কথা ছিল বুধবার রাতে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে কলম্বিয়ার মাঠে মুখোমুখি হবেন দুই ফুটবল দল শাপেকোয়েন্স ও ন্যাসিওনালের খেলোয়াড়রা। কোপা সুদামেরিকানা ফাইনালের প্রথম লেগ জেতার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। অথচ খেলার একদিন আগে বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো ব্রাজিলের শাপেকোয়েন্স ক্লাবের প্রায় সকল খেলোয়াড়ের প্রাণ। বুধবার তাই যেসময়ে খেলা হওয়ার কথা ছিল সেসময়ে মাঠে দেখা গেল অন্য এক পরিস্থিতি। মাঠে দর্শক-ভক্তদের উপস্থিতি ছিল, ছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের উপস্থিতিও। কেবল খেলা হলো না। কলম্বিয়া আর ব্রাজিলের স্টেডিয়ামে একযোগে চললো প্রার্থনা। শাপেকোয়েন্স দলের সদস্যরাসহ বিমান দুর্ঘটনায় যে ৭১ আরোহী নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে চললো শ্রদ্ধা নিবেদন।
ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শাপেকোয়েনসকে ২০১৬ সালের সুদামেরিকানার চ্যাম্পিয়ন করার জন্য মহাদেশীয় শীর্ষ ফুটবল সংস্থা কনমেবল এর কাছে আগেই দাবি করেছিল ন্যাসিওনাল। খেলার পূর্বনির্ধারিত সময়ে মাঠে নেমে শ্রদ্ধা নিবেদনেরও ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। সেই মোতাবেক বুধবার তারা মাঠে নেমে আসেন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়াম দর্শকে ভরপুর হয়ে ওঠে। এক ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন ৪৬ হাজার মানুষ। তাদের কারও কারও হাতে ছিল ফুল। ঠিক যেসময় খেলা শুরুর কথা ছিল তখন এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তখন কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে সাদা পোশাক পরে স্টেডিয়ামে আসা ৪১ বছর বয়সী লিদিয়া আলজাতে বলেন, ‘আমরা একটি অসাধারণ ম্যাচ দেখার আশা করেছিলাম। ন্যাসিওনালের মতো তারা অতটা বড় দল নয় ঠিকই কিন্তু তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল। আজকের রাত তাই শাপেকোয়েন্স ভক্তদের।’
কেবল কলম্বিয়ায় নয়, প্রায় তিন হাজার মাইল দূরে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের স্টেডিয়ামও শাপেকোয়েন্স ভক্তদের ভীড়ে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় রাতের মতো তারা সেখানে প্রার্থনা করেছেন।
ফ্রান্সিস ফ্যাবিও নামে শাপেকোয়েন্সর এক ভক্ত অশ্রুমাখা চোখে বলেন, ‘এ স্টেডিয়াম এখন অনেক আবেগ আচ্ছন্ন। মনে হচ্ছে এটা খেলার রাত।’
কলম্বিয়ার স্টেডিয়ামে শাপেকোয়েন্সের ভক্তরা যখন গান গেয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন তখন তা ব্রাজিলের স্টেডিয়ামে বড় স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল। আর তাতে ব্রাজিলের স্টেডিয়ামের দর্শকরাও সামিল হন।
একযোগে তারা গাইতে থাকেন, ‘গোটা ল্যাটিন আমেরিকা তাদের কথা জানুক। আমরা সবসময় চ্যাম্পিয়ন শাপেকোয়েন্সকে মনে রাখব।’
অবশ্য ন্যাসিওনাল কর্তৃপক্ষ শাপেকোয়েন্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার দাবি করলেও ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের পরিচালকরা বলেছেন এ সম্মাননা ভাগাভাগি করে নেওয়ার পক্ষপাতী তারা।
উল্লেখ্য,সোমবার (২৭ নভেম্বর) শাপেকোয়েন্স দলের ফুটবলাররাসহ ৭৭ আরোহীকে নিয়ে বিমানটি কলম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। ব্রাজিল থেকে যাত্রা করার পর বলিভিয়ায় যাত্রা বিরতি করেছিল বিএই ১৪৬ বিমানটি। এরপর বলিভিয়া থেকে কলম্বিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরুর পর স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে লা ইউনিয়নের কেরো গোর্দো শহরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার শিকার বিমানটি পরিচালনা করতো ভেনেজুয়েলা’র বিমান সংস্থা লামিয়া। বিমানটি ৭৭ আরোহী নিয়ে কলম্বিয়ার জোসে মারিয়া কর্ডোভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ৭১ আরোহীই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কলম্বিয়ার পুলিশ। তবে ওই বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আরোহীদের সংখ্যা ৫ জন না ৬ জন তা নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। শেষ পর্যন্ত কলম্বিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়,বেঁচে যাওয়া আরোহীর সংখ্যা ৬। বিমানটিতে ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব চাপেকোয়েন্সের ২২ সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকিরা সবাই নিহত হয়েছেন। সূত্র: রয়টার্স
/এফইউ/