সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে যথাসময়েই শুরু হলো অভিনয় শিল্পীসংঘের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৯টা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। প্রথম ভোটার ছিলেন অভিনেতা ও সভাপতি প্রার্থী তুষার খান। টানা ১টা পর্যন্ত চলেছে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। এ সময় দেখা গেছে শিল্পকলা প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ। প্রার্থী আর ভোটারে গম গম করছে পুরো এলাকা। কেন্দ্রের সামনে কোনও ভোটার পা ফেলতেই শুরু হয়ে যায় তাকে নিয়ে প্রার্থীদের কাড়াকাড়ি! চলে মজার ছলে ভোট দেওয়ার অনুরোধ। আবার ভোট দেওয়া শেষে শুরু হয় সেই ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে জম্পেশ আড্ডা।
দুপুর ১টায় জুমার নামাজের বিরতিতে যাওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনার খাইরুল আলম সবুজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে সকাল থেকে। বিরতি শেষে ২টা থেকে আবারও শুরু হবে। বিকাল ৫টায় শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। আর ৬টা থেকে গণনা শুরু করবো। রাত ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হতে পারে। কারণ, এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হচ্ছে।’
কমিশনার আরও জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে দুপুরের পর ভোটারের সংখ্যা অনেক বাড়বে বলেও তিনি প্রত্যাশা করেন।
এদিকে এবারের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘এখানে লক্ষণীয় যে আমরা যারা নির্বাচন করছি তারা সবাই মিলে একই প্যান্ডেলে বসেছি। কারণ, নির্বাচন সবার। জিতবে ২১ জন, হারবে না কেউ—এটাই আমাদের স্লোগান।’
এদিকে এই নির্বাচনকে ঘিরে ২০ জুন রাত পর্যন্ত ছিল নানাবিধ শঙ্কা। ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচনের দিন (আজ, ২১ জুন) হতে পারে নতুন সংকট।
কারণ, ১৯ জুন সংঘের তিন সদস্য শেখ মো. এহসানুর রহমান, আব্দুল্লাহ রানা ও নূর মুহাম্মদ রাজ্য বাদী হয়ে ২১ জুনের নির্বাচন স্থগিতের আবেদন করেন দ্বিতীয় সহকারী আদালতে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মাদ শাফি এই আদেশ দিয়েছেন। নোটিশটি প্রেরণ করা হয়েছে এই নির্বাচনের কমিশনার অভিনেতা খাইরুল আলম সবুজ বরাবর।
তবে, ২০ জুন সন্ধ্যা নাগাদ সেই নোটিশ হাতে পাননি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনারসহ সংগঠনের একাধিক নেতা ও সদস্য। এ কারণে যথাসময়েই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভোটাদের নিয়ে কাড়াকাড়ির ভিডিও:
শিল্পীসংঘের সর্বশেষ তালিকা থেকে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৬শ’। মোট ৫২ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ভোটে নির্বাচিত হবেন ২১ জন।
এবার সভাপতি পদে লড়াই করছেন ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম, তুষার খান ও মিজানুর রহমান।
সহ-সভাপতির ৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। এরমধ্যে রয়েছেন আজাদ আবুল কালাম, আহসানুল হক মিনু, ইউজিন ভিনসেন্ট গোমেজ, ইকবাল বাবু, তানিয়া আহমেদ ও দিলু মজুমদার। সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান। দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন আশরাফ কবীর, আনিসুর রহমান মিলন, আমিনুল হক আমিন, রওনক হাসান ও সুমনা সোমা। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আগেই নির্বাচিত হয়ে আছেন লুৎফর রহমান জর্জ।
অর্থ-সম্পাদকের একটি পদের জন্য লড়ছেন দুজন। তারা হলেন নূর এ আলম (নয়ন) ও মাঈন উদ্দিন আহমেদ (কোহিনূর)।
দফতর সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন ৪ জন। তারা হলেন আরমান পারভেজ মুরাদ, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, গোলাম মাহমুদ ও মেরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সম্পাদকের ১টি পদের জন্য লড়ছেন ৩ জন। তারা হলেন স্বাগতা, পাভেল ইসলাম ও রাশেদ মামুন অপু।
আইন ও কল্যাণ সম্পাদকের ১টি পদের জন্য লড়ছেন শামীমা তুষ্টি, মম শিউলী (মমতাজ বেগম) ও শিরিন আলম। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন প্রাণ রায়, শফিউল আলম বাবু ও শহিদ আলমগীর। তথ্য প্রযুক্তি পদে মুলুক সিরাজ ও সুজাত শিমুল।
কার্যনির্বাহী ৭টি পদের জন্য লড়াই করছেন মোট ১৮ জন সদস্য। তারা হলেন—বন্যা মির্জা, রাজিব সালেহিন, জাকিয়া বারী মম, নুরুন জাহান বেগম, রেজাউল করিম সরকার, নাদিয়া আহমেদ, মাসুদ আলম তানভীর, মাহাদী হাসান পিয়াল, মুনিরা বেগম মেমী, ওয়াসিম হাওলাদার, জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মাহাবুবুর রহমান মোল্লা, সনি রহমান, শামস সুমন, আবদুর রাজ্জাক, সামসুন নাহার শিরিন ও সেলিম মাহবুব।
২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির শেষ নির্বাচন। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন শহীদুল আলম সাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান হাবিব নাসিম।
ছবি: ওয়ালিউল বিশ্বাস