X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-রায়ান সম্পর্কের গোলকধাঁধা

মিছবাহ পাটওয়ারী
১৭ নভেম্বর ২০১৬, ০০:০২আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ০১:০৩

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পল রায়ান নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনয়ন লড়াইয়ের সময় তাকে সমর্থন দিতে এক মাসেরও বেশি সময় নিয়েছিলেন হাউস স্পিকার পল রায়ান। রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরও জারি ছিল সেই সমর্থন। এক পর্যায়ে ট্রাম্প যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হলে তার প্রচারণা থেকেও সরে দাঁড়ান রায়ান। তবে খানিক বিরতির পর আবারও ফিরে আসেন প্রচারণায়। সবকিছুর পরও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর গত কয়েক দিনে অভিবাসী প্রশ্ন, সীমান্ত সুরক্ষা, অবকাঠামো, মুক্ত বাণিজ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ, সমকামসহ বেশকিছু ইস্যুতে দুই রিপাবলিকানের মধ্যকার নীতিগত পার্থক্য স্পষ্ট হয়। এসব নিয়ে রায়ান সরবও ছিলেন গত কয়েকদিন। তবে মঙ্গলবার ট্রাম্পের অফিসিয়াল সমর্থন নিয়েই রায়ান স্পিকার হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। ট্রাম্পের জয়কে আমেরিকান জনগণের সত্যিকারের অগ্রগতিতে রূপান্তরিত করার শপথও নেন তিনি। নীতিগত ও মতাদর্শিক পার্থক্য সত্ত্বেও এই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আর দলের শীর্ষ প্রভাবশালী নেতার এই পারস্পরিকতা যেন ট্রাম্প-রায়ান সম্পর্কের গোলকধাঁধাকেই নির্দেশ করে।

মনোনয়নের সময় ট্রাম্পের প্রচণ্ড বিরোধিতা করলেও এক পর্যায়ে এসে রায়ান জানান, তিনি নিজের দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। ট্রাম্পের প্রচারণাতেও অংশ নিচ্ছিলেন তিনি। তবে গত মাসের (অক্টোবর) শুরুতে ট্রাম্পের ২০০৫ সালের এক নারীবিদ্বেষী ভিডিও প্রকাশের পর রায়ান বলেছিলেন, তিনি আর ট্রাম্পের প্রচারণায় থাকবেন না। তবে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন তিনি। সে সময় রায়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্ধারিত এই প্রচারণা নিশ্চিত কিনা তা আমরা জানি না, তবে আমি এতে থাকতে চাই। এখান থেকে আমরা মুকোনাগোতে মাইক পেন্সের সঙ্গে প্রচারণা চালাবো। তাই প্রত্যেকের নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে এসে কিছুটা হলেও উল্টেপাল্টে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থী আসবেন, আমরা প্রচারণা চালাবো।’ রায়ান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক চূড়ান্ত বিরোধমূলক থাকলেও এক পর্যায়ে রায়ান তা থেকে বের হয়ে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন।

৮ নভেম্বরের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের জয়ের পর ট্রাম্প-রায়ান সম্পর্ক ভিন্নমাত্রা পায়। একদিকে দুইজনই দলীয় সম্মিলন ও ঐক্যের কথা বলেন। ট্রাম্প স্পিকার হিসেবে রায়ানকে সমর্থন দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করেন। রায়ান ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরকিাকে যথার্থ জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। অন্যদিকে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে দুই নেতার মধ্যকার মতাদর্শিক পার্থক্য আর নীতিগত অনৈক্য। সেই দ্বন্দ্বের প্রথম আভাস মেলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দুই নেতার দেওয়া দুটি সাক্ষাৎকারে।

বিজয়ী হওয়ার পর শুক্রবার সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে হয় দেশছাড়া করা হবে নতুবা তাদের জেলে ঢোকানো হবে। ‘৬০ মিনিটস’ নামের ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তারা এখানে অবৈধ। এর আগে গত আগস্টে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পল রায়ান

শুক্রবার সিবিএস টেলিভিশনকে ট্রাম্প যে সাক্ষাৎকার দেন তার কয়েক দিনের মাথায় সিএনএন-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে পল রায়ান বলেন, লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে গণহারে নির্বাসনে পাঠানো ট্রাম্পের অগ্রাধিকার হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের ফোকাস নয়; অভিবাসন ইস্যুর চেয়ে বরং এর আগে আমাদের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। আমরা বলপূর্বক লোকজনকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা করছি না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কোনও পরিকল্পনা করছেন না।’

সিবিএস টেলিভিশন-এর ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির অন্যতম মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে এই ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক বলেন, ওই সীমান্তের পুরোটা ইট ও মর্টারে তৈরি নাও হতে পারে। কিছু অংশে বেড়া নির্মাণ করা হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকায় দেয়াল নির্মাণই অধিক যুক্তিসঙ্গত। এটা প্রায় দুই হাজার মাইল এলাকাজুড়ে হতে পারে। ব্যয় হতে পারে কয়েক বিলিয়ন ডলার। এ বিষয়ে আমি খুব দক্ষ। এটাকে বলে কনস্ট্রাকশন। নির্বাচনি প্রচারণায় অবশ্য মেক্সিকো সীমান্তে কংক্রিট ও স্টিলের দেয়াল তোলার কথা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টেলিভিশনে যেদিন ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় সেদিনও এ সংক্রান্ত নতুন আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পল রায়ান। পল রায়ান বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ রিপাবলিকান সরকার অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসনকে স্বাস্থ্যসেবা, কর, আইন ও সীমান্ত নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো ঢেলে সাজানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন। পল রায়ান বলেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং তার ভবিষ্যৎ কংগ্রেস এখনও জানে না কিভাবে তারা এসব পরিবর্তন সাধন করবেন।

এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বারাক ওবামা প্রশাসনকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে এসেছে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। রায়ান বলেছেন, এতদিন ধরে যারা ওবামার এ নীতিতে সমর্থন দিয়ে এসেছেন তারা চীন ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতে উচ্চ হারে ট্যারিফ আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে পুরোপুরিভাবে একমত নন। পল রায়ানের ভাষায়, ‘কোনও ট্যারিফ নয়; কোনও বাণিজ্য যুদ্ধ নয়।’ কিছু সাধারণ বিষয়ে রিপাবলিকান পার্টি নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে পারে বলেও মনে করেন পল রায়ান। তিনি বলেন, ট্রাম্প আমেরিকাকে আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে চাইছেন।

নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘হেলথ কেয়ার বিল’ (ওবামাকেয়ার নামেও পরিচিত) বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর সুর বদলে বলেছেন, সেটি বাতিল নয় বরং পরিমার্জন করবেন। একইসঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল কেলেঙ্কারির তদন্তেও গুরুত্ব না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান পার্টিও ওবামার ‘হেলথ কেয়ার বিল’-এর কিছু বিষয় রাখার পক্ষপাতী বলে ইঙ্গিত দেন পল রায়ান। বহুল আলোচিত ওই ‘হেলথ কেয়ার বিল’ পুরোপুরি বাতিল করা হলে দুই কোটি মানুষ তাদের স্বাস্থ্যবীমা হারাবেন। স্পিকার পল রায়ান বলেন, ‘আয় ও অবস্থান নির্বিশেষে আমেরিকায় আমাদের সবার একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা থাকবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যানন

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের প্রতি অবশ্য আস্থার কথা জানিয়েছেন পল রায়ান। তবে ট্রাম্পের এ সহযোগীদের মধ্যে একটি ডানপন্থী মিডিয়া গ্রুপের প্রধান স্টিভ ব্যানন-এর মতো ব্যক্তিরাও রয়েছেন। স্টিভ ব্যানন-এর ওয়েবসাইট ব্রেইবার্ট-এ প্রকাশ্যেই বর্ণবাদী, যৌন বিষয়ক, সমাকামভীতি এবং অ্যান্টি সেমিটিক লেখা প্রকাশিত হয়। এসব লেখা পড়তেই লোকজন তার সাইটে প্রবেশ করেন। স্টিভ ব্যানন-এর ব্যাপারে পল রায়ান বলেন, ‘এই লোককে আমি কখনও দেখিনি। স্টিভ ব্যানন-এর সঙ্গে আমার কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। তাই আমার কোনও উদ্বেগ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে।’ পল রায়ান বলেন, আমার বিশ্বাস ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের স্টাফ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা চমৎকার কাঠামো তৈরি করছেন। তিনি একজন সফল ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সফল ব্যক্তিদের বেষ্টনীতেই রাখেন। ফলে আমার এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী যে, এখানেও তিনি একই কাজ করতে যাচ্ছেন।

নানা ইস্যুতে পল রায়ানের সঙ্গে ট্রাম্পের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের বিষয়টি সামনে এলেও নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার। তিনি বলেন, আমি সব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ হাজির করছি না। যে আইন এখনও লেখাই হয়নি সে বিষয়ে আমি যাচ্ছি না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে  পুৃরনো দিনের বৈরী সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে সিএনএনকে পল রায়ান বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমি অতীত ঘাঁটতে যাচ্ছি না। আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’ মঙ্গলবার ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক সমর্থন নিয়ে সেই রায়ান স্পিকার হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। ট্রাম্পের জয়কে আমেরিকান জনগণের সত্যিকারের অগ্রগতিতে রূপান্তর করার শপথ নেন। বলেন, ‘একইসঙ্গে আমরা স্বীকার করছি যে আমাদের সামনে অনকে অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দেশকে আগের মতো সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমাদের কোনও কিছুকে পাত্তা দেওয়া যাবে না এবং বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’ এই বড় ধরনের পরিবর্তন কি ট্রাম্পের সঙ্গে রায়ানের মতাদর্শিক দূরত্ব কমার ইঙ্গিত? তা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

/বিএ/

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!