X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শোষক তুমি হও হুঁশিয়ার, চলো এবার সাবধানে’

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
০২ মার্চ ২০১৯, ১৪:০৯আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ১৬:১৮

চলছে উৎসব মঞ্চে গান পরিবেশনা ‘কোটি টাকা দিয়ে মানুষের হৃদয়ে নাম লেখা যায় না। আমি যখন দুনিয়াতে থাকবো না তখন মানুষ আমার নাম মুখে মুখে বলবে, এটাই আমার সম্পদ। আজকে যারা মন্ত্রী রয়েছেন তারা যখন পদ থেকে সরে যাবেন, তখন তাদের কথা কেউ বলবে না। আর আমি আবদুল করিমের কথা মানুষের মনে চিরদিন গাঁথা থাকবে।’
১৪তম লোক উৎসবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এভাবেই বাউল শাহ আবদুল করিমের বলে যাওয়া কথাগুলো নতুন করে শোনালেন তাঁর অন্যতম শিষ্য বাউল আব্দুর রহমান।
বাউল আব্দুর রহমান তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে যখন ঘুরে বেড়াতাম, কখনও পেটপুরে খেতে পারতাম না। কারণ তখন ঘরে ভাত খাওয়ার মতো চাল ছিলো না আমাদের। তখন তিনি (আবদুল করিম) সান্ত্বনা দিয়ে আমাদের বলতেন, কম খেলে আত্মার বল বাড়ে। তিনি একজন নিষ্ঠাবান সৎ মানুষ ছিলেন। এজন্য তিনি শাসক-শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পেরেছেন গানের মাধ্যমে। শাহ আবদুল করিম শোষকের সামনে তাদের উদ্দেশ্য করে গানে গানে বলেছেন- শোষক তুমি হও হুঁশিয়ার, চলো এবার সাবধানে, তুমি যে রক্ত শোষক, বিশ্বাসঘাতক, তোমাকে অনেকে চেনে।’
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে উজানধল গ্রামে শুক্রবার ও শনিবার (১ ও ২ মার্চ) দুই দিনব্যাপী শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব শুরু হয়েছে। বাউল সম্রাটের জীবন ও দর্শন লোকসমাজের ছড়িয়ে দিতে এ উৎসবের আয়োজন করেছে উজানধল গ্রামবাসী ও শাহ আবদুল করিম পরিষদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বাউলের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১ মার্চ রাত ৮টায় এই উৎসবের উদ্বোধন করেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম। পরে বাউল পুত্র শাহ নূর জালালের সভাপতিত্বে শাহ আব্দুল করিম স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ বাউল আপেল মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক,  উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রাজমনি সিংহ, সাংবাদিক আবু হানিফ চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, শাহ আবদুল করিম আমাদের দেশের গর্ব। তিনি দিরাইয়ের সীমানা ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছেন। উজানধল গ্রামের মাঠের ষাট শতক জায়গা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে শাহ আবদুল করিম স্মৃতিকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার জন্য। এটি সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা আশা করি অবিলম্বে সরকার এর নির্মাণ কাজ শুরু করবে। তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হবে। তাঁকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার জন্য আমরা কেবিনেটে প্রস্তাব পাঠিয়েছি এবং বিভিন্ন ফোরামে দাবি তুলে ধরছি।’
উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চ সভাপতির বক্তব্যে বাউল পুত্র শাহ নূর জালাল বলেন, ‘শাহ আবদুল করিমের জীবদ্দশায় ২০০৬ সাল থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়। এতে ভক্তবৃন্দের মিলনমেলা ঘটে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা এসে উৎসবে যোগ দেন। এ বছর নিজেদের উদ্যোগে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। নিজস্ব উদ্যোগে উৎসবের আয়োজন করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। এটি বন্ধ করতে পারি না, কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করিম ভক্তবৃন্দরা আসেন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। আমরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই উৎসব আয়োজনের দাবি জানাই।’
উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা ১৯১৬ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে ১ মার্চ জন্ম নেন বাউল শাহ আবদুল করিম। জীবদ্দশায় তিনি রচনা করেন আফতাব সঙ্গীত, গণসংগীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে ও শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র নামে বাউল গানের বই। কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা।
উৎসবে আগত দর্শকরা ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম ও ভালোবাসার পাশাপাশি শাহ আবদুল করিম গানে গানে কথা বলেছেন সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফকির লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহর দর্শন থেকে। তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মস্তান বকশের কাছ থেকে।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান এই বাউল কিংবদন্তি।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
মনে হয়নি দেশের বাইরে আছি: যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্থ 
মনে হয়নি দেশের বাইরে আছি: যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্থ 
কাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সিনেমা সমালোচনাকাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সম্প্রচারের দুই দশকে...
সম্প্রচারের দুই দশকে...
লোপার গানচিত্র ‘পহেলা বৈশাখ’
লোপার গানচিত্র ‘পহেলা বৈশাখ’
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!