X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে শিশু দাস শিবির!

বিদেশ ডেস্ক
২৩ অক্টোবর ২০১৬, ২১:৫৩আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ২১:৫৬

স্যাটেলাইট ছবিতে সুন্দরবনের দুবলার চর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য বাংলাদেশের সুন্দরবনে শিশুদের কয়েকটি দাস শিবিরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যেখানে কয়েকশ শিশুকে দাসের মতোই পরিশ্রম করতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেভিন বেলস স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব অস্থায়ী শিবিরের সন্ধান পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার অধ্যাপক বেলস এ প্রসঙ্গটি হাউজ অব পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিশুদের দাস হিসেবে ব্যবহারের কোনও অভিযোগ তারা পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে তিনটি এলাকা আছে যেসবকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।  তার মধ্যে সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের (ন্যাশনাল পার্ক) মধ্যে দুটি শুটকি প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে শিশুশ্রমিকদের টানা ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করানো হয় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে  সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্কের ১ হাজার ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরনো ও নতুন ছবি থেকে অধ্যাপক বেলস এসব প্রকল্পের অবস্থান শনাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছবিতে যে সব ভবন দেখা গেছে সেগুলো সত্যিকার অর্থে কোনও ভবন নয়, বরং বড় বড় তাক যাতে শিশুশ্রমিকদের থাকতে দেওয়া হয়।’

দুবলার চরে শুটকি প্রক্রিয়াকরণে কাজ করে বেশিরভাগ শিশু

অধ্যাপক বেলসের দাবি, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যা থেকে জানা গেছে, শুটকি প্রকিয়াকরণ প্রকল্পগুলোতে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়।  অনেক শিশুই কঠোর পরিশ্রম, মানবেতর জীবনযাপন ও খাবারে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলেছে। এ ছাড়াও শিশুরা রোগশোক, যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলেও জানান বেলস।

অধ্যাপক জানান, অন্তত ৯ জনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন যারা ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ওইসব অস্থায়ী শিবির থেকে পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া শিবিরগুলো স্থাপনের জন্য সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি উজাড় করা হয়েছে, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বেলস বলেন, ‘এশিয়ার সবচেয়ে বড় কার্বন শোষণের স্থান এই বন। কিন্তু এই বন কেটে উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। এই অরণ্য সমতলের মানুষকে ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দিতেও অপরিহার্য।’ 

বৃহস্পতিবার প্রফেসর বেলস এই প্রসঙ্গটি হাউজ অব পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন। তিনি আশা করছেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজরদারির জন্য একটি স্যাটেলাইট নিয়োজিত করা হবে।  তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশুশ্রম ও দাসপ্রথা বন্ধ করতে হলে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, ঘটনা ঘটার পরে নয়।’ 

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হলেও এ বিষয়ে ইউনেস্কো কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তাদের বক্তব্য এসব সংরক্ষিত এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।

কর্মকর্তারা জানান, শুটকি প্রক্রিয়াকরণের অস্থায়ী শিবিরগুলোকে কয়েক মাসের জন্য অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে জোরপূর্বক শিশুশ্রমের কোনও অভিযোগ আসেনি।’

বাগেরহাটের জেলা পুলিশ প্রধান পঙ্কজ চন্দ্র রয় জানান, সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তবে এটুকু জানেন যে সুন্দরবনের মধ্যে কিছু মাছ শুকানোর অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে।  তিনিও  বলেন, ‘কোনও অভিভাবকের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাবো।’

দুবলার চরে শুটকি প্রক্রিয়াকরণ

এদিকে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ৪৫ মিলিয়ন মানুষ ক্রীতদাসের জীবন যাপন করছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্সের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান।  অধ্যাপক বেলস বলেন, ‘যদি এই ক্রীতদাসদের একটি দেশে রাখা হতো, তাহলে দেশটি প্রায় কানাডার সমান বড় হতো। দেশটির জিডিপি হতো অ্যাঙ্গোলার মতো। কার্বন নির্গমনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতোই হতো সেই দেশ।’

বেলস জানান, এর আগে শরণার্থী শিবির ও গণকবর খুঁজে বের করার কাজে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির সাহায্য নেওয়া হয়েছিলো। এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবপাচার ও জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করা নৈমিত্তিক ঘটনা। বাংলাদেশ ও ভারতে নিপীড়ণমূলক শ্রমশোষণ হয়ে থাকে।’  তিনি আরও বলেন, ‘সরকার শ্রমিক অধিকার রক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শিশুরাও তার শিকার হচ্ছে।’  

প্রসঙ্গত, সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখণ্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ। অববাহিকার সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিস্তৃত । ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মোট বনভূমির ৩১ দশমিক ১ শতাংশ, অর্থাৎ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়েজলের এলাকা। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ওসাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।  সূত্র: টেলিগ্রাফ।

/ইউআর/এএ/

সম্পর্কিত
বিলেতে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন নতুন আসা বাংলাদেশিরা: কমিউনিটিতে প্রতিক্রিয়া
ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে ক্যামেরনের আহ্বান
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক