যুক্তরাষ্টের পর এবার ইউরোপের একাধিক দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ। মঙ্গলবার (৭ মে) জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির একটি বিক্ষাভ-সমাবেশ ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ক্যাম্পাসে তখন কয়েকশ বিক্ষোভকারী অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বানও জানিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি এই খবর জানিয়েছে।
বার্লিনে বিক্ষোভকারীরা প্রায় ২০টি তাঁবু স্থাপন করেছিল। এসব তাবুকে ঘিরে একটি মানববন্ধন তৈরি করেছিলেন তারা। এসময় অধিকাংশের মুখ মেডিকেল মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিল এবং মাথায় জড়ানো ছিল কেফিয়াহ স্কার্ফ। এসময় তারা ‘ভিভা, ফিলিস্তিনা ভিভা’ অর্থাৎ ‘দীর্ঘজীবি, ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবি হোক’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
বার্লিন পুলিশ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার আহ্বান জানালে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। আরও কয়েকজনের ওপর ব্যবহার করে পিপার স্প্রে।
একটি বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা যে কোনও ধরণের সংলাপ প্রত্যাখ্যান করায় ক্যাম্পাস খালি করার জন্য পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয়েছে তারা।
প্রশাসকরা জানিয়েছেন, কিছু বিক্ষোভকারী ফ্রি ইউনিভার্সিটির কক্ষ এবং কনফারেন্স হলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বার্লিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপকদের তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভের সংগঠকরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া আগেই পুলিশকে ডেকে আনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছেন বার্লিনের মেয়র কাই ওয়েগনার।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সরব হয়ে ওঠেছেন ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে মঙ্গলবার, আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভের ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছিল ডাচ পুলিশ। পুলিশের মুখপাত্র সারা টিলার্ট বলেছেন, তখন প্রায় ১৪০ জন বিক্ষোভকারীকে গেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো প্রায় ২০টি তাঁবু পেতে বসেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ তাদের ঘেরাও করে রেখেছে। তবে এই বিক্ষোভ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রিয়ান ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস সংগঠন। ইউনিয়নের দাবি, ‘বিক্ষোভকারী সংগঠকদের মধ্যে ইহুদিবিরোধী দল ছিল।’ তবে তাদের এমন দবি অস্বীকার করেছেন প্রতিবাদকারীরা।
অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের প্রায় এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ এবং অক্সফোর্ডের পিট রিভারস মিউজিয়ামের বাইরের ক্যাম্প তৈরি করেছেন কয়েক ডজন শিক্ষার্থী। এই বিক্ষোভকে সমর্থন করে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন অক্সফোর্ডের ২শ’র বেশি শিক্ষাবিদ।
ফিনল্যান্ডে বৃহত্তম একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের বাইরে একটি ক্যাম্প তৈরি করেছে স্টুডেন্টস ফর প্যালেস্টাইন নামের একটি সংগঠন। তারা বলছেন, ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে তারা।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্যাম্প স্থাপন করেছেন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্যাম্পাসের বাইরে প্রায় ৪৫টি তাঁবু স্থাপন করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের ক্যাম্পাসের মাঠে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।