X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
রয়টার্সের বিশ্লেষণ

ট্রাম্পের উত্থান আর কাস্ত্রোর মৃত্যু: কেমন হবে কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

বিদেশ ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:০৯আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ২০:২৮
image

ফিদেল কাস্ত্রো-১
কিউবায় মার্কিন সরকারের মদদপুষ্ট ‘বে অব পিগস অভিযান’ থেকে শুরু করে হাভানায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঐতিহাসিক সফর পর্যন্ত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কিউবানদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে যুক্তরাষ্ট্র যখনই কিউবার দিকে তাকায়, ফিদেল কাস্ত্রো তখন মুখ ফিরিয়ে নেন। কাস্ত্রোর কণ্ঠে বার বার একটি কথাই উচ্চারিত হয়েছে-‘মার্কিন সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না।’ যৌক্তিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতেন তিনি। দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র আর কিউবার অর্ধ শতকের তিক্ততা ঘুচিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। তবে পাল্টেছে প্রেক্ষাপট। কিউবা প্রশ্নে ওবামা যে পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন, যে সুরে কথা বলতে চেয়েছেন তার থেকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান যে অনেক ভিন্ন তা এরইমধ্যে পরিষ্কার। আর তাই বিপ্লবী নেতা ফিদেলের মৃত্যুর পর কিউবানরা আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মার্কিন সরকারকে ভরসার প্রশ্নে। তাদের আশঙ্কা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে শুরু হওয়া বাণিজ্য ও ভ্রমণবিষয়ক সম্পর্কের দরোজা আবারও বন্ধ করে দেবেন। অবশ্য অনেক কিউবান আবার মনে করছেন, ফিদেলের দেখানো পথ ধরে তারা এগিয়ে যাবেন এবং ট্রাম্পকে মোকাবেলা করবেন।

১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন কাস্ত্রো। ১৯৬১ সালে বে অব পিগস-এ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সমর্থিত একটি বিপ্লববিরোধী অভিযান ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এক বছর পর কিউবান মিসাইল সংকটকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন কাস্ত্রো। ৪৯ বছর ধরে কিউবার ক্ষমতায় থাকাকালীন দশজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বদল হতে দেখেছেন তিনি আর তাদের সঙ্গে তিক্ততার সম্পর্ক ছিল কাস্ত্রোর। ২০০৮ সালে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর জোরালো রেখেছিলেন তিনি। কিউবানদের বার বার সতর্ক করে বলেছিলেন, মার্কিন সরকারকে আস্থা করা যায় না।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো বিরোধ অবসানের বিষয়ে একমত হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং টেলিযোগাযোগ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক করার বিষয়ে চুক্তি সই হয়।

কিউবার এক দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উদারীকরণ করতে ওবামা প্রশাসনকেও খুব একটা সুযোগ দেননি ফিদেলের ছোট ভাই রাউল। তারপরও সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্লেখযোগ্য সমঝোতা। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে সমঝোতাকে বাস্তবায়িত করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

বারাক ওবামা ও রাউল কাস্ত্রো
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনি প্রচারণার শেষের দিকে ফ্লোরিডায় কিউবান-আমেরিকান ভোট নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছিল ট্রাম্পকে। নিজেকে কাস্ত্রোর বিরোধী উল্লেখ করে ফ্লোরিডার কিউবান-আমেরিকানদের ভোট চেয়েছিলেন তিনি। সেসময় তার কণ্ঠে শোনা যায় হাভানায় নতুন করে চালু করা মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।

আবার মার্কিন নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি নির্বাচনগুলোতে তিনি বলেছিলেন কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা করাটা সমস্যা না, তবে যা কিছু করা হবে তা যেন সুস্পষ্ট চুক্তির মধ্য দিয়ে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ওবামা থেকে ট্রাম্পের অবস্থানের ভিন্নতা আবারও দেখা গেছে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর। কাস্ত্রোকে ‘অনন্য ব্যক্তিত্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন ওবামা। অন্যদিকে কাস্ত্রোকে ‘নৃশংস একনায়ক’ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।

এমন প্রেক্ষাপটে ফিদেল কাস্ত্রোবিহীন কিউবার সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র কেমন সম্পর্ক বজায় রাখবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কিউবানদের মধ্যে। তেমনই একজন ৩৬ বছর বয়সী কিউবান ইয়ানিসি লারা। হাভানার রাস্তায় ফুল বিক্রি করেন তিনি। ইয়ানিসি বলেন, ‘এল কমান্দান্তে’ (ফিদেল)মারা যাওয়ার পর পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে আমি খানিক আতঙ্কিত। ট্রাম্পের চিন্তা-ভাবনার ধরন আর কর্মকাণ্ডই সে দুশ্চিন্তার কারণ। যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার কাছাকাছি আনতে ওবামা যা কিছু করেছেন তিনি (ট্রাম্প) সব কিছু বন্ধ করে দিতে পারেন।’

ট্রাম্প-ফিদেল
কিউবার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য কংগ্রেসকে রাজি করাতে পারেননি ওবামা। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এ নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। দুই দেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর অনুমোদনের জন্য নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করেছেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর সোমবার হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পৌঁছানোর কথা।

তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন কিউবার সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে যে অগ্রগতি এসেছে তা চালিয়ে যাওয়া হবে কিনা তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কিউবার জনগণের স্বাধীনতা আর সমৃদ্ধি বাড়াতে তিনি যতটুকু সম্ভব সহায়তা করবেন। অবশ্য কী সহায়তা তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।
কাস্ত্রোকে ‘নৃশংস একনায়ক’ উল্লেখ করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কিউবা এখনও এক কর্তৃত্ববাদী দ্বীপ। আজ আমি প্রত্যাশা করছি, এই আতঙ্ক খুব বেশিদিন থাকবে না, আর তা কিউবানদের এমন এক ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করবে, যা তাদের একান্ত প্রাপ্য।’

ফিদেল কাস্ত্রো
হাভানার ট্যাক্সি চালক পাবলো ফার্নান্দেজ মার্টিনেজ আক্ষেপ করে রয়টার্সকে বলেন, ‘ওবামার একেবারেই বিপরীত ট্রাম্প।’

নৌ গবেষণাবিষয়ক অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী পেদ্রো মাচাদো ট্রাম্পের নীতিমালা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রজন্মের জন্য ফিদেলের বিপ্লব সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে। শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে, দরিদ্ররা সহায়তা পেয়েছেন। জীবন যে একেবারে পুষ্পশয্যার মতো হয়ে গিয়েছিল তা নয়, কিন্তু ফিদেল আমাদের সহায়তা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যের মতো আচরণ করেছে আর ট্রাম্প তারই প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি যা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে সামনের দিনগুলো ভালো যাবে না।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প সহজেই কিউবাবিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষপ নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারেন। তিনি নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার নন হয়তো, কিন্তু এর জন্য তার অন্তর্বর্তী দলের সদস্য মরিশিও ক্লাভার-কারনের সহায়তা পেতে পারেন ট্রাম্প। কঠোর অর্থনেতিক অবরোধ চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মরিশিওকে নেতৃত্বস্থানীয় পরামর্শদাতা বলা যেতে পারে।

/এফইউ/

সম্পর্কিত
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন