X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা গ্রামে এখন শুধুই পোড়ামাটি

বিদেশ ডেস্ক
০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৩১আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৩৫

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের দুটি গ্রামে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর তাণ্ডবের আগের ও পরের চিত্র। ছবি: এইচআরডব্লিউ। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। সরকারি হিসাবে দেশটিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে নিহত হয়েছেন ৮৬ জন। আর বেসরকারি হিসাবে নিহতের এ সংখ্যা অন্তত ৪০০। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখেও এ বিষয়ে নমনীয় হতে নারাজ শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের একটি চিত্র তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দুটি গ্রামে সরকারি সেনাদের তাণ্ডবের আগের ও পরের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। আগে যেখানে ছিল জনবসতি; এখন সেখানে শুধুই পোড়ামাটি।

রাখাইন রাজ্যের এ গ্রাম দুটি হচ্ছে কিয়েত ইয়ো পিন (বামে) এবং ওয়া পিক (ডানে)। কিয়েত ইয়ো পিন গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ। দ্বিতীয় ছবিটি মিয়ানমারের সেনাদের তাণ্ডবের পর গত ১০ নভেম্বর তোলা। ওয়া পিক গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ গ্রামের দ্বিতীয় ছবিটি তোলা হয় চলতি বছরের ১০ নভেম্বর। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, গ্রাম দুটি পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলছেন, সেখানে নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের হত্যা করা হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে সরকারি সেনারা। তবে এমন বর্বর নৃশংসতার পরও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন মিয়ানমারের ‘শান্তির দূত’ অং সান সু চি। দেশটির রোহিঙ্গা সম্প্রদায় কিংবা সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রশ্নে তার অবস্থান কারও অজানা নেই এখন। এমনকি ভোটের রাজনীতিতে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের সমর্থন পেতে গত নির্বাচনে কোনও মুসলিমকে প্রার্থীও করেননি তিনি। হাজার বছর ধরে আরাকানে (বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য) বসবাসরত ‘রোহিঙ্গা’ জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ও মানতে রাজি নন সু চি। রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহারেই ঘোর আপত্তি তার। সরকারি নির্দেশনা জারি করে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করে সু চি’র নেতৃত্বাধীন দলের সরকার।

সু চির অবস্থান অনুযায়ী, রোহিঙ্গা বলে যেন কিছু নেই, থাকতে পারে না। অং সান সু চি’র ভাষায়, ‘আমরা এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করতে চাই না যা আগুনে জ্বালানি সরবরাহ করে। আমি কোনও নির্দিষ্ট শব্দের কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি সেই সব শব্দের ব্যবহারের কথা বলছি যেগুলো রাখাইনসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিভেদ সৃষ্টি করে।’

জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী

অব্যাহত জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে জীবন বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের লাখো রোহিঙ্গার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশ সীমান্তে। মাথায় একটাই চিন্তা; কিভাবে নরককুণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা যায়? সেই নরক থেকে বেরিয়ে আসা একজন ১৯ বছরের রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ তৌহিদ। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি রাখাইন থেকে বাংলাদেশের টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে আসেন।

মোহাম্মদ তৌহিদ ফোনে বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানান, ‘তারা (সেনাবাহিনী) আমার চোখের সামনে আমার বোনকে গুলি করে হত্যা করেছে। হামলা চালানোর সময় আমি গোবরের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। রাত গভীর হওয়ার পর আমি সেখান থেকে সীমান্তে পালিয়ে আসি। আমি আমার মা-কে বাড়িতে একা ফেলে এসেছি। তিনি বেঁচে আছেন কিনা, আমি তাও জানি না।’ তিনি জানান, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের শতশত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, ধর্ষণসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাখাইন রাজ্য সরকারের নির্বাহী সচিব টিন মং সুয়ে রাষ্ট্রীয় রেডিওতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। আর এই মুসলিমরা তার অংশ নয়। তোমরা বিদেশিরা কি মনে করো, আমরা তার পরোয়া করি না। আমাদেরকে অবশ্যই নিজভূমি রক্ষা করতে হবে। এরপরে আসবে মানবতার কথা।’ জাতিসংঘ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের বিশ্বের ‘সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী’ বলে ঘোষণা করেছে। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

/এমপি/

সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!