X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব কান্নায় ভারি হয়ে গেছে শোকাতুর হাভানার আকাশ

বিদেশ ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৫৬আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৫৯
image

নীরব কান্নায় ভারি হয়ে গেছে শোকাতুর হাভানার আকাশ কাঁদছে হাভানা। কাঁদছে ফিদেলের জন্য। যিনি তার মতাদর্শে বিশ্বাস করতেন আর যিনি বিশ্বাস করতেন না, যিনি তার কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে ভালোবাসলেও কর্তৃত্ববাদী শাসনপ্রণালীকে ঘৃণা করতেন, যিনি তার মার্ক্সবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী আবার যিনি মাক্সর্বাদবিরোধী, যিনি তার ষাটের বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী আবার যিনি তাকে স্রেফ একনায়ক মনে করতেন; সেই সবাই যেন নীরবে কাঁদছে ফিদেলের জন্য। কেননা, খুবই মুষ্টিমেয় একটা অংশের কথা বাদ দিলে এরা সবাই ফিদেলকে ভালোবাসেন। এরা কমিউনিজম-এর পক্ষের মানুষ হোক আর বিপক্ষের মানুষ হোক, এরা সবাই ফিদেলিস্তা, কাস্ত্রোর একনিষ্ঠ ভক্ত।

শুক্রবার রাত ১০টা ২৯ মিনিটে মারা যান ফিদেল কাস্ত্রো। এর এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয় নেতার মৃত্যুর খবর জানান। তবে ওই সময়ে খুব কম মানুষই অনলাইনে ছিলেন। বেশিরভাগ মানুষ মূলত রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমেই খবরটি পেয়েছিলেন। আর অনেকেই ছিলেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু সংবাদ অপ্রত্যাশিত ছিল না। জীবনের শেষ মাসগুলোতে এই বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন। প্রকাশ্য বিবৃতিকেও গুডবাই জানিয়েছিলেন তিনি। তবে অনেকের জন্য; বিশেষ করে যারা ১৯৬০-এর দশকের মানুষ তাদের জন্য এটা ছিল একটা বড় আঘাত।

কিউবার দক্ষিণাঞ্চলের এক শহরতলীর বাসিন্দা লিও রদ্রিগেজ। টেলিভিশনে ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু সংবাদ দেখার পর তার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময়ের জন্য শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন।

ফিদেল কাস্ত্রো

লিও রদ্রিগেজ বলেন, ‘এল কাবালো মারা গেছেন।’ এরপর তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর ‘দ্য হর্স’ উপনামটি উচ্চারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য যারা ফিদা, তাদের বলা হয় ফিদেলিস্তা। এমনই এক ফিদেলিস্তা কিউবার একটি বিমানবন্দরে কর্মরত এক কর্মী। এখনও পর্যন্ত জাতীয় দিবসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের জানালায় বিপ্লবের পতাকা উড্ডয়ন করেন তিনি। তরুণ কমিউনিস্টদের ইউনিয়নে স্ত্রী ক্লারিতা’র সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গৃহায়নে ভর্তুকি, ফ্রি ইউনিভার্সিটি এজুকেশন এবং ফ্রি হেলথকেয়ার। এরমধ্যে বিশেষ করে ফ্রি হেলথকেয়ার-এর ফলে তিনি নিজেও উপকৃত হন। তার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার কন্যাকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ডাক্তার দেখাতে হয়।

জনগণকে এমন নানা সুবিধা দিয়েছিলেন কিউবান বিপ্লবের নায়ক সদ্যপ্রয়াত ফিদেল কাস্ত্রো। ফলে আশা করা হচ্ছে, প্রিয় নেতাকে সম্মান জানাতে রাজধানীতে ছুটে আসবেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। সেখানে প্লাজা দে লা রেভলিউশন-এ তাকে সম্মান জানাবেন তার হাজারো ভক্ত। ক্লারিতার ধারণা, ওই সময়টাতে প্লাজা দে লা রেভলিউশন মানুষের পদচারণায় উপচে পড়বে।

মহানায়কের প্রস্থানে শোকাহত ক্লারিতার প্রতিবেশীরাও। নিজ প্রজন্মের অন্য অনেকের মতোই বাক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধকে ঘৃণা করেন ৩৬ বছরের মারিয়ানা ভালদেস। কিউবার দীর্ঘ ‘একনায়কতন্ত্রের’ অবসান কামনা করেন তিনি। তবে মহানায়কের মৃত্যু সংবাদে তিনিও কেঁদেছেন।

মারিয়ানা ভালদেস-এর ভাষায়, ‘অবশ্যই আমি কেঁদেছি। আমরা কিউবানরা কমিউনিস্ট না হলেও ফিদেলিস্তা।’

অন্যান্য শহরগুলোতেও প্রিয় নেতার জন্য মানুষের বেদনার অনুভূতি ছিল লক্ষ্যণীয়। ৫৯ বছরের একজন গৃহিনী মার্সিডিজ কোপা। তিনি বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ। বহু কিউবান শঙ্কিত।’

ইরমা গুজমান নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ফিদেলের মৃত্যুতে একটা অনিশ্চিত সময়ের যাত্রা শুরু হলো। সম্ভবত কিউবার ইতিহাসে আজ একটি নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।’

কিউবার বাইরে থাকা বহু প্রবাসীরাও স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। কিউবান সাংবাদিক মারিতা পেরেজ ডিয়াজ। দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তার দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু নিজের জীবনে দেখা এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে মারিতা নিজেও হতবিহবল হয়ে পড়েছেন।

ফিদেল কাস্ত্রো

মারিতা পেরেজ ডিয়াজ-এর ভাষায়, ‘এটা একটা বিশাল ঘটনা। এটা একটা যুগের প্রতীকস্বরূপ ব্যক্তির মৃত্যু। এটা আমার মা-বাবা এবং দাদা-দাদীর প্রজন্মকে গভীরভাবে বিচলিত করবে। এমনকি তরুণ-যুবাদেরও – যারা কাস্ত্রোর সব দোষ সম্পর্কে জানেন। একইসঙ্গে তারা তাকে সম্মান করেন; তার প্রশংসাও করেন। তিনি ২০ শতকের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন; যার চিন্তাভাবনা নিয়ে গবেষণা করা হবে।’

দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষায় থাকা গণতান্ত্রিক কর্মীদের জন্য অবশ্য ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর খবর চাঙ্গাভাবই নিয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট রোজা মারিয়া পিয়া বলেন, ‘বিপ্লবী নেতার মৃত্যু কিউবার প্রত্যাশিত পরিবর্তনের সূচনামাত্র।’ টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ সন্ত্রাসের প্রতীকের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু সন্ত্রাসের নয়। আমরা এখনও সর্বগ্রাসী অবস্থায় নিপতিত রয়েছি।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/বিএ/

আপ - /এসএ/

সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
সর্বশেষ খবর
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা