X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

কিভাবে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে ভারত?

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:৩০আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২৩:২৯

অ্যাকশনে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারত বুধবারের মধ্যরাতের পর যে আঘাত হানে, সেই অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত বা ‘অপারেশনাল ডিটেল’ খুব কমই প্রকাশ্যে জানানো হয়েছে। এদিন দিল্লিতে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ভারতীয় সেনার ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস) রণবীর সিং যে সাংবাদিক বৈঠক করেন, সেখানে তিনি এই অভিযানের কথা ঘোষণা করলেও খুব বেশি কিছু জানাননি। সাংবাদিকদেরও কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি।

কিন্তু এরপর দফায় দফায় ব্রিফিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠক এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে অন্তত ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে সেই অভিযানের একটা ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এই সব টুকরো টুকরো খণ্ডচিত্র জড়ো করেই ভারতের সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের একটা চেহারা দিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন। এগুলো হলো, (১) বুধবার বিকেলেই ভারতের কাছে অতি নির্ভরযোগ্য সূত্রে গোয়েন্দা তথ্য আসে যে প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটজন জঙ্গি কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার অন্যদিকে ভারতের ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে। প্রায় আট থেকে দশটি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এই জঙ্গীরা আলাদা আলাদা ঘাঁটিতে জড়ো হয়েছে। ভারতে অনুপ্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। প্রতিটি ঘাঁটিতে এই জঙ্গিদের সঙ্গেই আছে তাদের হ্যান্ডলার এবং মালবাহক কুলিরাও।

(২) তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আত্মঘাতী জঙ্গিও ছিল। যাদের উদ্দেশ্য হলো ভারতে ঢুকে জম্মু ও কাশ্মিরের নানা সেনা ছাউনিতে পাঠানকোট বা উরি-র ধাঁচে হামলা চালানো। আর কয়েকজনের ওপর দায়িত্ব ছিল দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালুরু-হায়দ্রাবাদের মতো মেট্রো শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি নেওয়া।

(৩) এরপর বুধবার সন্ধ্যাতেই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গিদের এই ঘাঁটিগুলোতে (যেটাকে ভারত বলছে অনুপ্রবেশের লঞ্চপ্যাড) হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সেনা কমান্ডে সবুজ সংকেত পাঠানো হয়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগেরর সঙ্গেও আলোচনা সেরে নেন।

(৪) মাঝরাতের ঠিক পরপরই ভারতের গ্রাউন্ড ফোর্স (পদাতিক সেনা) নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দিকে ঢুকে পড়ে। তাদের সাহায্য করার জন্য আকাশপথে ছিল হেলিকপ্টারে চেপে প্যারাকমান্ডো, আর অনেকগুলো ড্রোন।

(৫) জঙ্গীদের অন্তত আট-দশটা লঞ্চপ্যাডকে টার্গেট করেছিল ভারত। এগুলোতে হামলা চালানোর জন্য তারা পাকিস্তানের দিকে অন্তত আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। কোনও কোনও লঞ্চপ্যাড তিন কিলোমিটারেরও বেশি ভেতরে ছিল, সেগুলোও নিশানা থেকে বাদ যায়নি।

(৬) ভারতীয় সেনা সূত্রগুলো দাবি করেছে ‘ফুল সারপ্রাইজ ওয়াজ অ্যাচিভড!’ অর্থাৎ প্রতিপক্ষ শিবিরকে এই হামলা দিয়ে সম্পূর্ণ হতচকিত করে দেওয়া গেছে। তারা মোটেও আশা করেনি ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের এতটা ভেতরে ঢুকে হামলা চালাবে। এটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক, কারণ গত বহু-বহু বছরে ভারত কখনও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গিয়ে হামলা চালায়নি–না আকাশপথে, না স্থলপথে। ফলে ভারতের দিক থেকে এই ধরনের অভিযান ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।

(৭) মোট সাতটা জঙ্গি লঞ্চপ্যাড সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব হয়, আরও দুটো ক্ষেত্রেও আংশিক সাফল্য মিলেছে বলে ভারত দাবি করছে। প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা রাতের অন্ধকারে হদিশ করা সম্ভব হয়নি। তবে ভারতীয় সেনা সূত্রগুলো বলছে, প্রতিপক্ষ শিবিরের অন্তত ৩৫ থেকে ৪০জন মারা গেছে, আরও অনেকে আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে জঙ্গিরা ছাড়াও তাদের সাহায্যকারী পাকিস্তানি সেনা সদস্য, কুলি বা স্থানীয় গাইডরাও ছিল।

(৮) গোটা অভিযানটা শেষ করতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই, রাত সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার ভেতরেই ভারতীয় সেনারা সবাই আবার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। একজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বলছেন,  ‘আমাদের কোনও প্রাণহানি দূরে থাক, সেনাদের কারও গায়ে কোনও আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি।’

(৯) ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ভোররাতের পরই আপাতত শেষ, এখনই আবার নতুন করে এই ধরনের কোনও হামলা চালানোর পরিকল্পনা ভারতীয় সেনার নেই। তবে পাকিস্তানের দিক থেকে পাল্টা আঘাত আসতেই পারে, সেই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পুরো কাশ্মিরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে সেনাকে চরম সতর্কাবস্থায় (হাই অ্যালার্ট) রেখেছে ভারত। সীমান্তের কাছে অনেক গ্রাম থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

(১০) তবে পাকিস্তান এই ধরনের কোনও অভিযানের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করার পর এই প্রশ্নও উঠেছে যে, ভারত যে সত্যিই এই ধরনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ‘আপাতত আমাদের এর বেশি তথ্য প্রকাশ করার কোনও দরকার নেই। তবে অভিযানের ছবি ও ভিডিও ফুটেজও আমাদের হাতে আছে। প্রয়োজন হলে সঠিক সময়ে তাও প্রকাশ করা হবে।’

ফলে ভারত সত্যিই এই ধরনের অভিযান চালিয়েছে কিনা—তা নিয়ে যাদের মনে এখনও সন্দেহ বা সংশয় আছে, তাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক সেনা নিহত
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক সেনা নিহত
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি