X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানি ফাঁদ, পা দিয়েছে ভারত!

বাধন অধিকারী
০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২১:০৯আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২৩:৫৫
image

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানি ফাঁদ, পা দিয়েছে ভারত! ভারতের দাবিকৃত সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে ইতিবাচক মনে করছেন না অনেকেই। এই অভিযান গোয়াতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন  ব্রিকস সম্মেলনে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে মনে করছে খোদ ভারতীয় পুলিশ। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন মনে করছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ভারতীয় পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজ-এর ভারতীয় সংস্করণে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মির সীমান্ত সংলগ্ন জঙ্গিঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে দিল্লির দাবিকৃত এই অভিযান ভারতের জন্য উদ্বেগ ডেকে এনেছে। একইসঙ্গে এটি জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বাড়িয়েছে বলেও উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। অভিযানের পরদিনই পারমাণবিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা জানায় প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। আর এশিয়ান কূটনীতির বিশ্লেষণমূলক মাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাট-এর এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হলো একটি পরোক্ষ পাকিস্তানি ফাঁদ। ডিপ্লোম্যাট-এর দাবি, ভারত ওই ফাঁদে পা দিয়েছে।

গোয়েন্দা এবং বিশ্লেষকদের এইসব আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামের দাবিকৃত ভারতীয় অভিযানের পর ৫ দিনে দুইবার জঙ্গি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে ভারতীয় সেনাক্যাম্প।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক

উল্লেখ্য, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এখন ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে এক আলোচিত বিষয়। কাশ্মিরের  উরি সেনাঘাঁটিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ১০ দিনের  মাথায় সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গ। নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে বলে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে  একে সীমান্ত সংঘর্ষ উল্লেখ করে পাকিস্তানের দাবি, ভারত স্রেফ নিজেদের দম্ভ প্রচার করার জন্য একে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলছে। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রশ্নে দুই দেশের এই বিপরীত অবস্থান পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক বিভাজনকেও সামনে এনেছে।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামের কথিত অভিযান ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। ওই অভিযানের কারণে আসন্ন ব্রিকস সম্মেলনে নিরাপত্তা-ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে গত ৪ অক্টোবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে পাঞ্জাব পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামের অভিযানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ১৫ ও ১৬ অক্টোবর  ব্রিকস সম্মেলনস্থলকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি গোয়ার ওই সম্মেলনস্থলে ড্রোন ওড়ানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে বলেন, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর গোয়েন্দারা পাল্টা হামলার আশঙ্কা করছে। জঙ্গিরা এবার ব্রিকস সম্মেলনকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে কেননা কথিত ওই ভারতীয় অভিযানের পর প্রথমবারের মতো গোয়াতে এই আন্তর্জাতিক সমাবেশ ঘটছে। আমরা সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করছি।’

এদিকে দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন মনে করছে, ভারতের এই কথিত অভিযান দুই দেশের চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এতে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রে এর জবাব দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অবর্জাভার  রিসার্চ ফাউন্ডেশন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ভারতীঁয় পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে তারা। প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো অশোক মালিকের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘তারা (ভারত) ভেবেছিল, এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তাদেরকে আলোচনার দিকে টেনে আনা যাবে। তবে তা হয়নি।’

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানি ফাঁদ, পা দিয়েছে ভারত!

কথিত ওই অভিযানের পরদিনই কোয়ার্টজ-এর ভারতীয় সংস্করণে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়,  সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আরও বেশি বেশি জঙ্গি হামলার। একদিকে ভারতের অভ্যন্তরে মানুষ হামলার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। আরেকদিক থেকে পাকিস্তানকে তা আরও প্রতিশোধ পরায়ণ করে তুলেছে। কোয়ার্টজ-এর প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী,  এর কারণে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান জঙ্গিদের মদদ দেওয়া অব্যাহত রাখবে, তা কখনও বন্ধ করবে না।

অভিযানের পরদিন গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কেবল উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।  দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় পরমাণু সংক্রান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।

এদিকে এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণমূলক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে ভারতের এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবুশ’-এর ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবুশ’ এক ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা। সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই হামলা চালায় পাকিস্তান। ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের মাথায় পাকিস্তানের সেই  ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবুশ’ ভর করার কারণেই তারা পাকিস্তানে কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে।

ভারতীয় সেনা

ডিপ্লোম্যাট বলছে, ভারত আসলে পাকিস্তানের ফাঁদে পা দিয়েছে। পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবুশ যেমন করে ভারতীয়দের মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জাগায় এবং যুদ্ধবাদী মনোভাব তৈরি করে, ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কারণেই একইভাবে পাকিস্তানিদের মনে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হবে। এতে দুই দেশের উত্তেজনা বাড়বে। বাড়বে সংঘর্ষ আর যুদ্ধের আশঙ্কা।

গোয়েন্দা আর বিশ্লেষকদের আশঙ্কার যথার্থতা প্রমাণ করে কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ৫দিনে ২ বার ভারতীয় সেনাঘাঁটি আক্রান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তীতে হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানিকে কথিত এনকাউন্টারে হত্যার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পাঠানকোটের জঙ্গি হামলায় ‘পাকিস্তানি মদদপুষ্ট’ জঙ্গি সংগঠন জয়েশ ই মোহাম্মদ হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে ইসলামাবাদকে দায়ী করে ভারত। বিপরীতে পাকিস্তান কাশ্মিরের মানবাধিকার হরণের প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সাম্প্রতিক উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ ই মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত।

পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। দুই দেশ তাদের স্বদেশীয় সংবাদমাধ্যম এবং কূটনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে যার যার মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য।

/এফইউ/

সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!