X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত ইলেক্টোরাল সিস্টেমই জিতিয়ে দিল ট্রাম্পকে

ফাহমিদা উর্ণি
১০ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৬আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৬
image


Untitled-1 যেসব মার্কিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরা পছন্দ করেছেন হিলারি ক্লিনটনকে। জনগণের দেওয়া রায়ে হিলারির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ট্রাম্পের চেয়ে ‌১ লাখেরও বেশি। তবু লক্ষাধিক ভোট কম পাওয়ার পরও যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন, তার নেপথ্যে রয়েছে সংকটময় ও বিতর্কিত মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা। ২০১২ সালের নির্বাচনের পর যে ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। আজ সেই ব্যবস্থার কারণেই তিনি প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল প্রক্রিয়ার কারণে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) পরাজিত হতে হয় হিলারি ক্লিনটনকে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে পঞ্চম প্রার্থী, যিনি বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চারবার এমন ঘটেছিল। মঙ্গলবার সবগুলো অঙ্গরাজ্যে মোট ভোটের মধ্যে ৫ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ১২১টি (৫,৯০, ৫৯,১২১) ভোট পেয়েছেন হিলারি। অথচ জয়ী হওয়া ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৩১ (৫,৮৯,৩৫,২৩১) ভোট। সেই অনুযায়ী হিলারির চেয়ে লক্ষাধিক ভোট কম পেয়েছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল সিস্টেমের কল্যাণে সদ্য জয় পাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ইলেক্টোরাল সিস্টেমের সমালোচনা করেছিলেন। ইলেক্টোরাল সিস্টেমকে গণতন্ত্রের জন্য বিপর্যয় বলেই মনে করতেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১‌২ সালে এ নিয়ে ট্রাম্প একটি  টুইট করেছিলেন। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল আসা শুরু হওয়ার পর শোনা যাচ্ছিল মিট রমনি পপুলার ভোটে এগিয়ে আছেন, তবে ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে যাচ্ছেন। আর তা জানার পর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ইলেক্টোরাল সিস্টেমকে ‘গণতন্ত্রের জন্য বিপর্যয়’ উল্লেখ করে টুইট করেন। অবশ্য, শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামার কাছে পপুলার ইলেক্টোরাল দুই পদ্ধতিতেই হেরেছিলেন রমনি। কিন্তু এবার গত মঙ্গলবার তা ঘটেনি। ট্রাম্পের চেয়ে পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকার পরও ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে গেছেন হিলারি। যে ইলেক্টোরাল সিস্টেমকে ট্রাম্প প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন তার কল্যাণেই জয় নিশ্চিত হয় তার।

যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ প্রার্থীর জন্য যে ভোট দেন তাকে পপুলার ভোট বলা হয়। আর তাদের ভোটের ভিত্তিতে প্রার্থীরা যে সংখ্যক ইলেক্টর তাদের ভাগে পান তাকে ইলেক্টোরাল ভোট বলে।



in (1)
যখনই কোনও পরাজিত প্রার্থী জয়ী প্রার্থীর চেয়ে নাগরিকদের ভোট বেশি পান, তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি। বারবারই এ পদ্ধতি সংস্কারের দাবি উঠেছে। ছোট-বড় রাজ্যে প্রতিনিধিত্বে অসমতা বেশি লোকসংখ্যার অঙ্গরাজ্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম লোকসংখ্যার অঙ্গরাজ্যে কংগ্রেসনাল প্রতিনিধির সংখ্যা বেশি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওয়াইওমিং, ভারমন্ট ও নর্থ ডাকোটা এ তিনটি রাজ্যের কথা। এ তিনটি অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রতি ২ লাখ লোকসংখ্যার জন্য একজন করে কংগ্রেসনাল প্রতিনিধি রয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার রাজ্য-ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নিউ ইয়র্কে প্রতি ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য একজন করে মাত্র কংগ্রেস সদস্য রয়েছেন। প্রতিনিধিত্বের দিক দিয়ে যে অসমতা রয়েছে তা প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছোট জনসংখ্যার রাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের স্বর জোরালো করার সুযোগ দেয়। কেননা, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসনাল প্রতিনিধিদের সংখ্যার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেক্টর নিযুক্ত করা হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় কোনও কংগ্রেস প্রতিনিধি না থাকায় সেখানে তিনজন ইলেক্টর আপনাআপনি নিযুক্ত করা হয়। অর্থাৎ সর্বমোট ৪৩৫ জন হাউজ রিপ্রেজেন্টিটিভ, ১০০ জন সিনেটর ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিন ইলেক্টরসহ ৫৩৮ জন ইলেক্টর হিসেব করা হয় নির্বাচনে। ২. মেইন ও নেবরাস্কাকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রেই জয়ী প্রার্থীকে সবগুলো ইলেক্টর দিয়ে দেওয়া হয়। মেইন ও নেবরাস্কায় প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের সংখ্যানুপাতে ইলেক্টর বন্টন করা হয়। ইলেক্টর বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত থেকেই মূলত প্রার্থীদের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যমুখী (যেসব অঙ্গরাজ্যে ভোটারদের সিদ্ধান্ত পাল্টায়) প্রবণতা তৈরি হয়। যেহেতু এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা যেকোনও সময় তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেন, সেকারণে অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে এ রাজ্যগুলোর গুরুত্ব জোরালো হয়ে ওঠে। যেসব অঙ্গরাজ্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে না, অর্থাৎ যেখানকার মানুষ সবসময় একটি দলকেই ভোট দিয়ে আসছে সেই রাজ্যগুলোতে প্রার্থীদের প্রচারণাজনিত বিনিয়োগ খুবই বিরল ঘটনা। অর্থাৎ যেসব অঙ্গরাজ্যে সবসময় ডেমোক্র্যাট কিংবা সবসময় রিপাবলিকানদের দখলে থাকে সেখানকার ইলেক্টর পাওয়াটা ওই নির্দিষ্ট দলের জন্য নিশ্চিত থাকে। আর সেকারণে ওই এলাকায় আলাদা করে বিনিয়োগ করতে চায় না কেউ।

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেসময়কার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পেনসিলভানিয়ার প্রচারণায় ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার ইলেক্টরের সংখ্যা ২১। অন্যদিকে একই সময়ে ইলিনয়ে প্রচারণার জন্য ওবামা ব্যয় করেছিলেন মাত্র ২৫ হাজার ডলার। অথচ এ রাজ্যটির ইলেক্টরের সংখ্যা পেনসিলভানিয়ার সমান। কেননা, ওবামার প্রচার শিবির তখন ভালোভাবেই জানতো যে ইলিনয় অঙ্গরাজ্য তাদের দখলে। সেখানকার ভোট যে ডেমোক্র্যাট শিবিরের পক্ষে যাবে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। ইলেক্টোরাল কলেজের বিরোধীরা প্রতিষ্ঠানটির অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে থাকেন। মধ্যস্থতাকারী ইলেক্টর এবং অঙ্গরাজ্যভেদে যে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি রয়েছে তারও সমালোচনা করেন তারা। ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার দাবি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল ২০০০ সালে। ওই বছর অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরকে পরাজিত করেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ। অথচ সেসময় পপুলার ভোট বা আমজনতার ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী গোর জয় পেয়েছিলেন।

২০১২ সালে হাফিংটন পোস্টে লেখা এক ব্লগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাওয়ার্ড স্টিভেন ফ্রাইডম্যান বলেছিলেন, ‘যখন বিশ্বে রাজারা শাসন করতো সেসময় আমেরিকাই গণতন্ত্রের উদ্ভাবন করেছিল। আর তারপর থেকে বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্র আমেরিকান নীতিমালা অনুসরণ ও গ্রহণ করেছে। তবে তারা আমেরিকান সিস্টেমের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য বর্জন করেছে। আর তার মধ্যে ইলেক্টোরাল সিস্টেমের উইনার টেক অল পদ্ধতিটিও রয়েছে। এর বদলে তারা সংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব ঠিক করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি থেকে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনতে ন্যাশনাল পপুলার ভোট নামে একটি সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। ন্যাশনাল পপুলার ভোটের অভিযোগ, বর্তমান পদ্ধতির কারণে প্রার্থীরা গোটা দেশের বদলে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে বেশি সময় দিয়ে থাকেন।

/বিএ/

 

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি