শরণার্থী শিবির বন্ধের দাবিতে ফ্রান্সের ট্রাক চালক, কৃষক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে বন্ধ হয়ে পড়েছে ফ্রান্সের বন্দর নগরী কালে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষের মানববন্ধনে অর্ধ-শতাধিক ট্রাক্টরের সঙ্গে যোগ দিয়েছে প্রায় ৪০টি ট্রাক।
সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বন্দরের রাস্তা বন্ধ করে দিলে কালে বন্দর কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ‘জঙ্গল’ খ্যাত শরণার্থী শিবিরটি শহরের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং বন্দরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। তাই এটি বন্ধ করে দিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে ওই শরণার্থী শিবিরের জন্য কালে নগরীতে পর্যটকদের আগমনও কমে গেছে। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কালে নগরীর ওই শরণার্থী শিবিরটি তৈরি করা হয়েছিল ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য যে শরণার্থীরা ফ্রান্সে প্রবেশ করেছে, তাদের জন্য। ওই শরণার্থী শিবিরে সাত থেকে ১০ হাজার শরণার্থী রয়েছেন। ওই শিবিরে অন্তত ৪০০ শিশু রয়েছে যাদের কোন অভিভাবক বা সঙ্গী নেই। শরণার্থী শিবিরের বেশিরভাগই এসেছেন মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান ও আফ্রিকা থেকে। শিবিরের বাসিন্দাদের দাবি, তারা সংঘাতবিহীন জীবনযাপন করতে চান।
তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, ওই শরণার্থীদের জন্য শহরবাসীদের নাগরিক জীবনে প্রভাব পড়ছে। তারা অনিরাপদ বোধ করছেন। বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে বন্দরে ও নগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ট্রাক চালকদের সংগঠক এরিক ফিওলেট বলেন, ‘আমাদের আর করায় কিছুই নেই। আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। এখন আর কোনও আশ্বাস চাই না, সরাসরি তার প্রয়োগ দেখতে চাই। আজ দেওয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে।’
ট্রাক চালকদের সংগঠন রোড হলেজ অ্যাসোসিয়েশন (আরএইচএ) জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওই শরণার্থী শিবির বন্ধের আগে রাস্তা থেকে সরবে না।
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ওই বিক্ষোভের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন, ব্রিটেন যদি ওই শরণার্থী শিবির রাখতে চায়, তাহলে তা ইংলিশ চ্যানেলের অপর পাড়ে (ব্রিটেনের ভূখণ্ডে) করতে হবে তাদের।
তবে ডানপন্থী রাজনীতিবিদের কথার সঙ্গে তাল না মিলিয়ে কৃষক ইউনিয়ন (এফডিএসইএ)-এর নেতা জ্যঁ পিয়েরে ক্লিপেট বলেন, ‘আমরা বর্ণবাদী নই। আমরা উগ্র-ডানপন্থী দল ফ্রন্ট ন্যাশনালও নই। এখানে যে মানবতাবোধের প্রশ্নটি রয়েছে, তা আমরা বুঝি। শরণার্থী শিবিরে মানুষ নিদারূণ কষ্টে বাস করছেন, কিন্তু আমরা অসভ্যভাবে, নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে বাস করতে পারি না।’
এদিকে জানা গেছে, মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে কালে নগরীতে। তারা লোকজনকে ব্রিটেনে পাঠাচ্ছে। পাচারকারী দল হাজার হাজার ডলার কামিয়ে নিচ্ছে শরণার্থীদের কালে নগরীতে আনার মধ্যদিয়ে। এখান থেকে কিছু লোককে ব্রিটেনে পাঠানো হয়। আর বাকিরা এখানেই থেকে যান।
বিভিন্ন সময়ে শরণার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের মারামারির ঘটনা সামনে এসেছে। স্থানীয় এবং ট্রাক চালকরা অভিযোগ করেন, শরণার্থীরা ট্রাক থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তারা ঢিল ছোড়া শুরু করেন, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে ট্রাক থামাতে বাধ্য করেন।
তিনি আরও জানান, ওই শরণার্থী শিবির তুলে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানতে চেয়ে দাবি জানানো হয়েছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফরাসি কর্তৃপক্ষের ওপর ব্যাপক চাপ বেড়েছে।
আরেক কৃষক নেতা পিয়েরে ইভেস বলেন, ‘আমরা বর্ণবাদী নই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দল নই। কিন্তু আমরা এমন এক অবস্থায় রয়েছি, যেখানে সমস্যার কোনও সমাধান দেখা যাচ্ছে না। ফসলী জমিতে শরণার্থী শিবির বানানো হলো, ফসল নষ্ট করা হলো, আর তার ফলাফল এই উত্তাপ।’
তবে মূল সমস্যা যে শরণার্থী নয়, বরং অর্থনৈতিক, যে বিষয়টি তার কথাতেও উঠে এসেছে। ইভেস বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ সবসময়ই অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়েছে। পোলিশ, বেলজিয়ানরা এখানে কাজ করতে এসেছেন। কিন্তু তখন কাজ ছিল, এখন কাজের সংকট চলছে। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় তা সম্ভব নয়।’
/এসএ/