X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বাহাস!

বিদেশ ডেস্ক
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:০৪আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:০৭

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বাহাস! ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলায় ১৭ জওয়ান নিহতের পর থেকেই উত্তেজনা বাড়ছে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে। ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। বিষয়টি নিয়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনেও পরস্পরকে দোষারোপ করেছে দু’দেশ। এমনকি ভারতের প্রভাববলয়ে স্থগিত হয়ে যায় পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর)  মধ্যরাতে পাকিস্তান সীমান্তে আচমকা হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। ভারতের দিক থেকে একে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বিপরীতে একে সীমান্ত সংঘর্ষ হিসেবে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলছে, বিনা উস্কানিতে চালানো ভারতীয় হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা।

সীমান্তের ওপার থেকে চালানো ভারতের আগ্রাসন প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে নিজ নিজ দেশের সেনাসদস্যদের প্রাণহানির বিষয়টি নিয়েও বাহাসে লিপ্ত হয়েছে দুই দেশ।

বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জম্মু-কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় বাহিনীর পরিচালিত হামলায় অন্তত নয় পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। বিপরীতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আট ভারতীয় সেনা নিহতের খবর দিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো। এছাড়া পাকিস্তানের হাতে এক ভারতীয় সেনাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই সেনার মুক্তির ব্যাপারে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন রাজনাথ। ২২ বছরের ওই সেনার নাম চান্দু বাবুলাল চৌহান। তার পিতার নাম বাশান চৌহান। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা।

ভারত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস’ চালানোর কথা বলে হামলার বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করলেও তা মানছে না পাকিস্তান। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস’এর দাবিকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে তারা। ইসলামাবাদের দাবি, আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিতেই তাদের দুই সেনার মৃত্যু হয়েছে।

ইসলামাবাদের দাবি, যে ভারতীয় সেনারা নিহত হয়েছেন তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেননি। সীমান্তে দুই দেশের গোলাগুলির কারণে তারা প্রাণ হারিয়েছেন।

পাকিস্তান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, তাদের ভূখণ্ডে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হলে ভারতকে একই ধরনের জবাব দেওয়া হবে।

শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ রেখায় যেকোনও সহিংসতা ও আগ্রাসন থেকে জনগণ এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে পাকিস্তান।

নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসন আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। যেকোনও আগ্রাসন থেকে আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে সুরক্ষা করব। গোটা জাতি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছে। ভারতীয় নৃশংসতা দিয়ে কাশ্মিরি জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে দমানো যাবে না।’

এদিকে জম্মু কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) পেরিয়ে ভারতীয় সেনাদের চালানো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত শাহ। তার ভাষায়, ‘এ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে জঙ্গিদের উপযুক্ত জবাব দিয়ে নতুন ভারতের উত্থানের ইঙ্গিত মিলেছে। সেনাবাহিনী সফলভাবে এ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। নিজেদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই তারা সন্ত্রাসীদের নির্মূল করেছে। এটা আমাদের সেনাবাহিনীর সাহসিকতা, সক্ষমতা এবং দেশপ্রেমের প্রমাণ। সন্ত্রাসবাদের দীর্ঘ যুদ্ধে এ প্রথমবারের মতো জঙ্গিদের উৎপত্তির কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ প্রয়োজনে ভারতে পারমাণবিক হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার রয়েছে, তা সাজিয়ে রাখার জন্য বানানো হয়নি। এগুলো শোপিস নয়। কেউ যদি পাকিস্তানের ওপর হামলা চালায়, প্রয়োজনে তাদের ওপর ওই বোমা প্রয়োগ করা হবে। আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে আমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেব।’

কাশ্মির প্রসঙ্গে খাজা আসিফ দাবি করেন, ‘কাশ্মির ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কাশ্মিরের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হলে ভারতের ঐক্য আর থাকবে না। ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, কাশ্মিরে ১৯৮৯ সালের আন্দোলনের সময় থেকে উভয় পক্ষের সেনাসদস্যরা এক গোপন যুদ্ধে লিপ্ত হতেন, যা প্রায় সময়েই হতো হিংস্র। বৃহস্পতিবারের এই হামলা যে এখানেই শেষ হচ্ছে না, তার প্রমাণও ইতিহাসে রয়েছে। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে সশস্ত্র হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরু হয়। ওই হামলার জন্য ভারত জয়েশ-ই-মোহাম্মদ-কে দায়ী করে আসছে। পরে ২০০৩ সালে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশ এলওসি-তে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, টাইমস নাউ, ইন্ডিয়া টুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডন, এক্সেপ্রেস ট্রিবিউন।

/এমপি/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক