করোনাকালে কতো কিছুই না আটকে গেল। যার মধ্যে অন্যতম নাটক-সিনেমার শুটিং ও সম্প্রচার। এরমধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও যে ঘটেনি তা নয়। অনেকেই ঘরবন্দি থেকেও শুটিং-সম্পাদনা-সম্প্রচার করেছেন ছোট ছোট নাটক, টিভিসি, সিরিজ বা সচেতনতার বার্তা।
তবে লকডাউনে বসে নির্মাণে তেমন আগ্রহ দেখাননি সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান। তার ভাষ্যে, ‘লকডাউনে শুয়ে-বসে প্রচুর নাটক-সিনেমা দেখেছি, বই পড়েছি এবং বাঁচার প্ল্যান করেছি। শুটিংটাই শুধু করিনি। জোড়াতালি দিয়ে কাজ করার অভ্যাস এখনও গড়তে পারিনি। প্রপার ডেডিকেশন ছাড়া কাজ করতে পারি না। তাই লকডাউনে কিছু করার কল্পনাও করিনি।’
এই কল্পনাহীনতার আরেকটি কারণ আছে। যার জন্য লকডাউনজুড়ে অস্বস্তিতে ভুগেছেন আরিয়ান। কারণ, তার করা একটি ভালো প্রজেক্ট মাঝপথে আটকে গেছে লকডাউনের কারণে। নিজের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ৭৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই টেলিছবির নাম ‘শহর ছেড়ে পরানপুর’। লাইভ টেকনোলজির প্রযোজনায় নির্মিত প্রজেক্টের প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, ইয়াশ রোহান ও তাসনিয়া ফারিন।
প্রজেক্টটি আটকে যাওয়ার ঘটনাটি আরিয়ান ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘লাইভের প্রযোজনায় বেশ বড় প্রজেক্ট এটি। মার্চ মাসের শুরুর দিকে টানা পাঁচ দিন গাজীপুরে আমরা শুট করি। বাকি থাকে ঢাকার কিছু দৃশ্য। একদিন করলেই হয়ে যায়। কিন্তু সেই দিনটি আর বের হচ্ছিলো না, নানা কারণে। এরমধ্যে ইয়াশ রোহান সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ফেলে দিলো দাড়ি! আবার তিশা আপুর শিডিউল মেলাতে পারছি না। এই করে করে অবশেষে মার্চের শেষদিকে এসে কোনও একদিন কাজটা শেষ করে ফেলি! নিশ্চিত হই, ঈদের চমক হিসেবে কাজটি মানুষকে দেখাতে পারছি!’
শুটিং শেষ করে আরিয়ান প্রচারের বিষয়ে নিশ্চিত হলেও ‘শহর ছেড়ে পরানপুর’ নামের কোনও নাটক বা টেলিছবি গেল ঈদে দর্শকরা দেখতে পারেননি।
আরিয়ান বলেন, ‘দুঃখটা সেখানেই। শুটিং শেষ করার দুদিনের মাথায় শহরে নামলো অঘোষিত লকডাউন! শুটিং শেষ করেও আটকে গেল সম্পাদনার কাজ। তাছাড়া সম্পাদনা তো একটা নাটকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঙ্গে গান তৈরি, আবহসংগীত- কতো কী! এটা ঠিক, চাইলে তড়িঘড়ি করে কাজটা নামানো যেতো। তাতে আখেরে কী এমন লাভ হতো! উল্টো আরও বড় বিপদে পড়তে বা ফেলতে পারতাম। তাই কাজটা আর শেষ করতে পারিনি।’
সেই ছবিটির সম্পাদনার কাজ গতকাল (৪ জুন) থেকে শুরু করেছেন আরিয়ান। কারণ, লকডাউন শিথিল এখন। সামনে হাতছানি দিচ্ছে আরেকটি ঈদ। লাইভ টেকনোলজি চাইছে, কোরবানির সেরা চমক হিসেবে ছবিটি তারা প্রকাশ করতে টিভি, ইউটিউব হয়ে বিভিন্ন ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটে।
‘শহর ছেড়ে পরানপুর’-এর টপিক প্রসঙ্গে আরিয়ান জানান, এটি মূলত ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। যে প্রেম প্রেমিক-প্রেমিকাকে টেনে নিয়ে যায় শহর থেকে গ্রামে।
আরিয়ানের ভাষ্যে, ‘এই ছবিটি করেছি আমার জনপ্রিয় হওয়া কাজগুলোর আদলে। মানে জনপ্রিয় ধারার কাজ এটি। ঝকঝকে পর্দা, গল্পের পুরোটাজুড়ে প্রেম, থাকছে কিছু বিরহের আবহ, রয়েছে সোমেশ্বর অলির লেখা দুটি গানও। শিল্পীরাও আনন্দ নিয়ে কাজটি করেছেন। ঈদ উৎসবে সাধারণ দর্শকদের জন্য এটা ভালো একটি উপহার হতে পারে।’
লকডাউনের পর মিজানুর রহমান আরিয়ান এখন ব্যস্ত সম্পাদনার টেবিলে। কিন্তু নতুন কাজের শুটিংয়ে মাঠে নামছেন কবে? আরিয়ান জানান, সময়টাকে আরেকটু পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। বললেন, ‘বাইরে গিয়ে কাজ করার মানে কিন্তু আমি একা না। এখনও শুটিং করার মানে অন্তত ৫০জন মানুষকে বিপদে টেনে নেওয়া। প্রতিটা মানুষের পরিবারকেও সেই বিপদে ফেলা। ফলে হাতে অনেকগুলো চিত্রনাট্য-শিডিউল চূড়ান্ত থাকলেও, ঠিক মনস্থির করতে পারছি না কবে আসলে মাঠে নামবো। কারণ, চারপাশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা তো বাড়ছেই। এটাও ঠিক, খেতেও তো হচ্ছে! তার আগে সম্পাদনার কাজটি শেষ করতে চাই নিরাপদে।’
গেল ঈদে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘উপহার’ নাটকটি বেশ আলোচনায় আসে। গল্পনির্ভর এই নাটকে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, সমু চৌধুরী, আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। সিএমভি’র প্রযোজনায় নাটকটি প্রকাশের পর গেল এক সপ্তাহে অতিক্রম করেছে ২৩ লাখ ভিউ’র ঘর। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিলছে সমালোচক প্রশংসা।
উপহার: