ব্রাজিলের শাপেকোয়েন্স ফুটবল দলসহ ৮১ আরোহীকে নিয়ে কলম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি জ্বালানি সংকটে পড়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসার পর ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। নিহত ফুটবলার ও অন্য বিমান আরোহীদের জন্য শোক জানানোর পাশাপাশি জ্বালানিজনিত অবহেলার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাতে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে কলম্বিয়ার মাঠে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল শাপাকোয়েন্স ও ন্যাসিওনালের খেলোয়াড়দের। কোপা সুদামেরিকানা ফাইনালের প্রথম লেগ জেতার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। অথচ খেলার একদিন আগে বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো ব্রাজিলের শাপেকোয়েন্স ক্লাবের প্রায় সকল খেলোয়াড়ের প্রাণ। বুধবার তাই যেসময়ে খেলা হওয়ার কথা ছিল সেসময়ে মাঠে দেখা গেল অন্য এক পরিস্থিতি। মাঠে দর্শক-ভক্তদের উপস্থিতি ছিল, ছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের উপস্থিতিও। কেবল খেলা হলো না। কলম্বিয়া আর ব্রাজিলের স্টেডিয়ামে একযোগে চললো প্রার্থনা। শাপেকোয়েন্স দলের সদস্যরাসহ বিমান দুর্ঘটনায় যে ৭১ আরোহী নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে চললো শ্রদ্ধা নিবেদন। কিন্তু এদিন রাতেই ব্রাজিলের ‘ও গ্লোবো’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে ভক্তদের শোক পরিণত হয় ক্ষোভে।
গ্লোবোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, কলম্বিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে বিমানটির ট্যাংকে কোনও জ্বালানি ছিল না এবং এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ও গ্লোবোতে আরও বলা হয়, সাও পাওলো থেকে যাত্রা করা বিমানটির বলিভিয়ার কবিজায় জ্বলানি নেওয়ার কথা থাকলেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল, কারণ রাতে বিমানবন্দরটিতে কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
শাপেকোয়েন্সের তরুণ নারী দলের সদস্য নাতালি ফেরান্তি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘এটি এমন এক ভুল যা জীবন শেষ করে দিয়েছে, শাপেকোয়েন্সকে শেষ করে দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লাইটের শেষের কয়েক মিনিটের কথোপকথনের একটি রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে। সেখানে শেষ মিনিটগুলোতে পাইলটের সঙ্গে বিমান নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের যে আলাপ হয়েছে তাতে অস্থিরতা দেখা গেছে। পাইলট বার বার জ্বলানি নেই বলে অবতরণের অনুমতি চাইছিলেন। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একজন বলছিলেন যান্ত্রিক গোলযোগ থাকায় অন্য একটি বিমানও ফেরত আসছে, সেটিকে অবতরণে প্রাধান্য দিতে হবে। শাপেকোয়েন্স দলকে বহনকারী সেই বিমানের পাইলটকে সাত মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়। সেসময় পাইলট বিমানটি নিয়ে যখন ঘুরছিলেন তখন তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি বলে ওঠেন-‘জ্বালানি ছাড়া, পুরোপুরি বৈদ্যুতিক গোলযোগ। এরপর চার মিনিট ঘোরার পর অবশেষে পার্বত্য এলাকায় বিমানটি আছড়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৭ নভেম্বর) শাপেকোয়েন্স দলের ফুটবলাররাসহ ৭৭ জন আরোহীকে নিয়ে বিমানটি কলম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। ব্রাজিল থেকে যাত্রা করার পর বলিভিয়ায় যাত্রা বিরতি করেছিল বিএই ১৪৬ বিমানটি। এরপর বলিভিয়া থেকে কলম্বিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরুর পর স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে লা ইউনিয়নের কেরো গোর্দো শহরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ৭১ আরোহীই নিহত হন এবং ৬ আরোহী প্রাণে বেঁচে যান। বিমানটিতে ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব শাপেকোয়েন্সের ২২ সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকিরা সবাই নিহত হন। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে শাপেকোয়েন্সের ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। আর তার মধ্যে বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাতে ব্রাজিলের ‘ও গ্লোবো’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে ভক্তদের শোক পরিণত হয় ক্ষোভে। গ্লোবোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, কলম্বিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে বিমানটির ট্যাংকে কোনও জ্বালানি ছিল না এবং এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ও গ্লোবোতে আরও বলা হয়, সাও পাওলো থেকে যাত্রা করা বিমানটির বলিভিয়ার কবিজায় জ্বলানি নেওয়ার কথা থাকলেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল, কারণ রাতে বিমানবন্দরটিতে কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শাপেকোয়েনসকে ২০১৬ সালের সুদামেরিকানার চ্যাম্পিয়ন করার জন্য মহাদেশীয় শীর্ষ ফুটবল সংস্থা কনমেবল এর কাছে আগেই দাবি করেছিল ন্যাসিওনাল। খেলার পূর্বনির্ধারিত সময়ে মাঠে নেমে শ্রদ্ধা নিবেদনেরও ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। সেই মোতাবেক বুধবার তারা মাঠে নেমে আসেন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়াম দর্শকে ভরপুর হয়ে ওঠে। এক ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন ৪৬ হাজার মানুষ। তাদের কারও কারও হাতে ছিল ফুল। ঠিক যেসময় খেলা শুরুর কথা ছিল তখন এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তখন কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
/এফইউ/