X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইএস ছাড়তে চেয়েছিল সেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিশোরী! (ভিডিও)

বিদেশ ডেস্ক
১২ আগস্ট ২০১৬, ১৩:১৬আপডেট : ১২ আগস্ট ২০১৬, ১৩:২১
image

খাদিজা সুলতানা ব্রিটেন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দেওয়া স্কুলছাত্রী খাদিজা সুলতানা জঙ্গি সংগঠনটি ছাড়তে চেয়েছিল বলে দাবি করেছে তার পরিবার ও পারিবারিক আইনজীবী।
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন স্কুলের শিক্ষার্থী ১৭ বছর বয়সী খাদিজা স্কুলের ছুটি কাটানোর সময় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে ছিল দুই বন্ধু শামীমা বেগম ও আমীরা আব্বাসি। সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর। আর শামীমা ও আমীরার বয়স ছিল ১৫ বছর। তুর্কি সিমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে তারা আইএস-এ যোগ দেয় বলে জানা গেছে।
ব্রিটিশ নাগরিক খাদিজা সুলতানাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ বলে উল্লেখ করা হলেও তার পারিবারিক আদিনিবাস বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত, সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।  
খাদিজার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি বিবিসি-র নিউজ নাইট অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘নিহত হবার আগে খাজিদা আইএস ছাড়তে চেয়েছিল।’ কয়েক সপ্তাহ আগেই রাক্কা এলাকায় খাদিজার নিহত হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা, তবে নিরপেক্ষভাবে তার মৃত্যুর খবর যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
ব্রিটিশ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইটিভি-কে খাদিজার বোন হালিমা খানম জানান, তার বোন খাদিজা যে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পালাবে সে ব্যাপারে তারা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চিন্তা করছিলাম এরকমই কিছু একটা ঘটবে।’ তবে আমরা ভেবেছিলাম কোনও একটা নিরাপদ স্থানে সে আছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাদিজা আইএস-এর কবল থেকে মুক্ত হওয়ার আগেই মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে যে স্থানে অবস্থান করছিল, চলতি বছরের মে মাসে সেখানে বিমান হামলা চালানো হয়।
প্রেস অ্যাসেসিয়েশন জানায়, খাদিজার বিয়ে হয়েছিল এক সোমালি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে। বিমান হামলায় তার স্বামীও নিহত হয়।
খাদিজার মৃত্যুর খবরে তার পরিবার একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তাসনিম আকুঞ্জি, ‘পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যূর খবরের চেয়ে খারাপ খবর আর কি হতে পারে, তবে খাদিজা যে একজন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় তরুণী ছিল, এতে কোনও সন্দেহ নেই।’
ওই আইনজীবী আরও জানান, ‘খাদিজার এই করুণ পরিণতি হবে আমরা এটা জানতাম, তাকে ফেরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এই কিশোরীর জীবন বাঁচাতে পারলাম না।’

খাদিজার আইএস ত্যাগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আইএস ত্যাগ করাটা, অ্যালকাত্রাজ (স্যান ফ্রান্সিসকোর একটি বিচ্ছিন্ন দীপ, যেখানে রয়েছে মার্কিন সেনা কারাগার) থেকে বেরিয়ে আসার মতোই। যেখানে হত্যার জন্য গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া আছে।’

ইস্তানবুলে ছবিতে ধরা পড়ে তিন কিশোরী

খাদিজার আইএস ত্যাগের চেষ্টা অন্যদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আকুঞ্জি  বলেন, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার একটা ইতিবাচক দিক হতে পারে, যারা এখনও সেখানে যেতে আগ্রহী, যুদ্ধ এলাকা সম্পর্কে তারা একটা ধারণা পেতে পারেন। যা থেকে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

খাদিজার পরিবার ও রাক্কার বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আইটিভি জানিয়েছে, খাদিজা মুক্ত হতে চেয়েছিল। তাই সে সীমান্ত অতিক্রম করে ব্রিটেনে নিজ ঘরে ফেরার চেষ্টা করেছিল।   

খাদিজার দুই বন্ধু আমীরা আব্বাসি ও শামীমা বেগম

ধারণা করা হচ্ছে, খাদিজা তার মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ফোনে তার বোন হালিমার সঙ্গে কথা বলেছিল। সে বলেছিল, ‘আমার ভালো লাগছে না, আমি ভয় পাচ্ছি। হয়তো আপনাদের সঙ্গে আর দেখা হবে না।’ হালিমা তাকে সাহস যুগিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি। ভয় পেও না। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখো।’

খাদিজা আরও বলেছিল, ‘এখন সীমান্ত বন্ধ, আমি কিভাবে এখান থেকে বের হবো? আমি পিকেকে (কুর্দি বাহিনী) অঞ্চল দিয়ে বাইরে আসতে পারবো না।’

হালিমা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি বেরিয়ে আসার ব্যাপারে কতোটা আত্মবিশাসী?’ খাদিজা ততদিনে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। তার উত্তর, ‘শূন্য... মা কোথায়? আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

এর পরই ফোনের লাইন কেটে যায়। মায়ের সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি খাদিজার।

খাদিজার বোন হালিমা খানম

খাদিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরই হালিমা জানিয়েছিলেন, ‘তাকে (খাদিজা) খুবই ভীত মনে হচ্ছিল। সে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। আমি খুবই অসহায় বোধ করছি। আমি কীই বা করতে পারি? এটা খুবই কষ্টের। আমি মনে করি না, সে নিজ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’

ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফোন কলের পরই বিমান হামলায় খাদিজা নিহত হয়েছিল। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর খাদিজার মৃত্যুর বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি।

দুই বন্ধুর সঙ্গে খাদিজা

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের অন্তত ৮০০ নাগরিক আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়া পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ জন ফিরে এসেছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

আইটিভি-তে প্রকাশিত খাদিজার সঙ্গে তার বোন হালিমার কথোপকথনের ভিডিও:

সূত্র: বিবিসি, ডেইলি মেইল, দ্য গার্ডিয়ান।

/এসএ/

সম্পর্কিত
ইউক্রেনের ড্রোনের জন্য নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাজ্য
রাজনীতিকদের বিরোধে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরায়েলি সেনাদের
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭
সর্বশেষ খবর
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়