X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেও হিন্দুত্ববাদে ভরসা মোদির?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৬ মে ২০২৪, ২৩:৩২আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ২৩:৩২

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যে  পরিমাণ ভোটের আশা ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলগুলো করছিল তা অনেকটা পূরণ হয়নি। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ‘৪০০ আসনে’ জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই ধাপের ভোটে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। দুই ধাপে ভোটারের গড় উপস্থিতি, মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তৃতা এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠেছে। তাই তৃতীয় ধাপের ভোট নিয়ে এবার তোড়জোড় চালাচ্ছে মোদির দল। তৃতীয় ধাপের আগেই নির্বাচনি প্রচারণায় হিন্দুত্ববাদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলটির নির্বাচনি প্রচারণা নিয়েও সমালোচনা করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এবার হিন্দুত্ববাদের পালে হাওয়া দিয়ে নিজ দলের আসন পাকাপোক্ত করতে চাইছেন মোদি।

এবার সাত ধাপে লোকসভার ৫৪৩টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে ৫৫ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার ভোট দেবেন। এর মধ্যে ১৯ ও ২৭ এপ্রিল দুই পর্বের ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার শেষ হয়েছে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনি প্রচারণা। ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৭ মে মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় ১২টি রাজ্যের ৯৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এই ধাপে নির্বাচনি মাঠে লড়াই করবেন ১ হাজার ৩৫১ জন প্রার্থী।

জনমত জরিপগুলোতে মোদির জনপ্রিয়তা আপাতদৃষ্টিতে অক্ষুণ্ন বলে মনে হলেও দেশটির মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থানের অভাবকে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর প্রভাব অনেকটা লক্ষ্য করা গেছে দুই ধাপের ভোটেও। বিশ্লেষকদের ধারণা, ওই ধাপগুলোতে প্রত্যাশিত পরিমাণ ভোট অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদির দল। তাই তৃতীয় ধাপের ভোট নিয়ে তাই অনেকটাই সরব বিজেপি।

এবারের নির্বাচনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) নামের ২৬ টি দলের একটি জোট প্রধান বিরোধী জোট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জোটটি মোদির দল বিজেপির নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)-কে পরাজিত করার আশা করছে। বিজেপিকে পরাজিত করা আবার তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যও সমানভাবে অপরিহার্য। এছাড়া, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের একটি শক্তিশালী এবং উল্লেখযোগ্য অংশীদার হিসেবে আরও বেশি আসন জিততে এবং ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার ক্ষমতা বাড়াতে চায় মমতার দল।

মোদির ভোট ব্যাংক

ভোটের আগে এবং নির্বাচনের শুরুতে মোদির সম্ভাব্য জয় নিয়ে যে উন্মাদনা ছিল ভোট শুরুর পর তার অনেকটাই যেন স্থগিত হয়ে গেছে। আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট বিশেষজ্ঞদের একটি দল বলছেন, উত্তরপ্রদেশে প্রথম দুই পর্বের ভোটে ষোলো আসনে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি মোদির দল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার তৃতীয় পর্যায়ে উত্তরপ্রদেশের আরও ১০টি আসনে ভোট হতে যাচ্ছে। এর আগের পর্বগুলোতে মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ভোটগ্রহণ হয়। তবে এবার ভোট হতে যাচ্ছে বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যোগী রাজ্যে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। এই পর্বে উত্তরপ্রদেশে কাঙ্ক্ষিত ভোট না পেলে বিজেপির ক্ষমতায় থাকা নিয়ে যে প্রশ্ন তা নিয়ে ওয়াকিবহাল দলটি। তাই শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে হিন্দুত্ববাদের পালে হাওয়া তুলে কোনোভাবে লড়াইতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে বিজেপি।

২০১৯ সালের শেষ নির্বাচনে ৩০৩ আসনে জিতেছিল বিজেপি। আর দলটির মিত্ররা জিতেছিল প্রায় ৫০টি আসন । এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় ৪শ’র বেশি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে প্রচারণা চালায় দলটি। তাদের স্লোগান ছিল ‘এবার, ৪০০ পার।’ তবে ভোটের মাঠে মোদির দল এবার ৪০০ পার করতে পারবে কিনা তা-ই এখন দেখার বিষয়।

নতুন প্রজন্ম কোন দিকে ঝুঁকছে?

এবারের নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের বড় একটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান মতে, দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের অন্তত দু’ভাগ ভোটারের বয়স ২৫ বছরের কম। তাই ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী উভয়পক্ষই তাদের মন বোঝার চেষ্টা করছে।

তাদের কাছে নির্বাচনি দলগুলো কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, দেশটিতে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) এবং একটি সংবাদমাধ্যমের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী পাঁচ বছরেও দেশটিতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে বলে মনে করেন না ৫৭ শতাংশ মানুষ।

মোদির জনপ্রিয়তা কমছে?

বিশ্লেষকদের একটি দল মনে করছেন, এ পর্যায়ের নতুন প্রজন্মের ভোটারের কাছে কিছুটা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন মোদি। তবে ভিন্ন মত পোষণ করছেন অপর একটি অংশ। তারা বলছেন, সার্বিকভাবে তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ মনে করছে, বিশ্বের দরবারে ভারতকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে মোদি সরকার। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির শহরে বসবাসকারী নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের অন্তত ৮৩ শতাংশ মোদির পররাষ্ট্রনীতিকে সমর্থন করেন। তারা মনে করছেন, জি-২০ সামিট আয়োজনে ভারতের সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের গৌরব বাড়িয়েছে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদির ফলোয়ার সংখ্যা নতুন প্রজন্মের কাছে তার জনপ্রিয়তাকেই যেন তুলে ধরে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার পত্রিকা, রয়টার্স

/এএকে/এএ/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট কাল
বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার
তাইওয়ানের পার্লামেন্টে এমপিদের হাতাহাতির ভিডিও ভাইরাল
সর্বশেষ খবর
অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে: প্রতিমন্ত্রী
অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে: প্রতিমন্ত্রী
কেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
কেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
কিংসের বিপক্ষে ফাইনালের পাঁচ রেফারি নিয়ে আপত্তি মোহামেডানের 
কিংসের বিপক্ষে ফাইনালের পাঁচ রেফারি নিয়ে আপত্তি মোহামেডানের 
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট কাল
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট কাল
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’