X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায় মমতার তৃণমূল কংগ্রেস

চিত্ত বিশ্বাস, কলকাতা
২১ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৫৫আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৫৫

নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দোপাধ্যায় ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তে চটেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপ্রদেশে এক নির্বাচনি সভায় এ নিয়ে মমতার নাম নিয়েই তার ক্ষোভের পাল্টা জবাব দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ভাষায়, ‘যার মদদে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো কোটি কোটি রুপ লুট করেছে, তিনি আজ আমায় প্রশ্ন করছেন?’ মোদি’র এমন আক্রমণের জবাব রবিবার ফেসবুকে পোস্ট করা এক কবিতার মাধ্যমেই দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসবের মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি’র শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চা‌য় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। ফেসবুকে পোস্ট করা ‘ছিঃ’ শিরোনামের কবিতাটি এখানে পুরো তুলে দেওয়া হলো:

ছিঃ

নোট বাতিলের বাতুলতা
গরিব মানুষের আকুলতা
মানসিক বিষাদগ্রস্ত মানবিক প্রাণ। 
নবান্ন? আসার আগেই 
অগ্রহায়ণের বিসর্জন।

জানি না কেন এ হঠাৎ আকাল
কোন বাধ্যতার? সকালেই বিকাল?
উদাস চোখে উষ্ণ তীক্ষ্ণতা
অপেক্ষা জানে না, প্রতীক্ষার একাগ্রতা।

তুমি মহারাজ, ভুগছে জনতা
জ্ঞানের দর্শনে ফুলঝুরি! দাম্ভিকতা
কেউ দেখেনি এ আগ্রাসী উগ্রতা! 
ছিঃ ধিক্ সরকার, সর্বনাশের বারতা।

মহারাজ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদিকে। তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে নোট বাতিলের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তথা মোদির বিরুদ্ধে কতটা আক্রমণাত্মক, এই কবিতাটি সেটা আরও এক বার প্রমাণ করে দিলো।

বিজেপি তো বটেই, সেই সঙ্গে বিজেপি-বিরোধী আবার তৃণমূলেরও বিরোধী এমন রাজনৈতিক দলগুলোও মমতার এই আক্রমণাত্মক মেজাজকে অন্য চোখে দেখছে। কংগ্রেস বা সিপিএম-এর মতো দলগুলোর বক্তব্য, মমতা যে নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন, তার মধ্যে তৃণমূলের স্বার্থ জড়িত। তৃণমূল-বিরোধীদের ব্যাখ্যা, সারদা-নারদার কোটি কোটি রুপি নগদে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের কয়েকজন নেতার জিম্মায় রয়েছে। এরমধ্যে অচল হয়ে যাওয়া ৫০০ ও এক হাজার রুপির নোটও রয়েছে। সেজন্যই মমতা এত বেশি সুর চড়িয়ে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।

তৃণমূলের একজন শীর্ষ নেতা সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। সারদা, নারদার রুপি আমাদের কাছে আছে বলে নেত্রী দিল্লিতে ছুটবেন? বর্তমান ঘটনার প্রেক্ষাপটে তিনি সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরি করতে চান।’ ওই তৃণমূল নেতার কথায় যেটা অব্যক্ত থাকলো সেটি হচ্ছে, মমতা শুধু জোট তৈরি করতে নয়, তার নেতৃত্বও দিতে চান।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মমতা গোড়া থেকেই একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বাকি সব দলগুলোকে। মমতা মনে করেন, কেন্দ্রের এই বিজেপি সরকার ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। এর অনেকগুলোই রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচিত, বিজেপি-বিরোধী দলগুলির সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত এবং রাজ্য সরকারকে টপকে রাজ্যের কর্মকর্তাদের ওপর সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

মমতা দুই-দুইবার বিপুল ভোটে জিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিয়ামক হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তার নতুন নয়। প্রথমবার সেই আকাঙ্ক্ষার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল, যখন তিনি মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ’র প্রার্থী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মনোনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন। মমতা তখন ইউপিএ’র শরিক। আবার ইউপিএ থেকে বেরিয়ে এসে ভারতের খুচরা বাজারে বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আক্রমণ শানান, এমনকি সিপিএম’কেও পাশে চান। আবার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে তার মনে হয়েছিল, কংগ্রেস, বিজেপি’র জোট কেউই একার শক্তিতে সরকার গড়তে পারবে না। এর ফলে উত্থান হবে এক তৃতীয় শক্তি বা থার্ড ফ্রন্টের, যার চালিকাশক্তি থাকবে মমতার হাতে।

এখনও পর্যন্ত একবারও সর্বভারতীয় পরিসরে মমতার এই পদচারণা সফল হয়নি। এমনকি নোট বাতিল নিয়ে আন্দোলনেও তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছাড়া কাউকে সেভাবে পাশে পাননি। কারণ, বিজেপি-বিরোধী দলগুলোর প্রায় সবাই এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের হেনস্থা নিয়ে সরব হয়েছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ততটা তোলেনি। তাদের ব্যাখ্যায়, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুললে আম জনতার মনে হতে পারে, কালো টাকার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হচ্ছে, সেটা হিতে বিপরীত হবে। মমতা আবার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে অনড়।

তৃণমূলের প্রবীণ নেতা ও রাজ্যের একজন বর্ষীয়ান মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার রাজনীতি আর সর্বভারতীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা খেলা। বাংলায় প্রবল শক্তিধর ও জনপ্রিয়, হাতে একগাদা এমপি, এমনটা হলেই কেউ সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সফল হবেন, তা নয়। মাঝেমধ্যে দিল্লি গেলেই শুধু হবে না, সেজন্য রাজধানীতে পড়ে থাকতে হয়।’ তবে মমতার সমালোচনা করলেও কংগ্রেস নেতারা একটা অন্য ভয় পাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যেভাবে এখন মমতা বিজেপি’র বিরোধিতা করছেন, তাতে মুসলিম ভোটের প্রায় সবটাই ওর দিকে জড়ো হবে। তাতে কংগ্রেস এই রাজ্যে আরও বিপাকে পড়বে।’

/এমপি/

সম্পর্কিত
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া