কান চলচ্চিত্র উৎসবে হৃদয়কে নাড়া দেওয়ার পর অস্কার আর গোল্ডেন গ্লোবেও মনোনয়ন পায় লেবাননের ‘কেপারনম’। ছবিটির পরিচালক নাদিন লাবাকি এবার দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে গিয়ে বিচারকের আসনে বসবেন। কানের ৭২তম আসরের আঁ সার্তা রেগার্দ বিভাগের জুরি সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ইমেইলে আয়োজকরা খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
নাদিন লাবাকির হাত ধরে আরবি ভাষাভাষি দেশগুলোর প্রথম কোনও নারী নির্মাতার চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ও গোল্ডেন গ্লোবের বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। এ পর্যন্ত তিনটি ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি। সবই প্রদর্শিত হয়েছে কানে। এর সুবাদে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এসেছে তার মুঠোয়। অভিনেত্রী আর চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তিনি পরিচিত।
কান সৈকতেই নাদিন লাবাকির সেলুলয়েড যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘মনে পড়ে, ফিল্মের শিক্ষার্থী হিসেবে কানে নিয়মিত আসতাম। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন উৎসবের অভিজ্ঞতা নিতে দারুণ লাগতো। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। মনে হয় বুঝি গতকালের ঘটনা, অথচ ১৫ বছর হয়ে গেলো বুকভরা আশা নিয়ে উৎসবের সিনেফঁদাসোতে অংশগ্রহণের আবেদনপত্র পূরণ করেছিলাম। তখন হাত কাঁপছিল আমার।’
নাদিন লাবাকির কথায়, ‘আজ আমি আঁ সার্তা রেগার্দ বিভাগের জুরি প্রেসিডেন্ট হয়েছি। মনে হচ্ছে, জীবনের সাফল্য কখনও কখনও স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই বিভাগে নির্বাচিত ছবি দেখে তর্কবিতর্ক, আলোচনা ও নড়েচড়ে বসার পাশাপাশি অন্য শিল্পীদের কাজে অনুপ্রেরণা খোঁজার জন্য মুখিয়ে আছি।’
এ বছর যাদের ছবি আঁ সার্তা রেগার্দে নির্বাচিত হবে, তাদের উদ্দেশে নাদিন লাবাকি বলে রেখেছেন, ‘শৈশবে বেডরুমের জানালা দিয়ে একদৃষ্টিতে অনেকটা সময় তাকিয়ে পৃথিবী দেখতাম। ওই একই চোখ তাদের ছবিগুলো দেখতে উদগ্রীব হয়ে আছে!’
ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে অডিওভিজ্যুয়াল অধ্যয়নে স্নাতক সম্পন্ন করার পর বিজ্ঞাপনচিত্র ও মিউজিক ভিডিও বানিয়ে হাত পাকান নাদিন লাবাকি। এগুলোর পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৫ বছর আগে কান উৎসবের সিনেফঁদাসোতে অংশ নেন তিনি। ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ক্যারামেল’ প্রদর্শিত হয় ২০০৭ সালে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লেবানিজ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ভাবা হয় নাদিন লাবাকিকে। নারীর অবস্থা ও ধর্মীয় টানাপোড়েনকে ঘিরে তার বানানো ‘হোয়্যার ডু উই গো নাউ?’ ২০১১ সালে স্থান পায় আঁ সার্তা রেগার্দে।
গত বছর নাদিন লাবাকির তৃতীয় ছবি ‘কেপারনম’ কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নেয়। এতে বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ক্ষয়ে যাওয়া শৈশব, শরণার্থী জীবন ও সমাজের ফাটলগুলোর ওপর আলোকপাত করেন তিনি। ছবিটির সুবাদে তার হাতে ওঠে কানের জুরি প্রাইজ। পুরস্কার গ্রহণের সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিল সিরীয় শরণার্থী বালক জাইন আল রাফিয়া।
৭২তম কান উৎসবের উদ্বোধন হবে আগামী ১৪ মে। এর পরদিন শুরু হবে আঁ সার্তা রেগার্দ বিভাগের ছবির প্রদর্শনী। ১৫ মে সন্ধ্যায় নাদিন লাবাকিসহ অন্য বিচারকরা হাজির হবেন মঞ্চে। এ বিভাগের সমাপনী হবে ২৪ মে। এর পরদিন শেষ হবে উৎসব। এবারের প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান দু’বারের অস্কারজয়ী মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু। গত বছর কানে আঁ সার্তা রেগার্দ বিভাগে বিচারকদের প্রধান ছিলেন পুয়ের্তোরিকান অভিনেতা বেনিসিও দেল তোরো।