গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অঙ্গরাজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করতে গ্রিন পার্টির নেত্রী জিল স্টেইন অনলাইনে যে তহবিল খুলেছেন সেখানে এরইমধ্যে ২৫ লাখ ডলার জমা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, ইউরোপীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ ওই পরিমাণ অর্থ সংগৃহীত হয়। এর আগে বুধবার জিল স্টেইনের প্রচারণা শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তিনি ভোট পুনর্গণনার আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যে পরিমণ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে তা উইসকনসিনে আবেদন করার জন্য যথেষ্ট। তবে বাকি দুই অঙ্গরাজ্যের জন্য আরও অর্থ লাগবে। অবশ্য উইসকনসিনে আবেদনের মেয়াদ শুক্রবার শেষ হলেও অপর দুই অঙ্গরাজ্যে আরও কয়েকদিন সময় পাওয়া যাবে।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফলাফলে হ্যাকিংজনিত কারচুপির অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হয়ে ওঠার পর জিল স্টেইনের প্রচারণা শিবির থেকে আবেদনের প্রস্তুতির ঘোষণা দেওয়া হয়। গার্ডিয়ানের দাবি, বিপুল সংখ্যক অ্যাকটিভিস্ট এবং অ্যাকাডেমিশিয়ান এই দাবি তুলেছেন। তারা মনে করছেন, বিদেশি হ্যাকাররা পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও মিশিগান এ তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিন অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হিলারির প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আর বৃহস্পতিবার গার্ডিয়ান জানায়, ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন জানাতে গ্রিন পার্টির নেত্রী জিল স্টেইনও তৎপরতা শুরু করেছেন। এ কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহে অনলাইনে একটি পেজও খুলেছেন তিনি। স্টেইন জানিয়েছেন তিনটি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল রিভিউ করার জন্য কয়েক লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে হবে। গার্ডিয়ান জানায়, ইউরোপীয় সময় বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত স্টেইনের তহবিলে ২০ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ হয়। আর ভোর ৫ টা নাগাদ তা ২৫ লাখে পৌঁছায়। উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন জানাতে এর চেয়ে কম টাকা লাগবে। উইসকনসিনে চ্যালেঞ্জ জানানোর শেষ সময় শুক্রবার। বাকি দুটি অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানানোর সময়সীমাও আলাদা আলাদা। বুধবারের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। স্টেইনের ওই তহবিল সংগ্রহের পেইজে বলা হয়েছে, তিন অঙ্গরাজ্যে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে স্টেইন বলেন, ‘ভোটে অনিয়ম হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ থাকার দাবি ওঠায়’ আমি এ পদক্ষেপ নিয়েছি। মোট ভোটের হিসেবে যে উল্লেখযোগ্য অসামঞ্জস্য রয়েছে তা ডাটা বিশ্লেষণ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে।’
স্টেইন আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে এ উদ্বেগগুলোর বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এমন নির্বাচন চাই যার ওপর আমাদের আস্থা থাকবে।’
বুধবার গার্ডিয়ানের খবরে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, কংগ্রেশনাল কমিটি এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে কারচুপির প্রমাণসমেত ওই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির করা হবে। ভোট পর্যালোচনায় গঠিত মার্কিন সরকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট কমিশন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের একটি দল মিলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে বলে জানায় গার্ডিয়ান।
এদিকে ভোট পর্যালোচনায় গঠিত মার্কিন সরকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট কমিশনের একজন উপদেষ্টা বারবারা সিমন্স বুধবার গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি ভোট পুনগণনায় আগ্রহী’। ভোট-পরবর্তী ব্যালট পেপারগুলো আবারও পরীক্ষানীরিক্ষা করে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। ফলাফল পর্যালোচনায় নিজের অন্তর্ভূক্তির ধরন সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি সিমন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের একটি দলও সিমন্সের সংগঠনের সঙ্গে মিলে ফলাফল পর্যালোচনার দাবি তুলছেন। তারা আগেই গুরুত্বপূর্ণ তিন অঙ্গরাজ্যে হ্যাকিংয়ের দাবি তোলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের ওই দল ওই প্রমাণ পাওয়ার পর পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ফলাফল চ্যালেঞ্জের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এখনও কারচুপির অকাট্য প্রমাণ পায়নি ডেমোক্র্যাটরা। তাই ফলাফল চ্যালেঞ্জের ব্যাপারেও কোনও সিদ্দান্ত নেননি হিলারি।
উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট ছিল যথাক্রমে ১০, ১৬ ও ২০। প্রতিটিতে জিতেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং আইনজীবীরা গত বৃহস্পতিবার হিলারির শীর্ষ সহযোগীদের কাছে এ তিন অঙ্গরাজ্যের ভোটে কারসাজি বা হ্যাক করার প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
/এফইউ/