"নিরাপত্তাবাহিনীর যে সদস্যরা আমার দিকে ছররা ছুঁড়েছিল, তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন, কী দোষ করেছিলাম আমি?" জানতে চেয়েছে ১৪ বছরের ইনশা মুশতাক। দুচোখের দৃষ্টি হারিয়েছে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দা এই কিশোরী।
ফটোগ্রাফার আবিদ ভাট যখন ইনশা মুশতাকের ছবি তুলছিলেন, তখন সে জানলার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওই জানলার ধারে বসে থাকতে গিয়েই ছররা আঘাত করে তার চোখে। গত তিনমাসে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, কিন্তু চোখের দৃষ্টি ফিরে পায়নি ইনশা।
চিত্রগ্রাহক আবিদ ভাটকে নিজের পড়ার বইগুলো দেখাচ্ছিল ইনশা মুশতাক- "চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু আঙুলের ছোয়ায় অনুভব করতে পারি। আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম।" কথাগুলো বলার সময়ে তার চোখে পানি। কেঁদে ফেললেন ইনশার মা-ও।
তার বাবা মুশতাক আহমেদ বলছিলেন, "ও যদি গুলিতে মারাও যেত, সেই দু:খ হয়তো একটা সময়ে কাটিয়ে উঠতে পারতাম। কিন্তু চোখের সামনে দৃষ্টিশক্তি খোয়ানো মেয়েটাকে দেখে তো আমি রোজ মৃত্যু যন্ত্রণা পাচ্ছি।"
ইনশা মুশতাকের মতো ভারত শাসিত কাশ্মীরের আরও অনেকেই গত তিনমাসের কিছুটা বেশী সময়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অশান্ত হয়ে ওঠা ভারত শাসিত কাশ্মীরে ৮৯ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদের অনেকেই চোখে আঘাত পেয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মোকাবিলা করতে প্রথমবার ছররা বন্দুক ব্যবহার করা হয় ২০১০ সালে। গুলি বন্দুকের মতো মারণাস্ত্র নয় এই ছররা। সাধারণত এটি শিকারের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ছররা’র একেকটি শেল-এর মধ্যে ছোট ছোট লোহার বল থাকে। একেকটি শেলে প্রায় ৫০০টি এ রকম লোহার দানা রাখা যায়। বন্দুক থেকে এই শেল ছোড়া হলে বাইরের খোলস ফেটে গিয়ে লোহার দানাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। চোখে লাগলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ব্যাপক আশঙ্কা থাকে।
ছররা’র ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও। তবে তার আগেই ইনশার মতো বহু মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কিশোরী ইনশা নিজে কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসী। কেউ তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এলেই মুখে হাসি ফোটে তার। কখনও বা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পরিবার আর আত্মীয়দের সে নিজেই সান্ত্বনা দেয়। মাঝে মাঝে যখন কোনও আত্মীয়র হাত ধরে হাঁটতে বেরোয়, তখনও তার মুখে লেগে থাকে হাসি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
/এমপি/