ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর বিভিন্ন স্থাপনা বা আস্তানার কাছাকাছি মসুলের ৫৫০ পরিবারের বেসামরিক মানুষজনকে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেনসম্ভাব্য মানবঢাল হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার ওই মুখপাত্রের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, মসুলের আশপাশের গ্রামগুলো থেকে ৫৫০টি পরিবারকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি ওই অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যে বিষয়টি ‘নিশ্চিত’ হওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, মানবাধিকার কার্যালয় থেকে ওই অঞ্চলের একটি গ্রামে ৪০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যার যে খবর পাওয়া গেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইরাকি বাহিনী মসুলের কাছাকাছি চলে আসলে আইএস যোদ্ধারা সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে ইতিপূর্বে আশঙ্কা করেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
সম্প্রতি ইরাকের সামরিক বাহিনী দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি মসুলে অভিযান শুরু করেছে। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা দলে দলে পালিয়ে যেতেও শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গেল সোমবার ইরাকি বাহিনী মসুল অভিযান শুরুর পরই বেসামরিক নাগরিকেরা সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে নগর ছেড়ে পালাতে শুরু করে।বর্তমানে মসুলে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা।
মসুল পুনরুদ্ধারের জন্য জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর প্রবল বাধা উপেক্ষা করে ক্রমাগত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ইরাকি বাহিনী। আইএসকে যেন চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা যায় তার জন্য এ পর্যায়ে অভিযানের তৃতীয় অধ্যায় শুরু করেছে তারা। আর তাদেরকে ঠেকাতে ক্রমাগত আত্মঘাতী বোমা হামলা ও চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। তবে ইরাকি বাহিনীর দাবি, আইএস-এর সংগ্রহে থাকা অস্ত্রও সীমিত হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে এখন স্নাইপার ও আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানোর উপকরণ ছাড়া আর কোনও অস্ত্র নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মসুলের বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে যারা মসুল ছেড়ে পালিয়েছে তারা পশ্চিম সীমান্ত বরাবর সিরীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার ইরাকি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সেনারা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে। আইএস ঘাঁটি লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। ইরাকের বিশেষ বাহিনী এরইমধ্যে বারতেল্লা শহরে প্রবেশ করেছে। শহরটি মসুল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।
মেজর জেনারেল ফাদিল বারওয়ারি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বারতেল্লায় পরাস্ত করতে পারলে সব জায়গাতেই তারা ভেঙে পড়বে।’ তার দাবি, আইএস-এর কাছে এখন প্রতিরোধ করার মতো কিছু নেই। তাদের কাছে কিছু স্নাইপার আর গাড়িবোমা রয়েছে।
মসুল অভিযানে ইরাকি সেনাবাহিনীর ১৮ হাজার সদস্য এবং কুর্দি পেশমেরগা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা সদস্যও তাদের সহযোগিতার জন্য এখন ইরাকে অবস্থান করছেন। এদিকে এ অভিযান শুরুর পর প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার এক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইরাকের উত্তরাঞ্চলে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা হামলায় আহত হওয়ার পর মারা যান তিনি। তবে ঠিক কোন জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছে তা জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জুন মাসে জঙ্গিদের হাতে মসুল নগরীর পতন হয়। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরী আইএসের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি চলছিল। সোমবার (১৭ অক্টোবর) ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে মসুল পুনরুদ্ধার অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। বৃহস্পতিবার ইরাকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে হায়দার আল-আবাদি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে নগরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমনকি আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা এর চেয়েও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’ ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসুল নগরীর পুনর্গঠনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে ওই জ্যেষ্ঠ ইরাকি কর্মকর্তারা এখন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে রয়েছেন।
/বিএ/