মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, তার সরকার বিদেশি সমালোচনায় ভয় পায় না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ দেশটির অপরাপর মুসলিমদের ব্যাপারে কথিত এই গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনা রয়েছে বহুদিন ধরেই। সেই সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করেই সু চি এমন মন্তব্য করেছেন।
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের অচলায়তন ভেঙে ১৯৬২ সালের পর প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের একজন বেসামরিক প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেছেন সু চি।
গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের আগে সু চির দলে মুসলিম প্রার্থী না থাকা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইচ্ছে করেই মুসলিমদের প্রার্থী করেননি সু চি। এর কিছুদিন পর একই বছর অক্টোবরে সু চির দলের একজন জেষ্ঠ্য নেতার বরাত দিয়ে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে একই কথা বলা হয়। আর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ফাঁস হয় মুসলমানেদের নিয়ে সু চির বিতর্কিত মন্তব্য। বিবিসি টুডের ২০১৩ সালের এক সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে সম্প্রচার শুরুর আগে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন সু চি। এবার জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনের বিতর্কে সেই সু চি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাস্তবতা অনুধাবন এবং গঠনমূলক অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিজ রাষ্ট্রের মতো করেই খোদ রোহিঙ্গা শব্দটিই স্বীকার করেন না সু চি। রোহিঙ্গা প্রশ্নে সু চি কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করতে চাই না যা আগুনে জ্বালানি সরবরাহ করে। আমি কোনও নির্দিষ্ট শব্দের কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি সেই সব শব্দের ব্যবহারের কথা বলছি যেগুলো রাখাইনসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিভেদ সৃষ্টি করে।’ এবারের জাতিসংঘ সম্মেলনেও তাই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি সু চি। তবে রোহিঙ্গা প্রশ্নের দিকে ইঙ্গিত করে মিয়ানমারের নেতা বলেন, ‘আমরা সকল পক্ষের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করছি। আমাদের সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’ তিনি জানান, সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে এসব কাজ তদারকির জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালেই জাতিসংঘে যোগ দেয় মিয়ানমার। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সেখানে ৪ দফায় নির্বাচন হয়। নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিরাই তখন যোগ দিতেন জাতিসংঘ অধিবেশনে। ১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারে চলা সামরিক শাসনের অবসান হয় ২০১১ সালে। পরবর্তী এই ৫ বছর ধরে চলেছে রাজনৈতিক সংস্কার। আর তা হয়েছে সামরিকতার ছায়াতলেই। ১৯৬১ সালের ৫৪ বছর পর তাই এবার প্রথম বেসামরিক প্রতিনিধি হিসেবে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ইতিহাস রচনা করলেন সু চি।
/বিএ/