নরেন্দ্র মোদি সরকারের আগেও ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অভিযান চালিয়েছিল বলে স্বীকার করেছে কেন্দ্র সরকার। তবে কেন্দ্র সরকারের দাবি, অতীতের অভিযানগুলোর ধরনের চেয়ে এবারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ধরন আলাদা। অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হলেও পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকে জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অবশ্য মঙ্গলবার রাতে আরেক ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, জয়শঙ্করের বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ হচ্ছে। অতীত অভিযানের থেকে এবারের অভিযান ভিন্ন; এই কথাটির মধ্য দিয়ে তিনি আসলে এবারের অভিযানের সংবাদমাধ্যমে আসার বিষয়টি বুঝিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, আগের অভিযানগুলোর খবর প্রকাশ করা হয়নি কিন্তু এবার তা প্রকাশিত হয়েছে।
কাশ্মিরে ভারতের দমননীতি আর পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট জঙ্গি হানার পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের দাবিকৃত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেই দম্ভের প্রশ্নটি শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ভারতের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি শুরু হয়। কংগ্রেস থেকে দাবি করা হচ্ছিলো নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এটাই প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, অতীতেও এমনটা হয়েছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি। আর বিজেপির নেতারা দাবি করছিলেন, স্বাধীনতার পর এ ধরনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়নি।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর জানান এর আগেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা চালিয়েছে ভারত। তবে আগে কী ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল তা বোঝাতে গিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব। জয়শঙ্করের দাবি, অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অভিযান চালানো হলেও সেগুরোর থেকে এবারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ধরন আলাদা। এবারের অভিযানের খবর প্রকাশ করা হলেও আগের সেইসব অভিযান অপ্রকাশিত ছিল। তাছাড়া আগের সেইসব অভিযান পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘যদি এটা অতীতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হওয়ার প্রশ্ন হয় তবে তার জবাব হ্যা হবে। তবে প্রশ্নটা যদি এমন হয় যে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে অভিযান চালিয়ে অতীতেও সেনাবাহিনী জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করেছে কিনা তবে তার জবাব হবে-না।’
এদিকে মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদি হিমাচল প্রদেশ সফরে গিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ তুলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সক্ষমতার সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্ষমতার তুলনা করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন,ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতো করে ভারতীয় সেনাবাহিনীও তাদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। মোদি বলেন, ‘যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কথা সবাই বলাবলি করছে’ সেটি এখন দাম্ভিক ইসরায়েলি বাহিনীর মতো দক্ষ। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে আমাদের সেনাবাহিনীর কথা বলছে। একই ধরনের দক্ষতা এতোদিন ইসরায়েলি বাহিনীর ছিল বলে আমরা শুনে আসছিলাম। কিন্তু এখন সবাই জানে ভারতীয় বাহিনীরও কোনও কমতি নেই।’ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি
/এফইউ/বিএ/
