X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন গানে ‘একুশ’ উধাও

মাহমুদ মানজুর
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০০:০৫আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৩:৪৬

গানের বাজারে দুই ঈদ আর ভালোবাসা দিবস নিয়ে উচ্ছ্বাস বা আয়োজনের কোনও ঘাটতি নেই। সদ্য বিদায়ী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অডিও বাজারে প্রকাশ পেয়েছে শতাধিক অ্যালবাম, অনেক ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও। যার সবটাই প্রেম-ভালোবাসকেন্দ্রিক গানে সাজানো। অথচ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গানের বাজারে প্রকাশ পায়নি একটি উল্লেখযোগ্য গান কিংবা অ্যালবামও! নতুন গান থেকে উধাও হয়ে গেছে মহান ভাষা আন্দোলন ‘একুশ’।

নাগরিক দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির লাইন তবে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি নতুন গান প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও এটাই হলো নিদারুণ বাস্তবতা- অমর একুশে ফেব্রুয়ারি গানবাজারে এখন প্রায় অনুপস্থিত। তাই তো নতুন করে ভাষা কিংবা একুশের গান প্রকাশ না পেলেও বিভিন্ন কনসার্টে, অনুষ্ঠানে, রেডিও-টেলিভিশনে আজও ঘুরেফিরে দিনব্যাপী বাজবে বাংলা ভাষা কিংবা রক্তস্নাত একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে রচিত পুরনো গানগুলোই। যার মধ্যে এখনও অন্যতম গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর লেখা আর আলতাফ মাহমুদের সুর করা এ গানটি মূলত একুশের প্রধান গান।

যুগ যুগ ধরে বাঙালির হৃদয়ে ভাষা আন্দোলন আর একুশের চেতনাকে জাগ্রত করে রেখেছে এমন আরও অনেক একুশের গান, ভাষার গান রয়েছে। একুশ-পরবর্তী ভাষাকেন্দ্রিক অনেক গান রচিত হয়েছে, যেগুলো একুশের চেতনা এবং ভাষার প্রতি মমত্ববোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রায় সব শিল্পীই ভাষার গান কণ্ঠে তুলেছেন। যেগুলো অলঙ্কার হয়ে আছে বাংলা গানের ভাণ্ডারে।

নিজের কথা ও সুরে আবদুল লতিফ গেয়েছেন ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। ফজল-এ-খোদার কথায় আর নিজের সুরে মোহাম্মদ আবদুল জব্বার গেয়েছেন ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। নজরুল ইসলাম বাবুর কথা ও আলাউদ্দিন আলীর সুরে সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছেন ‘মায়ের শেখানো ভাষা’ এবং রফিকুল আলম গেয়েছেন ‘এক তারাতে সুর বাইন্ধা’। জাহিদুল হকের কথায় এবং অজিত রায়ের সুরে শাম্মী আক্তার গেয়েছেন ‘বর্ণমালায় গড়েছি বাংলাদেশ’। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কথা ও সমর দাসের সুরে শাকিলা জাফর গেয়েছেন ‘একুশ তুমি’, শাম্মী আক্তার গেয়েছেন ‘বরকত সালামের রক্ত’। জসিম রায়হানের কথায় এবং অজিত রায়ের সুরে সুবীর নন্দী গেয়েছেন ‘বাউল তুমি এমন দেশের কথা বল’। নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা আর আলাউদ্দিন আলীর সুরে সাবিনা ইয়াসমীন গেয়েছেন ‘মায়ের শেখানো ভাষা’। কবি শামসুর রাহমানের কথা ও খন্দকার নুরুল আলমের সুরে রুনা লায়লা গেয়েছেন ‘ফসলের মাঠে মেঘনার তীর’। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কথা ও সমর দাসের সুরে এন্ড্রু কিশোর গেয়েছেন ‘শহীদ মিনার ভরে গেছে ফুলে ফুলে’। কবি আল মাহমুদের কথায় ও খন্দকার নুরুল আলমের সুরে শাকিলা জাফর গেয়েছেন ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’। আবদুল লতিফের কথা ও সুরে সাবিনা ইয়াসমীন গেয়েছেন ‘ও আমার এই বাংলা ভাষা’। সৈয়দ আবদুল হাদী গেয়েছেন ‘মুখে মধুর বাংলা ভাষা’। রুনা লায়লা গেয়েছেন ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো’। রেবেকা সুলতানা গেয়েছেন ‘বাংলা ভাষার গান’। রওশন আরা মুস্তাফিজ গেয়েছেন ‘বাংলা ভাষা আমাদের’। আবিদা সুলতানা ও খুরশিদ আলম গেয়েছেন ‘ক-এর রঙের মতো বাংলা’। এ ছাড়া সমবেত কণ্ঠে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, শাকিলা জাফর, সৈয়দ আবদুল হাদী, সুবীর নন্দী, বশির আহমেদ, শাম্মী আখতার গেয়েছেন ‘ওরা আমার মুখের ভাষা’, ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা’, ‘একুশ মানে’, ‘ভাষার জন্যে ওরা’, ‘এক তারায় বাংলা’, ‘একুশ এলে মনে পড়ে’ প্রভৃতি গান।

শুনুন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি:

তবে হতাশার বিষয় হলো, ঐতিহাসিক এ গানগুলোর বেশির ভাগই রেডিও এবং বিটিভিকেন্দ্রিক। গানগুলোকে নতুন করে তুলে ধরার প্রয়াসে বরাবরই উদাসীন সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের কথা তো বলাই বাহুল্য। তাই ভাষা নিয়ে, একুশ নিয়ে নতুন গানের সংখ্যা কমতে কমতে এখন শূন্যের কোঠায় ছুঁই ছুঁই। ভাষা নিয়ে আরও বেশি গান, নাটক, চলচ্চিত্র হওয়া উচিত-এমন উদ্বেগ সিনিয়র শিল্পীর অনেকেরই। সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, ‘ভাষার গান নিয়ে অনেক বেশি কাজ করা প্রয়োজন ছিল। নতুন প্রজন্ম আমাদের গৌরবের ইতিহাস দিনে দিনে ভুলে যেতে বসেছে, যা অবশ্যই দুঃখজনক। এ জন্য সিনিয়রদেরই আগে সচেতন হতে হবে। নতুনদের কাছে আরও বেশি করে ভাষার গান তুলে ধরতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে পৃষ্ঠপোষকদেরও।’ সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘পৃষ্ঠপোষকরা পৃষ্ঠপোষকতা করেন শুধু নিজেদের স্বার্থে। যেসব শাখায় পৃষ্ঠপোষকতা করলে নিজেরা লাভবান হতে পারবেন, কেবল সেসবেই তারা এগিয়ে আসেন। বাংলা ভাষা বা বাংলা গানের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দেখা যায় না।’ একই রকম আক্ষেপ ও ক্ষোভ নিয়ে সুবীর নন্দী বলেন, ‘অডিও প্রযোজকরা চিরকাল শুধু ব্যবসাই করে গেলেন। শুধু ভাষার গান কেন, কোনও ভালো গানের প্রতিই তাদের আগ্রহ নেই, কোনওকালে ছিলও না।’

/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…