X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবছে না বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো

বিদেশ ডেস্ক
২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩০আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩১
image

 

শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবছে না বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাজ করছেন যে শ্রমিকরা, তাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবছে না আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কেবল ওয়ালমার্ট আর গ্যাপ-এর জন্য পোশাক তৈরিকারী কারাখানাগুলোতে ১,৭৫,০০০ শ্রমিক কাজ করছেন প্রয়োজনীয় ফায়ার এক্সিট ব্যবস্থা ছাড়াই। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ৪টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বতন্ত্র ধারার এক সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারখানা সংস্কারে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রয়োজনীয় অর্থ দিচ্ছে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে কারখানা মালিকদের প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদও দিতে পারছেন না তারা। সবমিলে ওই প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়েছে, যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রশ্নটি উপেক্ষা করে কাজের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে কারখানাগুলোকে।
রানা প্লাজা ভবন ধসের পর পোশাক কারথানাগুলোতে নিরাপত্তা ও যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে এইচ এন্ড এম এর নেতৃত্বে এবং আদিদাস, বেনেটন, মার্কস অ্রান্ড স্পেনসার, টেসকোসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি জোট গঠিত হয়। অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্রান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ নামের ওই জোটে অন্তভূক্ত হতে অস্বীকৃতি জানায় গ্যাপ, টার্গেট এবং ওয়ালমার্টের মতো আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের পক্ষ থেকে বিকল্প হিসেবে অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি নামের সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়। সোমবার (২১ নভেম্বর) ওই দুই জোটভূক্ত সংগঠনে থাকা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে কাজ করে, এমন ১৭৫টি কোম্পানির ওপর জরিপ চালিয়ে ‘ডেঞ্জারাস ডিলেইস অন ওয়ার্কার সেফটি’ নামের স্বতন্ত্র প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনেই অ্যালায়েন্স জোটকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে অপর জোট অ্যাকর্ড-এর কারখানাগুলো সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক ফলাফল ওই গবেষণায় উঠে আসেনি।


গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশের কারখানার পরিবেশ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম, দ্য ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম, দ্য ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইন এবং ম্যাকিলা সলিডারিটি নেটওয়ার্ক সমন্বিতভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, অ্যালায়েন্স যে কারখানাগুলো পরিদর্শন করছিল সেগুলো নিজস্ব ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে কর্মপরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ালমার্টের ৬২টি কারখানায় ১, ২০, ০০০ শ্রমিক প্রয়োজনীয় ফায়ার এক্সিট ছাড়াই কাজ করছে। একইভাবে গ্যাপের জন্য পোশাক তৈরিকারী ৫৫,০০০ শ্রমিক কাজ করেন প্রয়োজনীয় ফায়ার এক্সিট ছাড়াই।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, অ্যালায়েন্স ভোটভূক্ত ৫২ শতাংশ কারখানায় টেকসই ফায়ার এক্সিট ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে। ৬২ শতাংশ কারখানা ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করে না। এবং ৪৭ শতাংশের বড় ধরনের এবং অসংশোধিত কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। ওই জরিপ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান আরও জানায়, সংস্কার আনার ক্ষেত্রে কারখানাগুলোর সময়সীমা পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে। কর্ম পরিবেশের উন্নয়নের জন্য যাদের হাতে ২০১৪ সাল কিংবা ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় ছিল তাদের সময়সীমা ২০১৮ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ অ্যালায়েন্সের চুক্তির সময়সীমা ২০১৮ সাল পর্যন্তই। 



প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালায়েন্স তাদের আওতাধীন কারখানাগুলোর ১০৭টি-ই ‘অন ট্র্যাকে’ আছে এবং ৯৯টি কারখানা এক বা একাধিক নিরাপত্তা ক্যাটাগরির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়, ‘অ্যালায়েন্স কখনও সেফটি ডেডলাইন এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নিজেদের কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। তাছাড়া, জীবন-সুরক্ষামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যেখানে এক বছরেরও কম সময় লাগার কথা সেখানে কেন কারখানাগুলোকে চার বছর সময় দেওয়া হচ্ছে, তাদেরকে ‘অন ট্র্যাকে’ আছে বলা হচ্ছে তারও ব্যাখ্যা দেয়নি অ্যালায়েন্স।’
তবে জরিপ প্রতিবেদনটির গবেষণা পদ্ধতিকে অযথার্থ উল্লেখ করে প্রাপ্ত ফলাফল নাকচ করে দিয়েছে অ্যালায়েন্স। তাদের অভিযোগ, পুরনো ও অযথার্থ তথ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জেমস মরিয়ার্টি বলেন, ২০১৮ সালে যখন চুক্তি শেষ হবে সে সময় নাগাদ কারখানাগুলো যে রিটেইলারদের চাহিদামাফিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে সে ব্যাপারে তার ‘সম্পূর্ণ আস্থা’ রয়েছে।

গার্ডিয়ানের কাছে মরিয়ার্টি দাবি করেন, তারা অ্রাকর্ডের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন এবং কর্মপরিবেশজনিত ইস্যুতে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে থাকা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। একই ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করার পরও দুটি সংগঠনের কাছে কারখানা সংক্রান্ত তথ্য ভাগ হয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মরিয়ার্টির অভিযোগ, অ্যাকর্ড সদস্যরা নিয়মিত আপডেট পায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কারখানা পরিদর্শনের চেয়ে মাসে একবার লোকজনের পাঠানো ইমেইলের নির্ভরযোগ্যতা কী করে বেশি হতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মরিয়ার্টি বলেন, ‘আমি আমার ইঞ্জিনিয়ারদের ভরসা করি। তারা আমার কাছে মিথ্যা বলছে না এবং আমিও যখন তা কাগজে লিখছি তখন মিথ্যা করে লিখছি না।’ যারা কারখানার অতীত ও বর্তমান অবস্থা জানেন, সেইসব ব্যক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে এক বছরের মধ্যে কর্মপরিবেশ ঠিক করার ব্যাপারটি হাস্যকর ঠেকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে প্রতিবেদনের গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছেন ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম-এর নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভা। তার দাবি, ‘অ্যাকর্ডের কর্মীরা স্ট্যাটাসে যেকোনও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভালো জানে এবং কারখানার ম্যানেজারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। এর পর তারা তাদের রিপোর্ট আপডেট করে।’ ‘অগ্রগতির রিপোর্ট না করার ক্ষেত্রে তাদের কী এমন উৎসাহ থাকতে পারে?’ প্রশ্ন করেন তিনি। নোভার দাবি, অ্যালায়েন্সের চেয়ে অ্যাকর্ড দ্রুত ইস্যুগুলোকে শনাক্ত করে। তাদের স্বচ্ছতার জন্যও প্রশংসা করেন নোভা।
অগ্রগতির স্বলপতার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন নোভা। তিনি বলেন, অগ্রগতি আনার জন্য কারখানার মালিকদের ওপর রিটেইলাররা খুব একটা চাপ দিচ্ছে না এবং সংস্কার কাজে কারখানা মালিকদের সহায়তার জন্য যথেষ্ট টাকাও দিচ্ছে না।
এদিকে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রটি আরও উন্নত করতে জানুয়ারি থেকে ফেয়ার ফ্যাক্টরিজ ক্লিয়ারিংহাউস (এফএফসি)-এর ওয়েবসাইটে অ্যালায়েন্সের প্রত্যেকটি কারখানা পরিদর্শনের তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান অ্যালায়েন্স-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মরিয়ার্টি। অ্যাকর্ডও এ একই সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে।
/এফইউ/বিএ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া