X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার সেনা কর্মসূচি নিয়ে যুদ্ধংদেহী মমতা

কলকাতা ও দিল্লি প্রতিনিধি
০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৫৮আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:০৫

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিল নিয়ে ইতোমধ্যেই নরেন্দ্র মোদির সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় স্তরে একটি ফ্রন্ট গড়ার লক্ষ্যে রাজ্যে রাজ্যে জনসভা করছেন। এবার সেনাবাহিনীর একটি কর্মসূচিকে ঘিরে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ ও জরুরি অবস্থার মতো আবহ তৈরি করার অভিযোগ তুলে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু করলেন মমতা।

সেনাবাহিনী অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একে নাটক বা ড্রামাবাজি বলে অভিহিত করা হয়েছে।

শুক্রবার এই নিয়ে রাজ্যপালের কাছে বিহিত চেয়ে, রাজভবনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ধরনায় বসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বড় নেতারা। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এখন দিল্লিতে। এ দিনই তার কলকাতায় ফেরার কথা। ফিরে আসার পর সন্ধ্যায় তিনি রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন‌, এমনটাই রাজভবন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।   

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বুধবার গভীর রাত থেকে রাজ্যের কয়েকটি টোল প্লাজায় গাড়ি থামিয়ে সেনা জওয়ানেরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। কিছু জায়গায় সেনাবাহিনী জবরদস্তি টাকা তুলছে বা তোলা আদায় করছে । এর ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, তারা ভীত ও সন্ত্রস্ত। মমতার অভিযোগ, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ সম্পর্কে তার প্রশাসন ও পুলিশকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।

নজিরবিহী‌নভাবে মমতা বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’-তে থেকে যান। গোটা বিষয়টিকে একেবারে সে‌না অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করে তিনি জানান, ‘রাজ্যের জেলাগুলোর ৮০ শতাংশে সেনা নেমেছে এবং যতক্ষণ না সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি নবান্ন ছেড়ে নড়বেন না। তার আগে নবান্নের অদূরে বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজাতেও সেনা জওয়ানদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, হুগলি জেলার ডানকুনি, বর্ধমান জেলার পালসিট ও মুর্শিদাবাদের সুতি ও নবগ্রামের টোল প্লাজাতেও গাড়ির পর গাড়ি থামিয়ে সেনা জওয়ানেরা তল্লাশি করছেন।

কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহি‌নীর তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এটা  রুটিন বার্ষিক এক কর্মসূচি, যাতে নিরস্ত্র জওয়ানেরাই সামিল হয়েছে। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং পরিবহন দফতরকে জানিয়ে ও রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করেই সবটা চলছে।

শুক্রবার সংসদে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনী তাদের একটি রুটিন কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করছে এবং রাজনৈতিক হতাশাজনিত কারণে এটা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ‘গত ১৫-২০ বছর ধরে সেনাবাহিনী এমন কর্মসূচি পালন করে চলেছে। গত বছর ১৯ ও ২১ নভেম্বর এটা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে এই কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করে। এই বছর পশ্চিমবঙ্গের আগে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে সেনাবাহিনী‌ একই কাজ করেছে। রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছিল। ’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ দিন সংসদে আরও জানান, ‘আদতে পশ্চিমবঙ্গে ওই কাজ সেনাবাহিনীর করার কথা ছিল ২৮, ২৯ ও ৩০ নভেম্বর। কিন্তু রাজ্যের পক্ষে জানানো হয়, ২৮ তারিখ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে ওই দিন করা যাবে না এবং পুলিশ ১ ও ২ তারিখ করতে বলে।’ এমনকি, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সেনাবাহিনী ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যৌথভাবে এই কর্মসূচিতে সামিল হয় বলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান।

সেনাদের তরফে জানানো হয়েছে, যে কর্মসূচি নিয়ে এত হইচই, সেটা আসলে একটি সমীক্ষা। কখনও যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে, সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় রসদ, খাবার, পানীয় জল তাদের বিভিন্ন ছাউনিতে পৌঁছে দিতে প্রচুর গাড়ির প্রয়োজন। একটি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সেনারা কত গাড়ি নিতে পারছেন, সমীক্ষার মাধ্যমে তারই হিসেবনিকেশ চলছে।

তবে কোথাও যে একটা যোগাযোগের অভাব ছিল, সেটা এ দিন সেনাবাহিনীর বেঙ্গল এরিয়ার ভারপ্রাপ্ত জিওসি, মেজর জেনারেল সুনীল যাদবের সাংবাদিক সম্মেলনেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির সময়কাল ২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর বলে জানিয়েছেন, সেখানে ভারপ্রাপ্ত জিওসি বলছেন, ‘‘এ বছর আমরা ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ তবে সুনীল যাদব দাবি করেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তোলাবাজি করার অভিযোগ মিথ্যা।’’

রাজ্য প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, আসলে গোটা বিষয়টির মূলে আছে ইগো বা ব্যক্তিত্বের লড়াই সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে। গত ২৪ নভেম্বর কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে গোটা কর্মসূচির কথা জানিয়ে সে‌নাবাহিনীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ২৫ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ চিঠির জবাবে জানায়, নবান্নের কাছে বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজাকে ওই কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ রাখতে হবে, নিরাপত্তার কারণে। পুলিশের পরিভাষায়, নবান্ন ‘হাই সিকিওরিটি জোন’। কিন্তু সেনাদের বক্তব্য, ইস্টার্ন কমান্ডের কাছেই নবান্ন তথা বিদ্যাসাগর সেতু এবং সেহেতু ওই এলাকাটিকে কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। ২৬ নভেম্বর এই মর্মে সেনাবাহিনী চিঠিও দেয় কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু সম্মতিসূচক বা আপত্তি জানিয়ে চিঠি- কোনওটাই পুলিশ আর সেনাবাহিনীকে পাঠায়নি। আবার কর্মসূচি চলার সময়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সেনা, পুলিশ দু’পক্ষ যৌথভাবে ২৭ নভেম্বর রেইকি করে। সেই সময়ে আপত্তিগুলোর জায়গা নিয়ে কথা হয়নি। সেনারা সম্ভবত ভেবেছিল, ২৬ নভেম্বর তাদের দেওয়া চিঠির উত্তর না আসার অর্থ পুলিশ তাদের যুক্তি মেনে নিয়েছে। আবার লালবাজার ধরে নেয়, তারা সম্মতিসূচক চিঠি দেয়নি, কাজেই নবান্নের কাছে সেনারা নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে না।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা যখন রাজ্যের বিষয়, তখন কলকাতা পুলিশের লিখিত সম্মতি না পাওয়া সত্ত্বেও ওটা করা হলো কেন? এক সেনা অফিসার বলেন, ‘‘এটা সামান্য ব্যাপার। কর্মসূচিতে সামিল প্রতিটি দলে পাঁচ-দশ জন নিরস্ত্র জওয়ান আছেন। আর এটার সঙ্গে সেনা অভ্যুত্থানের তুলনা করা হলো! এই জল যে এতদূর গড়াবে কে জানত? আমরাতো কতবার টেলিফোনে কথা বলে ও মৌখিক সম্মতি নিয়ে এই কাজ করেছি।’’

তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছে, বিষয়টি যা-ই হোক, মমতা একে হাতিয়ার করতে চাইছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, বিজেপির মধ্যে মমতা যাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সেই অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহেরাও তৃণমূল নেত্রীর এই পদক্ষেপ নিয়ে বিরক্ত।

এপিএইচ/ 

আরও পড়ুন: 
বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি: দুর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃত এখনও নিশ্চিত নয়

  

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা