রেস্ট্রিকটেড স্করপিন ইন্ডিয়া নামে ভারতীয় সাবমেরিন সংক্রান্ত নথি ফাঁসের ঘটনায় ফ্রান্সের সাবেক এক নৌ কর্মকর্তা জড়িত বলে দাবি করেছে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম দ্য অস্ট্রেলিয়ান। সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সাবেক নৌ কর্মকর্তা ফরাসি কোম্পানি ডিসিএনএস-এর সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন। আর এই ডিসিএনএস-এর সঙ্গে যৌথভাবে ভারত যে সাবমেরিনগুলো তৈরি করছিলো তার বেশ কিছু স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হওয়া নথিতে রয়েছে। এদিকে নথি ফাঁসের ধরন নির্ধারণ করতে ফরাসি প্রতিরক্ষা নিরাপত্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে ডিসিএনএস। দ্য অস্ট্রেলিয়ান-এর খবরের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইম অব ইন্ডিয়া খবরটি নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের নৌবাহিনীর ২২ হাজার ৪শ পৃষ্ঠার গোপন নথি ফাঁস হয়। রেস্ট্রিকটেড স্করপিন ইন্ডিয়া নামের ওই নথিতে সাবমেরিন সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য ছিল। ডিসিএনএস ভারতের জন্য ৬টি স্করপিন-ক্লাস সাবমেরিন তৈরি করছিলো। এ নিয়ে ২০০৫ সালে ওই ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে ভারতের সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়। মুম্বাইয়ের মাজাগাঁও ডকস লিমিটেড ডিসিএনএস এর হয়ে ভারতে সাবমেরিনগুলো নির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
স্করপিনের ওইসব তথ্য লেখা হয়েছিল ফ্রান্সে। আগামী কয়েক দশকের জন্য এই স্করপিন সাবমেরিন ভারতীয় নৌবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছিলো।
দ্য অস্ট্রেলিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১১ সালে তৈরি করা ওই নথিগুলো ডিসিএনএস-এর এক সাব কন্ট্রাক্টর ফাঁস করে থাকতে পারেন। ওই সাব কন্ট্রাক্টর আগে ফরাসি নৌবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তবে শুরুতে ডিসিএনএস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, ওই নতিগুলো ভারত থেকে ফাঁস হয়েছে। কোম্পানিটি আরও দাবি করেছিল, তারা কেবল সরবরাহ করে কিন্তু টেকনিক্যাল ডাটার ওপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
তবে এখন ডিসিএনএস বলছে ইন্ডিয়ান স্করপিন প্রোগাম সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের ঘটনা ‘গুরুতর ব্যাপার’। নথি ফাঁসের ধরন নির্ধারণ করতে ফরাসি প্রতিরক্ষা নিরাপত্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে এ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
কেবল ভারতীয় সাবমেরিনের তথ্যই ফাঁস হয়নি। চিলির কাছে রণতরী এবং রাশিয়ার কাছে উবগামী জাহাজ বিক্রির জন্য ডিসিএনএস এর করা পরিকল্পনাও ফাঁস হয়েছে।
স্করপিনের নথি বিদেশ থেকেই ফাঁস হয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর। তার অনুমান, হ্যাকিং-এর পর তা ফাঁস হয়। নৌসেনার তরফেও নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে, ভারত থেকে কোনও টেকনিক্যাল তথ্য ফাঁস হয়নি।
ফাঁস হওয়া নথিতে, নির্মাণাধীন ভারতীয় সাবমেরিনগুলোর বিস্তারিত রয়েছে। এগুলোর সক্ষমতা কেমন, এগুলো সমন্বিতভাবে কী করে কাজ করবে তার সবকিছু বলা ছিল নথিগুলোতে। নথির ৪ হাজার ৪৫৭ পাতায় ছিল যুদ্ধজাহাজের পানির তলার সেন্সর সম্পর্কে তথ্য,৪ হাজার ২০৯ পাতায় ছিল পানির উপরের সেন্সর সম্পর্কিত তথ্য,৪ হাজার ৩০১ পাতায় ছিল কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কিত তথ্য এবং ৪৯৩ পাতায় টর্পেডো লঞ্চ সংক্রান্ত তথ্য ছিল। এছাড়া ৬ হাজার ৮৪১ পাতা জুড়ে এই তথ্য ফাঁসের কোনও সুযোগ নেই। ছিল যুদ্ধজাহাজের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ২ হাজার ১৩৮ পাতা জুড়ে নেভিগেশন সিস্টেমের বর্ণনা ছিল। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
/এফইউ/