X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন কেরি

বিদেশ ডেস্ক
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:১৪আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:১৪

জন কেরি ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি কঠোর ভাষায় ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছেন। কেরি বলেছেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছে ইসরায়েলের ডানপন্থীরা।  একই সঙ্গে ইসরায়েলের  বসতি স্থাপনের ফলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বাধাগ্রস্ত হবে বলেও কেরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ ধরনের কঠোর ভাষায় আক্রমণ সচরাচর ঘটে না। ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলের পক্ষেই সব সময় সোচ্চার ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের বার বার আলোচনা ও শান্তিচুক্তি করার আহ্বান করে আসছে। কেরির এই মন্তব্য তাই অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করছেন অনেকে।

শীর্ষ ইসরায়েলি ও মার্কিন নীতি নির্ধারকদের বার্ষিক বৈঠক সাবান ফোরামে দেওয়া ভাষণে কেরি জানান,  ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রী বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন। কেরি বলেন, ইসরায়েল সরকারের অর্ধেকেরও বেশি মন্ত্রী প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে অস্বীকার করছেন।

কেরির বক্তব্যের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন শান্তিবিরোধী নয়।

বক্তব্যে নেতানিয়াহু জানান, কোনও শর্ত ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি ইসরায়েল। এছাড়া আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানান।

তবে অপর আরব দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন কেরি। তার দাবি,  ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ছাড়া কোনও আরব রাষ্ট্রই ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করবে না। কেরি বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রক্রিয়া ও শান্তিচুক্তি ছাড়া আরব দেশগুলোর সঙ্গে কোনও পৃথক শান্তিচুক্তি হবে না।

কেরি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করে, ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নির্দিষ্টভাবেই শান্তির জন্য বাধা। কেরি বলেন, আমি এখানে বলতে চাই যে বসতি স্থাপনই সংঘর্ষের মূল কারণ। আসলেই তা নয়। কিন্তু আমি এটা মানতে রাজি নই যে, এ পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন। কেন আমি জানি তা এবং বলতে চাই যে, ইসরায়েলের বামপন্থীরা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে এটা শান্তির পক্ষে নয় এবং ডানপন্থীরা বসতি স্থাপনকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে কারণ তারা শান্তি চায় না।

ভাষণে কেরি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের আর নেই। বলেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘে আনীত সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সম্প্রতি ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহযোগিতা চুক্তিও ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষর  করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভূখণ্ড হারিয়ে এক অরক্ষিত জনপদে পরিণত হয় দেশটি। স্বাধীন ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল নামক অবৈধ রাষ্ট্র চাপিয়ে দেওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে এ অঞ্চলে। একাধিক যুদ্ধেরও শিকার হয়েছেন এই ভূখণ্ডের মানুষ। ১৯৬৭ সালের ৪ জুন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই উপত্যকার অংশবিশেষ দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরইমধ্যে পার হয়েছে সেই দখলদারিত্বের ৪৯ বছর। এতো বছর পর এখনও প্রায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষ। ইসরায়েলি আগ্রাসন আর বর্বরতার শিকার হচ্ছেন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা।

১৯৭৮ সালে অবশ্য এক শান্তি চুক্তির আওতায় সিনাই উপত্যকার দখল ছেড়ে দেয় ইসরায়েল। ২০০৫ সালে একতরফাভাবে গাজা উপত্যকার ওপর থেকেও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। কিন্তু পুরো ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলি বর্বরতার অবসান ঘটেনি। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হলে প্রতিবেশী চার আরব দেশ মিসর, সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাক একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। বিজয়ী ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ৭৭ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয়।

১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার মধ্যে যে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়, তার ভিত্তিতে ১৯৯৬ সালে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন কায়েম হয়। তত দিনে অবশ্য সেই অঞ্চলের একটা বড় অংশ ইসরায়েলের অবৈধ বসতির কবলে অথবা সরাসরি সামরিক নিয়ন্ত্রণে। নামেই স্বায়ত্তশাসন কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে চৌপ্রহর ইসরায়েলি প্রহরা, উঁচু দেয়াল, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলে ইসরায়েলি অনুমতি। কিন্তু সেই প্রশাসনও দুই টুকরা হয়ে গেল ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর। পশ্চিম তীর গেল ফাতাহর নিয়ন্ত্রণে, গাজা গেল ইসলামিক ব্রাদারহুডের মিত্র হিসেবে পরিচিত হামাসের।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেওয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে। মূলত এই সময়টিই প্যালেস্টাইনকে আরব শূন্য করার জন্য ভালোভাবে কাজে লাগায় ইহুদি বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি। এরপর দ্রুতই বহিরাগত ইহুদির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪০ হাজার। এ সময়ই ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ হয়। এতে ৩৩টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে, ১৩টি রাষ্ট্র বিরুদ্ধে এবং ১০টি ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেল ভূমির ৫৭ শতাংশ। আর ফিলিস্তিনিরা পান ৪৩ শতাংশ। তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর-পশ্চিম সীমানা ছিল অনির্ধারিত; যাতে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়াতে পারে। ফলে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হলেও উপেক্ষিত থেকে যায় ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের মাধ্যমে পাস হয়ে যায় একটি অবৈধ ও অযৌক্তিক প্রস্তাব। প্রহসনের নাটকে জিতে গিয়ে ইহুদিরা হয়ে ওঠে আরও হিংস্র। তারা হত্যা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজ ভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে থাকে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোর করে জমি দখল, নারী নির্যাতন আর খুনের উৎসব। ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাধ্য জন দেশত্যাগ করতে। এর এক পর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২টা ১ মিনিটে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করে ইহুদিরা। ১০ মিনিটের ভেতর ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।  সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, ব্রুনেই টাইমস।

/এএ/

সম্পর্কিত
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
সর্বশেষ খবর
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি