X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেই ৮ মুসলিম ছাত্রনেতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ কন্ট্রোল রুম!

বিদেশ ডেস্ক
০৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:২৩আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:২৯
image

ভারতের ভোপালে আট মুসলিম ছাত্রনেতা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় যখন বিতর্ক চলছে, তখনই প্রকাশিত হলো এক অডিও টেপ, যা ওই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ওই অডিও টেপ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকেই তাদের হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অডিও টেপটির গ্রহণযোগ্যতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। 

এখানেই নিহত হন ওই আট ছাত্রনেতা

পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, রবিবার (৩০ অক্টোবর) গভীর রাতে ভোপালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কারারক্ষীকে হত্যা করে ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম ছাত্রসংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (এসআইএমআই – সিমি)-র আট সদস্য পালিয়ে যান। এর ১০ ঘন্টার মধ্যেই সোমবার সকালে ভোপালের অদূরে ইতখেড়ি গ্রামের কাছে মালিখেড়া নামক স্থানে পুলিশ ও এন্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড (এটিএস)-এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওই কারাবন্দিরা নিহত হন বলে পুলিশ দাবি করে।

কথোপকথন শুনে ধারণা করা হচ্ছে, নয় মিনিটের ওই অডিও টেপটি কন্ট্রোল রুম থেকেই ধারণ করা হয়েছে। 

অডিও টেপে কথোপকথনের শুরুতেই শোনা যায় – কন্ট্রোল রুম থেকে অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়, ‘এগিয়ে যান, পিছপা হবেন না । সবাইকে হত্যা করতে হবে!’

অপর দিক থেকে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘একেবারেই পিছপা হবো না। পুরো শেষ করতেই হবে। হ্যাঁ, আরও ফায়ারিং করছি। এখনও গুলি চালানো হচ্ছে।’

অডিও টেপে গুলি চালানোর প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়। কন্ট্রোল রুম থেকে এরপর বলা হয়, ‘ঠিকঠাক জায়গা থেকে গুলি চালিয়ে যান। এখান থেকে আরও ফোর্স যাচ্ছে। গুলি চালিয়ে যান। দেখবেন যেন ক্রসফায়ার না হয়। তাই অবস্থান ঠিক রাখতে হবে।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘চৌহান সাহেব, পাঁচজন নিহত হয়েছে, পাঁচজনের গুলি লেগেছে।’

কন্ট্রোল রুম – ‘একদম  ঠিক আছে। আমরা আসছি।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা – ‘আমরা তাদের পাহাড়ের ওপরেই ঘিরে ফেলেছি।’

কন্ট্রোল রুম – ‘দারুণ করেছেন। পাঁচজন কী নিহত?’

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা – ‘হ্যাঁ,  পাঁচজন নিহত।’

কন্ট্রোল রুম – ‘শাবাস! আর বাকিদের ছেড়ে দিবেন না।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা – ‘এখানে দু-তিনটা অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে হবে।’

কন্ট্রোল রুম – ‘চিন্তা করতে হবে না। আপনার বলার আগেই অ্যাম্বল্যান্সকে খবর দেওয়া হয়েছে।’

কন্ট্রোল রুম – ‘মন দিয়ে শোনেন। পাঁচজন নিহত হয়েছে। আর বাদ বাকিদেরও হত্যা করুন! এই কাজের জন্য দেশের লোক ১০ বছর ভোপাল পুলিশকে মনে রাখবে। এবার নিউজ দেখতে হবে। সংবাদমাধ্যমের এতো দম নেই যে, ঠিক সময়ে পৌঁছাবে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা জলদি আসছি।’

ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পর পুলিশদের উল্লাস করতেও শোনা যায় ওই অডিও টেপে।

সঞ্জীব শামি

উল্লেখ্য, গুলি করার সময় ওই ছাত্রনেতারা নিরস্ত্র ছিল বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ এটিএস-এর প্রধান সঞ্জিব শামি। বুধবার তিনি বলেন, ‘আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, কখন পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে এবং কখন হত্যা করতে পারবে। নিহতরা ছিলো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। আইন অনুসারে, পুলিশ যদি দেখে তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাহলে তারা সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করতে পারে।’

শামি আরও বলেন, ‘পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া না হলেও শক্তি প্রয়োগ করা যায়।’

নিহতদের ময়নাতদন্ত থেকে দেখা যায় যে, তাদের প্রত্যেক শরীরে বেশিরভাগ গুলিই কোমরের উপরে বিদ্ধ হয়েছিল।

ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পর বিরোধী দলীয় নেতারা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও মধ্যপ্রদেশের সরকারের কাছে ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ আট সিমি সদস্যকে হত্যার ব্যাখ্যা চেয়েছে। এ দাবি আরও প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সিমি সদস্যদের গুলি করার কয়েকটি ভিডিওতে তাদের নিরস্ত্র দেখা যায়।

ভিডিও ক্লিপ থেকে নেওয়া ছবি

ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পর ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যেখানে নিহতদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করছেন এক পুলিশ সদস্য। কিন্তু তাদের কাছে কোনও অস্ত্র দেখা যায়নি। এক পুলিশ (এটিএস) সদস্যকে দেখা যায়, এক মরদেহের প্যান্টের পকেট থেকে ছুরির মতো কিছু একটা বের করতে। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই সেখানে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়নি।

তবে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র সিং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই।’ তিনি বলেছেন, বিতর্কিত ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি তদন্ত করবে না ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্র সংগঠন এসআইএমআই বা সিমি। এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে নাশকতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে ২০০১ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার। তবে এখনও পর্যন্ত ওই সংগঠনটির কোনও সহিংস কর্মকণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি।

সূত্র: দ্য হিন্দু।

/এসএ/

সম্পর্কিত
কেক কেটে আর কাচ্চি বিরিয়ানিতে বন্ধুত্বের উদযাপন দিল্লি ও ঢাকার
শ্রীলঙ্কায় গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর তৈরি করবে চীন
কেজরিওয়ালের গ্রেফতার নিয়ে মার্কিন মন্তব্যে আপত্তি ভারতের
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’