‘দেশে সিনেমা নির্মাণ কমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। প্রযোজকরা এখন ভয়ে ইনভেস্ট করছে না। এফডিসিতে নাকি সিনেমা বানানোর পরিবেশ নেই, সেখানে এখন একে অপরের পেছনে লেগে থাকে- এমন মন্তব্য অনেকের। অথচ ২০১৭ সালে রোজার ঈদে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নবাব’ ও ‘বস ২’ সিনেমা মুক্তির বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র পরিবার থেকে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে আমিও যোগ দিয়েছিলাম। বলা হয়েছিল, যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা বন্ধ হলে, আমাদের দেশের শিল্পীদের কাজ বৃদ্ধি পাবে, ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের চলচ্চিত্র, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। দেশের সিনেমার উন্নয়ন হবে- এ কথা ভেবে যোগ দিয়েছিলাম আন্দোলনে, দাঁড়িয়েছিলাম যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে। যে প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আমি আজ বাপ্পি চৌধুরী হয়েছি, যে মানুষটির জন্য আমি আজ নায়ক সেই আজিজ ভাইয়ের সাথে ঝগড়াও করেছি। যে মানুষটা আমার চলচ্চিত্রের সবচেয়ে কাছের ছিল তার থেকে দূরে সরে এলাম এই বিরোধিতার কারণে। কিন্তু এটা করে কী পেলাম আমি?’’
বাপ্পি চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনের কারণে সিনেমার অবস্থা কি উন্নত হয়েছে? সিনেমা নির্মাণ কি বেড়েছে? নতুন বছর শুরু হলো আমদানি করা বিদেশি ছবি মুক্তি দিয়ে। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি হলেও তো আমাদের দেশের অনেক কলাকুশলী ও নায়ক নায়িকা কাজের সুযোগ পেতো। কিন্তু এখন তো আমদানি করে নিয়মিত ছবি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। যে ছবিগুলোতে আমাদের কেউ কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। হিতে তো বিপরীতই হলো!’
আন্দোলনে বক্তব্য রাখছেন বাপ্পি চৌধুরী এ নায়ক প্রযোজক আবদুল আজিজের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘অথচ দেশের সিনেমার উন্নয়ন হোক এটা আজিজ ভাই সবসময় চেয়েছেন। তিনি একাই আমাদের সিনেমা ডিজিটালাইজেশনের পথ বদলে দিয়েছেন। সরি আজিজ ভাই, আপনাকে ভুল বোঝার জন্য। আবারও বলছি, আই অ্যাম সরি।’
২০১৭ সালের ১৮ জুন যৌথ প্রযোজনার নামে ‘প্রতারণা’ বন্ধের দাবি জানিয়ে ১৮ সংগঠনের ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার’-এর ব্যানারে রাস্তায় নামেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীরা। সেদিনের আন্দোলনে নিজের বক্তব্যে বর্তমান সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফারুক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘চলচ্চিত্র আমাদের কাছে পরিবারের মতো, পরিবার বাঁচানোর জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। এই পরিবারের মধ্যে অন্য দেশের পরিবার এসে আধিপত্য বিস্তার করবে, তা হবে না। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র মানুষের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। সেই চলচ্চিত্রে আজ ভিনদেশি দালালদের কালো থাবা। আমাদের সেন্সর বোর্ড আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের কথা না ভেবে আর কারো কথা ভাবলে আমরা মানব না। অনেক সহ্য করেছি, আর না। এবার আমরা রুখে দাঁড়াব।’
একই দিন (১৮ জুন, ২০১৭) আন্দোলনের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বাপ্পি চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘কারও বিপক্ষে বা কোনও মহল-ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষ করে নয়, এ আন্দোলন দেশের সংস্কৃতি ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রক্ষার আন্দোলন। যারা এ আন্দোলনের পক্ষে নন তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ করে তুলবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত কষ্টের ইন্ডাস্ট্রি আমাদের। আমরা স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন শুটিং হবে, আনন্দ উৎসবে ছবি মুক্তি পাবে। কিন্তু হচ্ছেটা কী? রোজার দিনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। দিনকে দিন দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে, ভিনদেশি ছবির বাজার বাড়ানো হচ্ছে। কৌশলে দেশীয় ছবিগুলোকে হল দেওয়া হচ্ছে না। ভিনদেশ থেকে আসা মানহীন ছবিগুলো হল পেয়ে যাচ্ছে শতাধিক। এভাবে চললে যারা চলচ্চিত্রে কাজ করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকি, তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।’
২০১৭ সালের ১৮ জুন বিএফডিসি’র মূল ফটকের সামনে আন্দোলনরত শিল্পী-কুশলীরা সেদিন জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রসঙ্গে বাপ্পির বক্তব্যটি ছিল এমন, ‌‘অনেকেই বলছেন আমি জাজ থেকে এসেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি আমার পিতার মতো। তবে আমি কেন জাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি? এটা খু্বই অবাক করা এবং বিব্রতকর প্রশ্ন আমার জন্য। বাবার বিরুদ্ধে সন্তান কখনও আন্দোলন করতে পারে না। আমিই বা কেন করব। আমি এ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী তার কারণ আমি আমার দেশ ও দেশের চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি। এখানে আমি কাজ করে দুই বেলা ভাত খাই। জাজের হাত ধরেই আমি এখানে পা রেখেছি। জাজের কাছ থেকেই শিখেছি কাজের প্রতি, পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আজ যারা আমার পেটে লাথি মারতে চাইছে আমি তো তার হয়ে সাফাই গাইতে পারি না।’
এদিকে যৌথ প্রযোজনার পক্ষে বাপ্পি চৌধুরীর এভাবে হঠাৎ ফিরে আশাকে অনেকেই দেখছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হিসেবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রযোজক আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘শুধু বাপ্পিই না, এমন অনেকেই সরাসরি এবং ফোন করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, যারা ঐ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা আসলে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমিও আর মনে অভিমান রাখিনি। ক্ষমা করে দিয়েছি। এটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি। বিশেষ একজনের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আন্দোলন হয়েছিল। সেটা এখন সবার কাছে পরিষ্কার।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আবদুল আজিজ প্রযোজিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রথম ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় বাপ্পি চৌধুরী ও মাহিয়া মাহির। এরপর এই ব্যানার থেকে সর্বোচ্চ ৭টি ছবিতে অভিনয় করেন বাপ্পি।  সম্প্রতি এক ঘরোয়া আয়োজনে আবদুল আজিজের হাত বাপ্পির কাঁধে

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!