X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছর আগে কিউবা থেকে আসা একটি পোস্ট কার্ড: টুঙ্কু ভারাদারাজন

বিদেশ ডেস্ক
২৯ নভেম্বর ২০১৬, ২২:০৭আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ২২:০৭

বদলে যাচ্ছে কিউবা? ১৯৯০ দশকের শুরুতে কিউবা ভ্রমণের কিছু ব্যক্তিগত ঘটনা এখানে তুলে ধরছি। ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা হয়ত একেবারে সঠিক নেই এবং ২০ বছর আগের স্মৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করেছি। ফলে ঘটনাগুলোর বিস্তারিত নিয়ে আমার নিজেরই কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। তবে আমি যা দেখেছি তা ব্যাপক অর্থে তা সত্যিকার ঘটনা।

১. ভারাদেরোতে আমরা যে রিসোর্টে ছিলাম সেখানে স্থানীয়দের সৈকত ব্যবহার নিষিদ্ধ। তারা ছিলো স্থানীয় কিশোরী মেয়ে, যারা পুরুষ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলো। তাদের দূরে রাখার জন্য প্রহরী রাখা হয়েছে। আমাদের নাস্তায় খাবারের পরিমাণ ছিলো বিস্ময়করভাবে বেশি। যেসব খাবার থেকে যেতো তা রিসোর্টের কর্মীরা বাসায় নিয়ে যেতেন।

আমি পরে জেনেছিলাম, এটাকে তারা নিজেদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেয়। (স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে পারা এবং প্রথম দেখায় আমাকে বিদেশি মনে না হওয়াতে অনেক মানুষই আমার সঙ্গে কথা বলেন। তবে কথোপকথন ছিলো সাধারণ অভ্যাসগত ও ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে।)

২. কিউবা থেকে মাদ্রিদে নির্বাসিত এক কিউবান আমাকে অল্প কিছু অর্থ দিয়েছিলেন হাভানায় তার এক আত্মীয়কে দেওয়ার জন্য। যতদূর মনে পড়ে পরিমাণটা হবে মাত্র ২০০ ডলার। আমি যখন বয়স্ক ওই নারীর হাতে অর্থটা তুলে দেই তখন তিনি কৃতজ্ঞতায় ৫ মিনিট আমার হাত ধরে ছিলেন। তিনি বাস করেন একটি ছোট্ট কামরায়। একটি বড় কামরায় পার্টিশন দিয়ে তা আলাদা করা হয়েছে। নিশ্চিতভাবে এক সময় তা অনেক বড় ছিলো।

নিউ ইয়র্কে এই ধরনের কামরাকে বসবাসের অনুপোযুক্ত বিবেচনা করা হতো। তিনি আমাকে জানান, সাহিত্যে তিনি পিএইচডি করেছেন। এখন তিনি মাসে মাত্র ২০ ডলারে জীবনযাপন করছেন। বেঁচে থাকতে হচ্ছে বন্ধুদের ওপর নির্ভর করে।

৩. মাদ্রিদ থেকে আমি যে ফ্লাইটে কিউবা গিয়েছিলাম তা ছিলো স্পেনের অবিবাহিত পুরুষে ভর্তি। সবাই কিউবা যাচ্ছিলেন শারীরিক যৌন চাহিদা মেটাতে। অনেকেই জানিয়েছেন তারা কিশোরী মেয়ে খুঁজছেন। তারা একটি পতিতালয়ে গিয়ে কিশোরীদের বাছাই করবেন ‘বিশেষ সময়ে’। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভর্তুকি কমে যাওয়ার পর সৃষ্ট সংকটকে কিউবা সরকারিভাবে ‘বিশেষ সময়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এখানে কিশোরী মেয়েদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য দিতে হয় ৫-১০ ডলার।

অনেক মেয়েই এটা করতো শুধু গরম খাবারের জন্য। বিমানযাত্রায় সঙ্গে ছিলেন আমার তখনকার এক বান্ধবী। এক মেয়েকে নিয়ে আমি কিউবা যাচ্ছি শুনে এক স্পেনিয়ার্ড আমাকে বুকে খোঁচা দিয়ে বলেন ‘ইডিয়ট’। আমার মনে পড়ে ওই সময় যৌন-পর্যটনে স্প্যানিশ এয়ারলাইন ইবেরিয়ার ভূমিকা নিয়ে রূড় চিন্তা-ভাবনা করছিলাম।

৪. আমার মনে পড়ে ভদ্রোচিত শহর কাডেনাসে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি হেঁটেছিলাম। পর্যটকদের চলাচলের রাস্তায় লোকাল বাস থেমে গেলে এক ঘণ্টার বেশি হেঁটেও এক কাপ কফির জন্য দোকান কিংবা চুল কাটার জন্য সেলুন খুঁজে পাইনি। আমরা একটি ‘সুপারমার্কেট’ পেয়েছিলাম যার একটি সেলফে মোজা এবং আরেকটিতে ছিলো দিয়াশলাই।

৫. কাকতালীয়ভাবে আমি যেদিন কিউবা অবতরণ করি সেদিন হাভানা বন্দরে ভারতের দেওয়া গমবাহী জাহাজ নোঙর ফেলে। আমি যেখানেই গেছি সেখানে ভারতীয় বলে লোকজন আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। করমর্দন করে আমাকে বলেছেন, ‘গমের জন্য ধন্যবাদ’।

হাভানা রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের একটি গানের অনুষ্ঠানে গায়ক আমাকে ইঙ্গিত করে গানের একটি লাইনও বদলে গেয়েছিলেন। বদলে দেওয়ার গানের লাইনটি দাঁড়ায় এমন, ‘ধন্যবাদ তোমাকে, বন্ধু আমার, যে গম তোমরা আমাদের দিয়েছো’। আমাদের ওয়েটার গায়ককে জানিয়েছিলেন, রেস্টুরেন্টে একজন ভারতীয় আছে।

৬. সবখানেই... সবখানেই ছিলো মিষ্টি-সুন্দর একটি সংগীত। আমি নিশ্চিত হই যে, এই সংগীতের জন্যই স্থানীয়রা তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ ভুলে যেতে পেরেছিলো। সংগীত ছাড়া কোনওভাবেই কিউবা কমিউনিস্ট রোমানিয়ার চেয়ে ভালো কিছু ছিল না।

টুঙ্কু ভারাদারাজন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউশনের সাংবাদিকতায় ভার্জিনিয়া হবস কার্পেন্টার ফেলো। এই লেখাটি তার ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

/এএ/

সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!